বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » ঈদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই

ঈদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই 

35-20230404235921

দেশে বছরজুড়ে যে কাপড় বেচাকেনা হয়, তার অর্ধেক বেচাকেনা হয় পবিত্র রমজান মাসে। ঈদুল ফিরত উপলক্ষে ৯২ ভাগ মুসলমানের এই দেশে কাপড়ের কেনাবেচা হয়ে থাকে। সেই ঈদুল ফিতর আসতে বাকী আর মাত্র ১৮ দিন। হাজার হাজার ব্যবসায়ী ঈদের কাপড় বেচাকেনা নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। অনেকে লাখ লাখ টাকা ঋণ-ধার করে কাপড়ের দোকানে ও গোডাউনে তোলেন পাইকারি দরে বিক্রির জন্য। সেই স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল নিমিষেই। ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে দেশের অন্যতম বড় কাপড়ের মার্কেট ঢাকার বঙ্গবাজার। আগুনে বঙ্গবাজার মার্কেট ছাড়াও মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট, এনেক্সকো টাওয়ার ও গুলিস্তান মার্কেটে কয়েক ঘণ্টার আগুনে পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়ে গেছে। আশপাশের কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্তও হয়।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬ টা ১০ মিনিটে ওই মার্কেটে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর দু’টি দল বিকেল ৩ টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। জীবনবাজি রেখে আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের ১২ জন কর্মী আহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়াবহ এই অগ্নিকা-ের ঘটনাটি সার্বক্ষনিক তদারকি করেন। বঙ্গবাজারের আগুন পাশের মহানগর মার্কেট ছাড়িয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টার ব্যারাকে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যারাকের চারতলা ভবনে আগুন ছড়িয়ে আস্ত্রাগারেরও ক্ষতি হয়। ঈদকে সামনে রেখে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের থাকে বাড়তি তোড়জোড়। ঈদের মৌসুমের বেচাকেনা ব্যবসায়ীদের একবছরের জীবন-জীবিকা থেকে মূলধন গঠন সবকিছুর সাথেই ওতোপ্রোতভাবে জড়িত থাকে। ঈদের বেচাকেনার কেবল শুরু শুরু রব উঠলো, তখন এমন সময়ে আগুন লাগার ঘটনায় যেন মুখের ভাষাটুকুও হারিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। অগ্নিকা-ের কারণে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সেবা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পর গতকাল সন্ধ্যায় আবার চালু করা হয়।

আগুন লাগার পর হাইকোর্ট থেকে গুলিস্তান, নর্থ সাউথ রোডের দিক থেকেও বঙ্গবাজারের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, ফুলবাড়িয়া, নাজিরা বাজার, আনন্দবাজার সড়কেও যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এতে করে পুরো এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, বঙ্গ মার্কেটে ২৯০০ দোকানসহ প্রায় ৫ হাজার দোকান পুড়ে গেছে। এ সব দোকানে প্রায় তিন লাখ মানুষ কাজ করতেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তারা অনুরোধ জানান, ক্ষতি কাটাতে ও ব্যবসা করার জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করে দিন। আমরা সিটি কর্পোরেশননের বরাদ্দ পাওয়া মালিক। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।

এদিকে গতকাল রাত ৮ টায় ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলেন, বঙ্গবাজারের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। এতে পুরো আগুন নেভাতে আরো সময় লাগবে।
এদিকে এ রিপোার্ট লেখার আগ পর্যন্ত বঙ্গবাজার অগ্নিকা-ে এনেক্সকো টাওয়ারের ৫ম তলায় আগুন জ্বলছিল। ভবনটির পূর্ব দিকে আগুনের তীব্রতা চোখে পড়ার মতো। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটানো অব্যাহত রেখেছেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের খবর জানানো হয়েছে।বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে রাজধানীর অন্যতম জনপ্রিয় পোশাকের এই বাজারে প্রায় তিন হাজার দোকান ছিল। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দোকানদাররা লাখ লাখ টাকার মালামাল তুলে ছিলেন। সেখানে শাড়ি, শার্ট, প্যান্ট ও সালোয়ার কামিজসহ সব ধরনের পোশাক বিক্রি হয়।

