জার্মানি থেকে প্রথম বিদেশি করোনা টিকা যাচ্ছে চীনে
জার্মানির বায়োএনটেকের কভিড-১৯ টিকার একটি চালান চীনে পাঠানোর কথা জানিয়েছে বার্লিন। প্রথমবারের মতো বিদেশে তৈরি করোনা টিকা চীনে যাচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র টিকার প্রথম চালানটি পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। তবে ঠিক কবে ওই চালান পাঠানো হয়েছে এবং সেখানে কী পরিমাণ টিকা আছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
বিজ্ঞাপন
জার্মান সরকারের ওই মুখপাত্র বলেছেন, চীনে বসবাস করা অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও যদি বায়োএনটেকের টিকা নিতে চান, তবে বার্লিন তাদেরও টিকা দেবে।
গত মাসে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন। সফরে তার সঙ্গী হয়েছিলেন বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর শাহিন। তারা সেখানে চীনকে তাদের কভিড টিকা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদের প্রস্তাব পাওয়ার পর চীন সরকার সে দেশে বসবাসরত জার্মান নাগরিকদের জন্য বায়োএনটেকের টিকা নিতে রাজি হয়।
এর অংশ হিসেবেই টিকার প্রথম চালানটি গেছে। চীনে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার জার্মান নাগরিক বসবাস করছেন। শুধু নিজেদের নাগরিকদের জন্য নয়, বরং জার্মান সরকার চীনের নাগরিকদের জন্যও বিনা মূল্যে টিকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
বার্লিনের মুখপাত্র বলেছেন, আমি নিশ্চিত করে বলছি, বায়োএনটেকের টিকার একটি চালান চীনের পথে রওনা হয়েছে। জার্মানদের পাশাপাশি সে দেশে থাকা অন্য বিদেশি নাগরিকদের বায়োএনটেকের টিকা প্রদান সম্ভব করতেও আমরা কাজ করছি।
রয়টার্স জানিয়েছে, এ মাসের শুরুতে জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সে দেশে চীনের তৈরি কভিড টিকা সিনোভ্যাক আমদানি করার অনুমতি দেয়। যাতে জার্মানিতে বসবাস করা চীনা নাগরিকরা ওই টিকা নিতে পারেন। তারপরই চীনে বায়োএনটেকের টিকা পাঠানোর অনুমতি দেয় বেইজিং।
চীন সরকার এখন পর্যন্ত সে দেশে শুধু তাদের তৈরি কভিড-১৯ টিকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। যেগুলো পশ্চিমাদের এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি নয়।
কভিড টিকার উন্নত ভার্সন ‘এমআরএনএ’ প্রযুক্তি। বর্তমানে বিশ্বে করোনাভাইরাসের যে ধরনগুলো বিস্তার লাভ করছে সেগুলোর সবই ওমিক্রন ধরনের উপধরন।
এমআরএনএ টিকা বিশেষ করে ওমিক্রন ধরনকে লক্ষ করেই প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, চীনের তৈরি কভিড টিকার তুলনায় সেটি অনেক বেশি কার্যকর হবে।
রোগী বাড়ছে চীনের হাসপাতালে
চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঢেউ আঘাত করার বিষয়ে উদ্বেগের মধ্যেই দেশটির হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ছে বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)।
ডাব্লিউএইচওর ইমার্জেন্সি প্রধান ডা. মাইকেল রায়ান বলেছেন, চীনের হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রোগীর ভিড় বাড়লেও সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন- রোগীর সংখ্যা ‘অপেক্ষাকৃত কম। ‘
চীনের দেওয়া তথ্যানুসারে বুধবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনও মারা যায়নি। তবে চীনের দেওয়া এই তথ্য নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে চীনের রাজধানী বেইজিং এবং অন্যান্য শহরের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চরম আধিক্য লক্ষ করা গেছে।
২০২০ সাল থেকে চীনে শূন্য করোনা নীতি অনুসরণ করে বিধি-নিষেধের ব্যাপারে চরম কড়াকড়ি ছিল। তবে দেশটিতে তীব্র বিক্ষোভের মুখে দুই সপ্তাহ আগে থেকে সেসব বিধি-নিষেধের বেশির ভাগই তুলে নেওয়া হয়।
বিধি-নিষেধ উঠে যাওয়ার পর হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে দুর্বল ও বয়স্কদের মধ্যে উচ্চ মৃত্যুর হারের আশঙ্কাও বেড়েছে।
এদিকে চীনের সরকারি হিসাবে গত মঙ্গলবার পাঁচজন ও তার আগের দিন সোমবার নিউমোনিয়ায় দুজন মারা গেছে। এই সাতজন করোনায় মারা গেছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।
ডা. রায়ান চীনকে করোনাভাইরাসের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছেন।