আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যাচ্ছে না বিএনপি
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেও যাচ্ছে না বিএনপি। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যকে আমন্ত্রণ জানায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে নামছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। আজ শনিবার ঢাকা বাদে সারা দেশে গণমিছিল করবে দলটি।
বিজ্ঞাপন
এর মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শনিবার (আজ) সারা দেশে বিএনপি গণমিছিল করবে এবং এতে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নিতে ঢাকার বাইরে থাকবেন। তা জেনেও সম্মেলনের আগের দিন দুপুরে হঠাৎ আমন্ত্রণ জানানো নিয়ম রক্ষা ছাড়া কিছু নয়। আমাদের মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা কারাগারে আছেন। তাঁদের মুক্তিও দেওয়া হচ্ছে না। এই অবস্থায় এই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ’
শুক্রবার দুপুরে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের কাছে তিনটি আমন্ত্রণ কার্ড পৌঁছে দেন।
আমন্ত্রণ পাওয়া তিন নেতা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান।
আমন্ত্রণ জানানোর পর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের নেতা সায়েম খান সাংবাদিকদের বলেন, সব রাজনৈতিক দলকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় বিএনপির তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হলো।
গণমিছিল আজ
এর আগে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে সরকার পতনে ১০ দফা ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এসব দফা ও কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানায় বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটের সব শরিক ও সমমনা দল। জামায়াতে ইসলামীও বিএনপির এই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দেয়।
গণমিছিলের কর্মসূচির দিন ঢাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। তাই ঢাকার কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়েছে।
এদিকে সারা দেশে গণমিছিল কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। কেন্দ্রীয় নেতাদের মহানগর ও জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সার্বিক সমন্বয় করবেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। উপস্থিত থাকবেন সংশ্লিষ্ট মহানগর ও জেলা কেন্দ্রীয় নেতারা। চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলার গণমিছিলে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, রাজশাহী মহানগর ও জেলার দায়িত্বে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, খুলনা মহানগর ও জেলার দায়িত্বে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, কুমিল্লা মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার দায়িত্বে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বরিশাল মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে।
এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে ময়মনসিংহ মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা এবং গাজীপুর মহানগর ও জেলার দায়িত্বে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। রংপুর মহানগর ও জেলার দায়িত্বে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, সিলেট মহানগর ও জেলার ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, কিশোরগঞ্জে ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু।
‘কারাবন্দি নেতারা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না’ : দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অসুস্থ জ্যেষ্ঠ নেতারা কারাগারে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এই অভিযোগ করেন।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, রুহুল কবীর রিজভী, আবদুস সালামসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। এ জন্য দেশে-বিদেশে চিকিৎসাও নিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘গায়েবি মামলায় বয়োজ্যেষ্ঠ এই নেতারা কারাগারে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে তাঁদের স্বজনরা আমাদের জানিয়েছেন। ’ তাঁর অভিযোগ, হাজারো নেতাকর্মীকে বন্দি করায় বর্তমানে কারাগারে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী অনেক নেতা ডিভিশন পাওয়ার অধিকারী হলেও অনেককে এখনো ডিভিশন দেওয়া হয়নি। কারাবন্দি নেতাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্স বলেন, ‘কারাবিধি অনুযায়ী দিনের বেলা লকআপ খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ২৪ ঘণ্টা তাঁদের লকআপের ভেতরে রাখা হচ্ছে এবং লকআপের ভেতরেও তাঁদের মানসিক নির্যাতনের মধ্যে রাখা হচ্ছে বলে স্বজনদের মাধ্যমে আমরা শুনতে পাচ্ছি। ’
গাজীপুরে গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া স্থানীয় নেতা আলী আজম খানকে ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরিয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নেওয়ার ঘটনাকে সংবিধান ও মানবাধিকারপরিপন্থী উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানান তিনি।