১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গবাজার। পরে নতুন করে গড়ে তোলা হয় ওই মার্কেট। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন বঙ্গবাজার চারটি ইউনিটে বিভক্ত। বঙ্গবাজার কমপেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট মিলিয়ে মোট দোকানের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই সেখানে আগুন লেগে মার্কেটের গুলিস্তান ইউনিটের কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়।

অগ্নিকা-ের সূত্রপাত নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গোডাউন এলাকা থেকে মূলত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বঙ্গবাজারের কাঠ ও টিনের হওয়ায় তা দ্রুতবেগে ছড়ায়। প্রায় এক ঘণ্টা আগুন জ্বলার পর সকাল ৭ টার দিকে বঙ্গবাজারের একাংশ ধসে পড়ে। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। এরইমধ্যে মার্কেটের ভেতর থেকে বের করে আনা কাপড়ের স্তূপে আগুন লেগে নিউ সেক্রেটারি রোডের অপর পাশে থাকা বঙ্গ ইসলামীয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান, বঙ্গবাজারের পাশেই ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর বলে খবর পাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে সেখানে প্রথম ইউনিট পৌঁছায়। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ইউনিটের সংখ্যা। কিন্তু বাতাসের মধ্যে ঘিঞ্জি ওই মার্কেটের আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ওই অবস্থায় ঢাকায় ফায়ার সার্ভিসের অধিকাংশ ইউনিটকে সেখানে ডাকা হয়। বহু দূর থেকেও বঙ্গবাজারের আকাশে ধোঁয়ার কু-লী উঠতে দেখা যায়। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকেও আগুনের ওপর পানি ছিটানো হয়। বড় এলাকায় টিন ও কাঠ দিয়ে নির্মিত শত শত দোকান নিয়ে এই বঙ্গবাজার। ঈদ সামনে রেখে সব দোকানেই প্রচুর নতুন পণ্য তোলা হয়েছিল। কীভাবে সেখানে আগুন লাগল তা এখনও স্পষ্ট নয়। সকালে ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের কাউকে কাউকে মরিয়া হয়ে মালামাল সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। অনেকেই অসহায়ভাবে কাঁদছিলেন। একজন বলছিলেন কয়েক লাখ টাকার মাল তিনি দোকানে তুলেছিলেন ঈদ সামনে রেখে।

ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবাজারের প্রায় সব দোকানই পুড়ে ভস্ম হয়ে গেছে। আশেপাশের এলাকাজুড়ে এখন ধোঁয়া আর ব্যবসায়ীদের আর্তনাতের সুর। বঙ্গবাজার থেকে হাইকোর্টগামী সড়ক, আনন্দবাজার হয়ে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট আশেপাশের পুরো এলাকার ফুটপাতজুড়ে আছে ব্যবসায়ীদের শেষ সম্বল। আগুন লাগার পর থেকে কোনোভাবে যা পেরেছেন, বের করে এনেছেন ব্যবসায়ীরা। কারও তিনটা দোকান, কারও একটি; সবই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ ব্যবসায়ীই কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। খবর পেয়ে বাসা থেকে ছুটে এসে নিজের তিনটি শাড়ির দোকানের দু’টি থেকে অল্প কিছু মালামাল নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন আনোয়ারুল ইসলাম। বাকি একটি দোকানে প্রবেশই করতে পারেননি তিনি। সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের উল্টোপাশের ফুটপাতে শেষ সম্বলটুকু নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় আনোয়ারকে। তার আশেপাশের কয়েকজন লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনটি দোকানের সিংহভাগ মালামালই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

এদিকে, বঙ্গবাজারের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়ন করা হয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব। শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট সংলগ্ন মোড়ে বিজিবি-সেনাবাহিনীর কয়েকটি বড় গাড়ি অবস্থান করতে দেখা যায়। বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, বঙ্গবাজারে অগ্নিকা-ের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেখানে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, র‌্যাবের ঢাকার সব ব্যাটালিয়ন ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ১৮টি টহল দল, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে।

