যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়, ইউক্রেনে লক্ষ্য পূরণ হবে না : রাশিয়া
কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো। তবে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। মস্কো বলেছে, এ মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। এখন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলে ইউক্রেনে যে লক্ষ্য নিয়ে ‘বিশেষ সেনা অভিযান’ শুরু হয়েছিল, তা পূরণ হবে না। শুক্রবার বেলারুশের আইনপ্রণেতা ও নাগরিকদের উদ্দেশে টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে লুকাশেঙ্কো এ প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, আরো বাড়াবাড়ি হওয়ার আগে আমাদের থামা উচিত। আমি এ শত্রুতা শেষের পরামর্শ দিচ্ছি, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হোক।
তবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া। এ বিষয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এ মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। এখন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলে ইউক্রেনে যে লক্ষ্য নিয়ে ‘বিশেষ সেনা অভিযান’ শুরু হয়েছিল, তা পূরণ হবে না। এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও বেলারুশ প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো বৈঠক করবেন।
১৯৯৪ সাল থেকে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন লুকাশেঙ্কো। এ দীর্ঘ সময় লুকাশেঙ্কো প্রেসিডেন্ট পদে থাকার অন্যতম কারণ রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বেলারুশের মাটি ব্যবহার করেই ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু করেছিল রাশিয়া। এরপরেও একাধিকবার বেলারুশকে ব্যবহার করেছে তারা। সেখানে রুশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ চালিয়েছে। অস্ত্র মজুত করেছে। তবে গত শুক্রবার লুকাশেঙ্কো হঠাৎ এ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন।
অন্যদিকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও বেলারুশ নিজ ভূখ-ে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে রাজি হয়েছে। বেলারুশের মাটিতে রাশিয়ার অস্ত্র রাখার বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল।
ইউক্রেন সঙ্কট নিরসনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুন -শি জিনপিং : চীনের নেতা শি জিনপিং গত শুক্রবার বেইজিংয়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সাথে বৈঠকে ইউক্রেনের সঙ্কট নিরসনে চরম নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি অনুসারে শি বলেছেন, ‘শীতল যুদ্ধের মানসিকতা এবং ব্লক স্ট্যান্ডঅফ বাদ দেয়া এবং চরম নিষেধাজ্ঞা প্রবর্তন এবং চাপ দেয়ার নীতি পরিত্যাগ করা প্রয়োজন’।
চীনা নেতা যোগ করেছেন, ‘আমরা আশা করি যে, আগ্রহী দলগুলো সংলাপ এবং পরামর্শের মাধ্যমে ইউরোপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ, কার্যকর এবং স্থিতিশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে’।
তার মতে, চীন শুরু থেকেই ইউক্রেন সঙ্কটের বিষয়ে একটি ধারাবাহিক ও স্পষ্ট অবস্থান মেনে চলছে, আলোচনা প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক নিষ্পত্তির সুবিধার্থে তাগিদ দিয়ে আসছে।
রাশিয়ার সম্মতি ছাড়া ইউক্রেনে মোতায়েন ‘শান্তিরক্ষী’দের অবশ্যই বাদ দিতে হবে -মেদভেদেভ : রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ শুক্রবার বলেছেন যে, তথাকথিত শান্তিরক্ষী, যাদের ন্যাটো পৃষ্ঠপোষকতায় ইউক্রেনে মোতায়েন নিয়ে বর্তমানে ইউরোপে আলোচনা হচ্ছে, তাদের কেউ যদি রাশিয়ার অনুমোদন ছাড়া সামনের সারিতে উপস্থিত হয় তবে তাদের নির্মূল করা হবে।
মেদভেদেভ তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, এসব ‘শান্তিরক্ষী’ আমাদের বিচ্ছিন্ন শত্রু, ভেড়ার পোশাকের নেকড়ে। তারা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি বৈধ লক্ষ্য হবে যদি তারা রাশিয়ার সম্মতি ব্যতীত, অস্ত্র হাতে নিয়ে এবং সরাসরি আমাদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে সামনের সারিতে মোতায়েন করা হয়।’
মেদভেদেভের মতে, এসব ‘শান্তিরক্ষীদের’ নির্দয়ভাবে ধ্বংস করতে হবে, কারণ তারা ‘শত্রু সৈনিক’। রাশিয়ান নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান আত্মবিশ্বাসের সাথে ঘোষণা করেছেন, ‘তারা যুদ্ধে মারা যাবে’।
তিনি অকপটে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ইউরোপ কি ‘শান্তিরক্ষীদের’ কফিনের দীর্ঘ লাইনের জন্য প্রস্তুত’?
