পদ্মা সেতু হয়ে আজ রেল আসছে ঢাকায়
গতকাল সোমবার থেকে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক গ্যাংকার ট্রেন সার্ভিস শুরু হলো। নতুন দিগন্ত শুরু হওয়ায় বৃহত্তর ফরিদপুরবাসীসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষের খুব খুশি। পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা থেকে আজ এই প্রথম রেল যাচ্ছে ঢাকায়।
পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরুর পরে এবার ট্রেন চলাচলের জন্যও প্রস্তুত হচ্ছে দেশের দীর্ঘতম এ রপল সেতু। আজ সেতুর উপর দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের দিন ধার্য করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ভাঙ্গা থেকে একটি গ্যাংকার ট্রেন পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাওয়া স্টেশনে থামবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত পর্যন্ত রেলপথটির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। অন্যদিকে মাওয়া স্টেশন থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ পর্যন্তও রেলপথ প্রস্তুত। কেবল মূল সেতুর ৪১ মিটার অংশে রেলপথ বসানোর অংশটি ৩০ মার্চের মধ্যেই সম্পন্ন করছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
তবে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাংকার ট্রেনটি ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাওয়া পর্যন্ত আসবে। এ ট্রেনে ভ্রমণ করে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন নির্মিত রেলপথসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজ পরিদর্শন করবেন।
উল্লেখ্য, ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথটিতে কী পরিমাণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহন হতে পারে, তার একটি বিশ্লেষণ এরই মধ্যে তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি।
স্বল্পমেয়াদি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের উপর ভিত্তি করে প্রাক্কলনটি তৈরি করেছে সিআরইসি বলে সূত্রে জানা গেছে।
ভাঙ্গা থেকে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার বিষয় ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহম্মদ আজীম উদ্দীন ইনকিলাবকে বলেন, এই আনন্দ ফরিদপুরবাসীর একার নয়, ২১ জেলার সকলের। খুলে গেল আপার সম্ভাবনার অর্থনীতির উন্নয়নের দুয়ার সাধুবাদ জানাই প্রাধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে। যাদের পরিশ্রমের ফসল আজ দেশবাসীর কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বিশ্ব দরবারে।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেতা শামীম হক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা বলার ভাষা নেই আনন্দে আত্মাহারা হয়ে গেছি, আমর দলের সকল প্রশংসাই, আল্লাহর পর প্রধানমন্ত্রীর জন্য।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার এপিপি ইনকিলাবকে বলেন, নিশ্চয়ই ফরিদপুরবাসী অনেক ভাগ্যবান, পদ্মসেতুর সাথে বৃহত্তর পদ্মা রেল সেতু চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের অর্থনীতির নতুন দিগন্তরেখা তৈয়ার হলো। ভাগ্য খুলে গেল এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার। সচল হয়ে উঠলে কৃষকদের ভাগ্যের চাকা। কৃষকরা তাদের মাঠে ফলানো নানান কৃষিজাত দ্রব্য বিশেষ করে এই অঞ্চলের কাঁচামাল সরাসরি রাজধানী শহরে প্রতিদিন বিক্রি করে আবারো ঘরে ফিরতে পারবে কৃষকরা। আমি বিশ্বাস করি অল্প সময়েই কৃষকরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন। রেল সেতু চালু হওয়ায় ফরিদপুরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঅঞ্চলের সকল মানুষের উন্নয়নের দরজা খুলে গেল। তৈয়ারি হলো এক নতুন দিগন্ত।
ট্রেন চলার খবরে আনন্দিত মাদারীপুরের মানুষ
প্রথমবার মাদারীপুরের মাটিতে ট্রেন দেখতে পাওয়ার আনন্দে যেন তাদের আর তর সইছে না। পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন সেবা চালু হলে চলাচলের সুবিধাসহ এ এলাকার মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যও গতিশীলতা আসবে। স্বল্প খরচে রাজধানীতে পণ্য আনা নেয়া করতে পারবে ব্যবসায়ীরা। রেলসেবা চালু হওয়াতে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।