ব্যবসায়ী ইসমাইল বলেন, বঙ্গবাজারে আমাদের বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। আমার শ্বশুরের দোকান রয়েছে। আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা তাড়াতাড়ি বঙ্গবাজার চলে আসি। এসে পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে আমার শ্বশুরের হার্ট অ্যাটাক হয়। আমাদের বংশ পরম্পরায় ব্যবসা এই বঙ্গবাজারে। সবই পুড়ে শেষ।

বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী শফিক দেওয়ান ইনকিলাবকে বলেন, আমার ১৭ লাখ টাকার মালামাল ছিল, দু’টি দোকান ছিল। সবই এখন ছাই হয়ে গেছে। আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের পানির স্বল্পতাও আমরা দেখতে পেয়েছি। ব্যবসায়ী মাহিদ ইনকিলাবকে বলেন, আমার একটি দোকান ছিল। পাঁচ লাখ টাকার মালামাল ছিল দোকানে। আমার আত্মীয়-স্বজনের দোকান ছিল। সবার দোকান শেষ হয়ে গেছে। সবাই এখন নিঃস্ব। এই দোকান এই ব্যবসা আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস ছিল। এখন সবকিছুই শেষ।

মল্লিকা গার্মেন্টসের মালিক নূর আলম জানান, তার দু’টি দোকানে অর্ধ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নগদ আট লাখ টাকা ছিল ক্যাশ বাক্সে। গত ২২ বছর যাবৎ তিনি বঙ্গবাজারে ব্যবসা করছেন।

বঙ্গবাজারের জিন্সের ব্যবসা করেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, করোনার পর ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নে বিনিয়োগ করেছিলাম বড়। কিন্তু সব পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। লাখ লাখ টাকার মালামাল, দোকানে ক্যাশ টাকাসহ অনেক ক্ষতি। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সামনে বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির দফতর সম্পাদক বি এম হাবিব অভিযোগ করেন, জমি ফাঁকা করার জন্য অগ্নিসংযোগ বা নাশকতার ঘটনা হতে পারে এটা। দীর্ঘদিন একটি মহল অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। মার্কেটের ভেতরে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্যাস ছিল। কিন্তু সকাল বেলা হওয়ায় ব্যবহার করা যায়নি।

আদর্শ মার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত : বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত ওই এলাকার আদর্শ মার্কেট থেকে। পরে দ্রুতগতিতে পাশের মার্কেটগুলোর চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার বিকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের একটি সূত্র এ তথ্য জানায়।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোর ৬ টা ১০ মিনিটে ৯৯৯ থেকে তাদের কাছে কল যায়। তাদের জানানো হয় বঙ্গবাজারে আদর্শ মার্কেটে আগুন লেগেছে। পরে কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সূত্র আরও জানায়, প্রথমে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছালে মার্কেটে প্রবেশ করতে বাধা ছিল। মার্কেটের চারদিকে যে তালাগুলো লাগানো ছিল সেগুলো ভাঙতে অসুবিধা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের। কারণ তালাগুলো ভেতরে ছিল। আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যসহ মোট ১২ জন আহত হয়েছেন। তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

আগুনে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি -দোকান মালিক সমিতি : বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, এখানে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। টিনশেড মার্কেটের সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে রাজধানীর অন্যতম জনপ্রিয় পোশাকের এই বাজারে প্রায় ৫ হাজার দোকান ছিল। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দোকানদাররা অনেক টাকার মালামাল তুলে ছিলেন। সেখানে শাড়ি, শার্ট, প্যান্ট, সালোয়ার কামিজসহ সব ধরনের পোশাক বিক্রি হয়। হেলাল উদ্দিন বলেন, বিক্রেতারা ঈদ উপলক্ষে কয়েকশ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ৯ জন দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে তারা জানান, তারা দোকানগুলোতে ১ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন।

