বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Monday, December 23, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » আর্ন্তজাতিক » ‘স্টেট অব দি ইউনিয়ন ভাষণে’ যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন বাইডেন

‘স্টেট অব দি ইউনিয়ন ভাষণে’ যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন বাইডেন 

1675926509_500-321-Inqilab-white

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন মঙ্গলবার রাতে পার্লামেন্ট অর্থাৎ কংগ্রেসের দুই কক্ষের সামনে যে ভাষণ দিয়েছেন তার বিষয়বস্তুর সাথে সাথে ভাষণের প্রেক্ষাপটও ছিল সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ভাষণ এমন একসময় তিনি দিলেন যখন আগামী নির্বাচনে আরেক দফা প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছেন। তার এই বাৎসরিক ভাষণ ছিল পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্দেশ্যে, কিন্তু তার বার্তার মূল লক্ষ্য ছিল আমেরিকার জনগণ।

বাইডেনের ভাষণের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

১. আমেরিকাই এক নম্বর অগ্রাধিকার, বৈদেশিক নীতি শেষের বিবেচনা

আমেরিকার আকাশসীমায় চীনা একটি পর্যবেক্ষণ বেলুন ছিল গত সপ্তাহান্ত জুড়ে আমেরিকার বিশাল বড় একটি খবর। কিন্তু তার ভাষণে প্রেসিডেন্ট বিষয়টিকে তেমন গুরুত্বই দেননি। ভাষণের একদম শেষদিকে খুব সামান্যই প্রসঙ্গটি তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহে পরিষ্কার করে দিয়েছি যে চীন যদি আমাদের সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ফেলে, আমরা আমাদের দেশকে রক্ষা করবো,’ তিনি বলেন, ‘এবং আমরা তা করেছি।’ চীনা বেলুন নিয়ে ছিল শুধু এই একটি বাক্য।

আমেরিকার বৈদেশিক নীতির জন্য গত বছর খানেক ধরে আরেকটি বড় ইস্যু ছিল ইউক্রেনে রুশ সামরিক হামলা। কিন্তু এ নিয়েও বাইডেন খুবই কম কথা বলেছেন। বাইডেন গ্যালারিতে বসা ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতকে সম্ভাষণ জানান। ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য মিত্র দেশগুলাকে অভিনন্দন জানান। কিন্তু এই ভাষণের সুযোগে তিনি ইউক্রেনের জন্য নতুন কোনও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেননি।

তুরস্ক এবং সিরিয়ায় সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি বাইডেন। বদলে, তার ভাষণের প্রধান বিষয় ছিল অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় যা নিয়ে আমেরিকার জনগণ চিন্তিত। কথিত রয়েছে, আমেরিকান জনগণ বৈদেশিক নীতি নিয়ে তখনই মাথা ঘামায় যখন মার্কিন সৈন্যরা বিদেশের মাটিতে প্রাণ হারাতে শুরু করে। মনে হয়, বাইডেন এই ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিয়েছেন।

২. অর্থনীতির জন্য নেয়া “সব কাজ শেষ করা হবে”

সমস্ত জনমত জরিপে দেখা যায় অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিই মার্কিন জনগণের কাছে এক নম্বর অগ্রাধিকার। সিংহভাগ মানুষ এখন মনে করছে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। পরিস্থিতি ভালো হতে শুরু করলেও মানুষ এখনও তা টের পাচ্ছেনা। বাইডেন বার বার চেষ্টা করেছেন মানুষকে বোঝাতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কারণ মানুষকে সেটা বোঝাতে পারলেই আগামী নির্বাচনে তার পুনঃনির্বাচনের সম্ভাবনা বাড়বে।

তিনি রেকর্ড মাত্রায় বেকারত্ব কমার কথা বলেছেন। তিনি বলেন মুদ্রাস্ফীতি এবং জ্বালানির চড়া মূল্য – যে দুটি বিষয় গত ১৮ মাস ধরে তার রেটিং কমিয়ে দিয়েছে – নামতে শুরু করেছে। এবং সেইসাথে তিনি বলেন বিভিন্ন নতুন আইন এবং বিধি এনে তিনি আমেরিকার শিল্প উৎপাদন খাতকে চাঙ্গা করেছেন । তিনি বলেন, “এখন সময় এসেছে হাতে নেওয়া সমস্ত কাজ শেষ করার।“

৩. রিপাবলিকানদের সাথে ভালো আচরণের চেষ্টা

কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক আবহে সত্যিই যদি প্রেসিডেন্ট তার অর্থনৈতিক কর্মসূচিগুলো শেষ করতে চান, তাহলে রিপাবলিকান পার্টির সাহায্য তার প্রয়োজন হবে। বাইডেনের ভাষণের সময় পেছনে ছিলেন কংগ্রেসের নিম্ন-কক্ষ অর্থাৎ প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি। বাইডেনের “কাজ সম্পন্ন” করার মিশনে রিপাবলিকানরা সহযোগী হবে কিনা তা ধারণা করার বড় একটি ব্যারোমিটার হবেন ম্যাকার্থি।

বাইডেন যখন তার প্রথম দু বছরে “দুই দলের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক” এবং তার সুফল নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন, স্পিকার ম্যাকার্থিকে মৃদু হাততালি দিতে দেখা যায়। এমনকি মাঝেমধ্যে তার হাসিমুখও চোখে পড়ে। প্রেসিডেন্ট অবকাঠামো নির্মাণে এবং মাইক্রোচিপ উৎপাদনের বিনিয়োগের প্রশ্নে বা ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য নিয়ে অথবা সমকামী বিবাহে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে দুই দলের মধ্যে সহযোগিতার কথা তোলেন।

৪. লড়াইতে পিছপা হননি বাইডেন

তার ভাষণে বাইডেন সরকারী ঋণের সীমা বাড়ানোর কথা তোলার সাথে সাথেই পরিস্থিতি তেঁতে ওঠে। এ ইস্যুতে প্রেসিডেন্টের সাথে কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টি টানা-হেঁচড়া চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে আপোষের বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত দেননি। বরঞ্চ প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানদের খোঁচা দিতে পিছপা হননি। রিপাবলিকানদের দাবি যে সরকারি ঋণের সাথে সরকারি ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। সে প্রসঙ্গ তুলে মি. বাইডেন বলেন তার পূর্বসূরি (ডোনাল্ড ট্রাম্প) সরকারি ঋণের বোঝা যেভাবে বাড়িয়েছেন তা অতীতে আর কোনও প্রেসিডেন্ট করেননি। সাথে সাথে রিপাবলিকান সদস্যরা হৈচৈ করে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে ছাড়েননি। পেছনের দিকে বসা রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য মেজরি টেইলর গ্রিন চিৎকার করে ওঠেন প্রেসিডেন্ট একজন “মিথ্যাবাদী।“

৫. আমন্ত্রিত অতিথিরা কিছু আবেগি মুহূর্তের জন্ম দেন

প্রতি বছরের স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণের মত এবারও প্রেসিডেন্ট বাইডেন নতুন কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন যেগুলোর অধিকাংশই আইনে রূপ নেবে সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। তার দুটি ছিল – পুলিশের সংস্কার এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আইন। এই দুই প্রস্তাবের সমর্থকরাও ছিলেন অতিথি হিসাবে গ্যালারিতে বসা। ছিলেন সম্প্রতি পুলিশের হাতে নিহত টায়ার নিকোলসের বাবা-মা, এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় মনিটরি পার্কে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনার একজন ‘হিরো’ যিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone