বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Monday, December 23, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » আর্ন্তজাতিক » পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পতন কি আসন্ন?

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পতন কি আসন্ন? 

1675443271_3

গত সপ্তাহে পাকিস্তানের জাতীয় গ্রিডের পতনের পর দেশটির লাখ লাখ মানুষ বর্তমানে সুদীর্ঘ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মুখোমুখি। দেশটির বিদ্যুত সরবাহে এই ব্যর্থতা এর ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতিকে তুলে ধরেছে, যা অনেক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, পতনের দ্বারপ্রান্তে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কেন্দ্র করাচি সহ বিভিন্ন গূরুত্বপূর্ণ স্থানে গ্যাস স্টেশনগুলির বাইরে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে, সর্বত্র জ্বালানীর ঘাটতি চরমে পৌছেছে, এবং যেটুকু গ্যাস উপলব্দ করা সম্ভব হচ্ছে, তা এতই ব্যয়বহুল যে পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

পাকিস্তান এই মুহ‚র্তে অন্যান্য সব ধরনের ঘাটতির সম্মুখীন। বাসস্থানগুলিতে খাবার রান্না করার জন্য বা ছোট কারখানা চালানোর জন্য গ্যাস নেই, এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট এত ঘন ঘন হচ্ছে যে, এটি অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। গেল ২৬শে জানুয়ারী পাকিস্তানি রুপির মান মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৯.৬ শতাংশ কমেছে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় একদিনের পতন। দেশটিতে ডলারের সঙ্কট এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী বহনকারী শত শত বিদেশী কন্টেইনার কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্দরে আটকে আছে। কারণ কর্তৃপক্ষের কাছে মূল্যপরিশোধের অর্থ নেই। ঋণ খেলাপি হওয়া এড়াতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সরকার এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)কে ঋণ নবায়নে রাজি করানোর মতো কঠিন সমস্যার মুখোমুখি। পাকিস্তানের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সালমান শাহ বলেছেন, ‘আইএমএফের ঋণ মূল্য পরিশোধের ভারসাম্য উন্নত করতে সহায়তা করবে। একই সময়ে, পরিস্থিতিটি মুদ্রাস্ফীতির একটি ঝড় বয়ে আনবে, যা ৪০ থেকে ৫০শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী লোকেরা, যারা জনসংখ্যার প্রায় ৩০ থেকে ৪০শতাংশ, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

পাকিস্তানের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী দেশটির অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যেরও একটি বিষণœ চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ব্যবসা করার খরচ অনেক বেশি হবে। এটি রফতানিকারকদের জন্য কম ক্ষতিকর হতে পারে কারণ তারা ডলারে অর্থ পাবেন, তবে এটি স্থানীয় উৎপাদক, শিল্পের কাঁচামাল এবং খাদ্য পণ্যগুলিকে খারাপভাবে প্রভাবিত করবে’। তারপরেও এটি খেলাপি হওয়ার থেকে শ্রেয়তর মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‹একটি খেলাপি ঋণ সব শেষ করে দেবে। যদিও পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে মিল রয়েছে, তবে পাকিস্তান শুধুমাত্র তখনই শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কটের পথে ধাবিত হবে, যখন আইএমএফের টাকা না পাবে।’

পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন একটি অস্তিত্ব-হুমকির সম্মুখীন, কিন্তু সঙ্কট মোকাবেলায় মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটির রাজনীতিবিদরা দেশটিকে কে শাসন করবে, তা নিয়ে টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়েছেন। গত বছর এপ্রিলে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে পাকিস্তান গভীর রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সঙ্কট অবলোকন করছে। পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর ইমরান যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানের শাসন পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রকারী বলে অভিযুক্ত করেছেন এবং দেশটির বর্তমান সরকার এবং শক্তিশালী সামরিক জেনারেলদের বিরুদ্ধে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন।
পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ ইমরান খান দেশটির রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের জন্য আগাম নির্বাচনের দাবি করছেন, তবে অনেক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, পাকিস্তানকে আগে তার অর্থনীতি মেরামত করতে হবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিয়া রেহমান বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বড় বিপর্যস্ত, এবং আমাদের অর্থ ফুরিয়ে গেছে। সাধারণ নির্বাচন করা একটি ব্যয়বহুল ব্যাপার এবং আমি মনে করি পাকিস্তান এখনই তা বহন করতে পারবে না। এগিয়ে যাওয়ার আদর্শ পথ হল রাজনীতিবিদ এবং সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা সহ সকল নীতি নির্ধারকদের একসাথে বসে একটি জাতীয় ঐকমত্য সরকার নিয়ে একমত হওয়া, যার প্রধান কাজ হওয়া উচিত হবে অর্থনীতিকে মেরামত করা।’

এদিকে, পাকিস্তানের নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সংগঠনের একটি বিচ্ছিন্ন দল দ্বারা পেশোয়ারের একটি মসজিদে সাম্প্রতিক আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণটি প্রমান করেছে যে, দেশটির অর্থনৈতিক সঙ্কট এই অঞ্চলের জন্য একটি বিশাল নিরাপত্তা ঝুঁকিও বটে। রেহমান বলেন, ‘নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য পাকিস্তানের কাছে তহবিল নেই। এটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে।’ পাকিস্তানের ভ‚-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আফগানিস্তান, চীন, ভারত ও ইরানের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা এবং অগণিত চরমপন্থী গোষ্ঠীর উপস্থিতি এই অঞ্চলের জন্য অনেক বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে।

পাকিস্তানের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘এটি এমন একটি ঝুঁকি, যা এই অঞ্চলের কেউ বহন করতে পারবে না’। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটির অর্থনৈতিক পতনের ঝুঁকি উপলব্ধি করে আবারও এটিকে উদ্ধার করতে আসতে পারে, কিন্তু তাতে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্কট লাঘব হবে না। এই ধরনের কোনো সহায়তা পাকিস্তানের কাঠামোগত সমস্যার কেবলমাত্র সাময়িক সমাধান হিসেবে প্রমাণিত হবে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone