নির্বাচনে জাতিসংঘের সহযোগিতার প্রয়োজন নেই
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতিসংঘের সহযোগিতা নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তবে নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়ে সরকারের কোনো আপত্তি নেই বলে জানান তিনি। গতকাল সোমবার জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ড. মোমেন বলেন, নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। যদিও অনেক উন্নত দেশ এগুলো নেয় না। কিন্তু আমাদের এটা নিতে কোনো আপত্তি নেই। আমরা তাদের (পর্যবেক্ষকদের) স্বাগত জানাই। তারা এসে দেখুক, আমাদের দেশে কত সুন্দর, স্বচ্ছ, আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচন হয়। ওদের দেশে এত আনন্দময় পরিবেশে নির্বাচন হয় না।
বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশে নির্বাচন দেখে শিখতে পারে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা দেখে শিখুক। বাংলাদেশে কত সুন্দর নির্বাচন হয় শিখে নিজেরা তা প্রয়োগ করুক।
সংসদ নির্বাচনে জাতিসংঘের কোনো সহযোগিতা বাংলাদেশ নেবে কি না, প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকরা। জবাবে ড. মোমেন সাফ জানিয়ে দেন, নির্বাচনে সংস্থাটির কোনো সহযোগিতা চায় না বাংলাদেশ। তিনি বলেন, জাতিসংঘের কোনো সহযোগিতা আমাদের নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা যথেষ্ট পরিপক্ব। নির্বাচন করার জন্য যেসব ইনস্টিটিউশন দরকার, সুন্দর, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সেই ইনস্টিটিউশন আমরা মোটামুটি তৈরি করেছি। তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি করেছি। বায়োমেট্রিক ভোটার তালিকা, যাতে কোনো ধরনের ফ্রড (ভুয়া) ভোট না হয়। আমরা একটা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছি। তারা যথেষ্ট সক্ষমতা রাখে। সেজন্য আমাদের অন্যদের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন নেই।
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে প্রথম আলোর সাংবাদিক গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গটি আসে। এ বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি, আমাদের তথ্য মতে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন; শিশুকে ব্যবহার করার কারণে। দ্বিতীয় ইস্যু হলো তিনি আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে তামাশা করেছেন। আমাদের চেতনার সবচেয়ে বড় ধন স্বাধীনতা। ওটাকে নিয়ে তামাশা করবেন, এটা কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ গ্রহণ করবে না।
অপরাধ করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পার পাওয়া যাবে না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকের নাম দিয়ে অপরাধ করবেন, এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতে পাবে। সাংবাদিক হলেও অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চাই, কিন্তু কেউ অপরাধ করে পার পাবেন না।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে গত শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বিবৃতিতে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে বলা হয়, জীবনযাত্রার মান নিয়ে প্রতিবেদনের জন্য নয়, প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ‘শিশুকে ব্যবহার’ করে প্রতারণামূলক সংবাদ করার দায়ে। মামলার এজাহারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়টি উল্লেখ করা আছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিবৃতিতে কোন সোর্স থেকে শিশু নির্যাতনের বিষয়টি যুক্ত করা হলো-জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, আমরা ছবি দেখেছি। আপনি ছবি দেখেছেন। শিশু নির্যাতনের জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
সম্প্রতি জার্মানভিত্তিক ডয়েচেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- র্যাবকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মোমেনের ভাষ্য, এটা হাসির খোরাক আরকি। তারা (র্যাব) রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার হচ্ছে না। তারা (র্যাব) নিরাপত্তার উদ্দেশে ব্যবহার হচ্ছে।
বৈঠকে রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন জোগাড় নিয়ে আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অর্থ কমছে-এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, যারা ওয়াদা করেছে, তাদের কাছ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থ সংগ্রহ করেন।
রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ প্রদানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিন থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে, এখনও করে যাচ্ছে। তাদের কোনো গাফিলতি নেই। কিন্তু অন্য অনেক দেশই আগে অনেক সাহায্য করেছে, এখন অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ গুরুত্ব হারাচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, মনোযোগ যেন থাকে আমরা বিভিন্নভাবে এ ইস্যুটা তুলে ধরেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্ররা এটার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
প্রত্যাবাসন নিয়ে আগের মতো আশার কথা শুনিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের ফোকাস প্রত্যাবাসন। আমি সবসময় আশাবাদী। মিয়ানমার সরকার বারবার ওয়াদা করেছে, তারা ওদের নিয়ে যাবে। সুতরাং আমি আশাবাদী। তবে কবে সেটা আমি জানি না।