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম ফের চালু : বঙ্গবাজারে লাগা আগুন পুলিশ সদর দফতরের ব্যারাকে ছড়িয়ে পড়ার পর বন্ধ হয়ে যায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম। সন্ধ্যায় সেটি আবার চালু হয়। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পাঠানো এক ক্ষুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। সকাল ৬ টা ১০ মিনিটের দিকে বঙ্গবাজারের দোতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন পুলিশ সদর দফতরের ব্যারাকে ছড়িয়ে পড়ার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। যা গতকাল সন্ধ্যায় আবার চালু করা হয়।

আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার -আইএসপিআর : বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দল কাজ করছে। মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়।

বঙ্গবাজারে আগুন নিয়ে যা বললেন আইজিপি : বঙ্গবাজারসহ সংলগ্ন অন্তত ৫টি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে ছিল অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মঙ্গলবার আগুন নিয়ন্ত্রণের পর বেলা সোয়া তিনটার দিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

তিনি বলেন, আমরা ভোর বেলায় আগুনের খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছি। পৌনে সাতটার মধ্যে সকল সিনিয়র অফিসাররা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যোগ দেন। আমরা এসে মারাত্মক আগুন দেখি, ফায়ার সার্ভিস চারদিক থেকে কাজ করছে। আমরাও রাজারবাগ থেকে ৫ টা ওয়াটার ক্যানন এনে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কাজ শুরু করি। আমাদের ওয়াটার রিজার্ভার থেকে প্রায় ২ লাখ লিটার পানি সাপ্লাই দিয়েছি, আমাদের প্রায় ২ হাজার ফোর্স এই এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছে। ফয়ার সার্ভিসের কর্মীরা অত্যন্ত পরিশ্রম করেছে। র‌্যাব-বিজিবিসহ তিন বাহিনীর সদস্যরা একযোগে দায়িত্ব পালন করেছে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা কিছুক্ষণ আগে আগুন নিয়ন্ত্রণের খবর পেয়েছি।

পুলিশ সদর দফতরে আগুন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের একটি ব্যারাকে আগুন লেগেছে। আমাদের সকল সদস্যরা নিরাপদে বের হতে পেরেছেন। মালামাল বের করতে পারিনি। তবে ডকুমেন্টস ও মালামালের কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে হামলা প্রসঙ্গে পুলিশ প্রধান বলেন, আপনারা দেখেছেন কী অবস্থা, এখানে হাজার হাজার মানুষ। হামলার খবর পেয়ে আমরা সাথে সাথেই গিয়েছি, এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। পরে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনাটা যখন ঘটেছে, আগে থেকে প্রস্তুতি ছিল না। আস্তে আস্তে আমরা শক্তি বৃদ্ধি করেছি, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। এখন পুরো পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ট্রাফিক ব্যস্থাপনাও ঠিক রেখেছি, যার কারণে এত বড় ঘটনার পরও ঢাকার ট্রাফিক সচল ছিল। আইজিপি আরও বলেন, ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নাশকতার কোনো ঘটনা থাকলে কমিটির তদন্তে বের হয়ে আসবে। আমরা সেই রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকবো। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই নেবো।

৬টি মার্কেটের ৫ হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত -দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী : আগুনে বঙ্গবাজারসহ আশপাশের ৬টি মার্কেটের ৫ হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতা করবেন বলে জানান তিনি। ঈদ উপলক্ষে তারা অনেক মালামাল ক্রয় করেছিল। সেগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। যদিও পুলিশ প্রশাসনের সদস্যদের চেষ্টায় অনেকে মালপত্র উদ্ধার করে সরিয়ে নিতে পেরেছে, তারপরও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অগ্নিকা-ের কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের টিম কাজ করছে। যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তের পর আমরা জানতে পারব। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি সমন্বয় করছেন, পর্যবেক্ষণ করছেন, সারাক্ষণ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বিভিন্ন সংস্থার সকল সদস্যের সাথে প্রধানমন্ত্রী সমন্বয় করেছেন।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone