বাংলাদেশ-ফ্রান্স সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে পৌঁছেছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ-ফ্রান্স সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে পৌঁছেছে।গতকাল সোমবার বাংলাদেশে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতকালে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
বৈঠকের শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন এটি একটি উদ্দেশ্যমূলক ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিকে আরো প্রসারিত হয়েছে। তিনি বলেন, ফ্রান্স সব সময়ই বাংলাদেশের বিশ্বস্ত অংশীদার। আমাদের টেকসই উন্নয়নে অভিন্ন লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত একটি উদ্দেশ্যমূলক এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিকে সম্পর্ক আরো প্রসারিত হয়েছে।
করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত পথ অনুসরণ করে গত পাঁচ দশক ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতাসহ দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বৈঠকে ফরাসি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সঙ্গে বিশেষকরে বিমান চলাচলও মহাকাশ খাতে সহযোগিতা জোরদারে তার দেশের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, তারা সব সময় বাংলাদেশের সাথে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিয়েও কাজ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট নির্মাণে তার দেশের আগ্রহের কথাও ব্যক্ত করেন মেরি মাসদুপুই। বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। জলবায়ু প্রসঙ্গে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ জলবায়ু ইস্যুতে কাজ করছে এবং তারা বাংলাদেশের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে কারণ, তারা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর নির্মাণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বিমানবন্দরটিকে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে রিফুয়েলিং ও সংযোগের আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে রূপান্তরিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের নভেম্বরে তাঁর ফ্রান্স সফর এবং ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার কথা স্মরণ করেন। তিনি আগামী ২২-২৩ জুন প্যারিসে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু সম্মেলনে যোগদানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গণভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,বাংলাদেশ কিডনি প্রতিস্থাপনসহ জটিল সার্জারি পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করেছ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ দেশ এখন কিডনি প্রতিস্থাপনসহ অনেক জটিল অপারেশন করতে সক্ষম। বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলটি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে স্বাস্থ্যসেবা সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জনগনকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, কিডনি প্রতিস্থাপন রোগী শামীমা আক্তার ও শবনম সুলতানা এবং কিডনি দাতা সারা ইসলামের মা। এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি বিএসএমএমইউ হাসপাতালে অধ্যাপক ডাঃ হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল ক্লিনিক্যালি মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে সংগৃহীত কিডনি দুই রোগীর মধ্যে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন। এটি ছিল দেশে প্রথম ক্যাডেভারিক কিডনি প্রতিস্থাপন। তারা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা ২০ বছর বয়সী রোগী সারা ইসলামের কাছ থেকে কিডনি নিয়েছিল। ১৮ জানুয়ারি বিকেলে তাকে ক্লিনিক্যালি মৃত ঘোষণা করা হয়। সারার মা অপারেশনে সম্মতি দেয়ার পর কিডনি সংগ্রহ করা হয়। জীবিত দাতাদের কাছ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন বাংলাদেশে ১৯৮২ সালে শুরু হয়েছিল। কিন্তু মৃত রোগীর কিডনি নেয়া আইনত সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৮ সালে অঙ্গ দান আইনটি সংশোধিত হয়- যা সংশ্লিষ্ট আত্মীয়দের সম্মতিতে মৃতদের কাছ থেকে অঙ্গ সংগ্রহের অনুমতি দেয়া হয়।