রাশিয়ান নিরাপত্তা পরিষদের উপ-প্রধান বলেছেন, ‘তাদের আসল উদ্দেশ্য (ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলো) স্ফটিক স্পষ্ট – একটি শান্তি আরোপ করা যা যোগাযোগের লাইনে শক্তির অবস্থান থেকে তাদের পক্ষে হবে এবং ইউক্রেনে ‘শান্তিরক্ষীদের’ অবস্থান করবে, যারা অ্যাসল্ট রাইফেল দিয়ে সজ্জিত হবে এবং ট্যাঙ্কে চড়া’।
মেদভেদেভ উল্লেখ করেছেন যে, এ ধরনের কর্মের সম্ভাব্য ফলাফল ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত অপারেশনের ইতিহাসে দেখা যায়, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, যুগোসøাভিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান এবং আফ্রিকান দেশগুলোর অনেক ট্র্যাজেডি’।
‘এটা স্পষ্ট যে, তথাকথিত ন্যাটো শান্তিরক্ষীরা কেবলমাত্র আমাদের শত্রুদের পক্ষে সঙ্ঘাতে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন যাতে এর থেকে খড়খড়ি তৈরি করা যায়, পরিস্থিতিকে ফিরিয়ে আনা না যায় এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করা যায়। তারা খুব ভয় পায় বলে দাবি করে’।
যুক্তরাষ্ট্রে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের স্বল্প মজুদ রয়েছে -পেন্টাগন : মার্কিন জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি ডিফেন্স ওয়ান মিডিয়া আউটলেটের সাথে একটি অনলাইন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের একটি স্বল্প মজুত রয়েছে, যা ইউক্রেনের কাছে তাদের হস্তান্তরের সম্ভাবনাকে সীমিত করে।
ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে এটিএসিএমএস (আর্মি ট্যাকটিকাল মিসাইল সিস্টেম) ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত স্ট্রাইক রেঞ্জের ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছে, কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মিলি উত্তর দেন, ‘আচ্ছা, এখন পর্যন্ত না করার জন্য একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে এবং আমি টেবিলে, টেবিলের বাইরে, ভবিষ্যতের জন্য কখনই কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করব না।
‘কিন্তু একটি সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে, আমাদের তুলনামূলকভাবে কম এটিএসিএমএস আছে, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, আমরা আমাদের নিজস্ব যুদ্ধাস্ত্রের ইনভেন্টরিগুলোও বজায় রাখি’ তিনি আরো বলেন। ‘এবং অস্ত্রের পরিসর – আমি মনে করি একটি এটিএসিএমএস কী করতে পারে এবং কী করতে পারে না তা নিয়ে কিছুটা বাড়াবাড়ি আছে’। ইউক্রেন বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে বলেছিল, কিন্তু প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
প্রয়োজনে পুতিনকে রক্ষায় মস্কোতে সৈন্য পাঠাবে উগান্ডা -প্রেসিডেন্টের পুত্র : উগান্ডার নেতা ইওওয়েরি মুসেভেনির ছেলে মুহুজি কাইনেরুগাবা বলেছেন, তিনি ‘সাম্রাজ্যবাদী’ হুমকির ক্ষেত্রে মস্কোকে রক্ষা করতে উগান্ডার সেনা পাঠাবেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘আপনি চাইলে আমাকে ‘পুটিনিস্ট’ বলুন, আমাদের উগান্ডাকে মস্কোকে রক্ষার জন্য সৈন্য পাঠাতে হবে যদি কখনো সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা হুমকি হয়’।
ভøাদিমির পুতিনের কট্টর সমর্থক প্রেসিডেন্টের ছেলে যোগ করেছেন, ‘পশ্চিম ইউক্রেনীয়পন্থি অকার্যকর প্রচারে সময় নষ্ট করছে’। বৃহস্পতিবার তিনি তার ব্র্যান্ড ‘এমকে’সহ একটি টেলিভিশন এবং রেডিও চ্যানেল তৈরির ঘোষণাও দেন।
উগান্ডা ইউক্রেন সঙ্ঘাতের ওপর জাতিসংঘের ভোট থেকে বিরত রয়েছে, যার মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের প্রথম বার্ষিকীতে একটি ভোট ছিল, যা মস্কোকে দেশ থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিল।
জুলাই মাসে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের আফ্রিকা সফরের সময়, কাইনেরুগাবা রাশিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘আমরা কীভাবে এমন একজনের বিরুদ্ধে হতে পারি যে আমাদের কখনও আঘাত করেনি’?
রাশিয়ার ঐতিহ্যগতভাবে আফ্রিকার সাথে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে, কারণ এই মহাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থন ছিল যা তখন ঔপনিবেশিক শক্তির সাথে লড়াই করছিল। পর্যবেক্ষকরা দীর্ঘকাল ধরে মুহুজি কাইনেরুগাবাকে তার পিতা ইওওয়েরি মুসেভেনির (৭৮)-এর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করেছেন।