হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় শেষ, কোটা বাকি ৮২৪৪
চলতি বছর হজের নিবন্ধনের সময় সাত দফা বাড়ানো হয়েছে। এরপরও বাংলাদেশ থেকে হজ পালনে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হয়নি। সর্বশেষ বাড়ানো হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বুধবার (৫ এপ্রিল) শেষ হয়েছে। তবে কোটা পূরণে এখনো আট হাজার ২৪৪ জনের নিবন্ধন বাকি আছে।
এবার হজের খরচ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় নিবন্ধনে ভাটা পড়েছে। এর আগে সাত দফা সময় বাড়িয়েও কোটা পূরণ করা যায়নি। সউদী আরবে সেবামূল্য কমার কারণে চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজ পালনে খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানোও হয়েছে। কিন্তু এরপরও সাড়া মেলেনি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সউদী আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন ও অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।
হজ পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত মোট এক লাখ ১৮ হাজার ৯৫৪ জন হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়েছেন। এর মধ্যে সরকারিভাবে ৯ হাজার ৯৯৩ জন এবং বেসরকারিভাবে এক লাখ আট হাজার ৯৬১ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এখনো কোটা পূরণে আট হাজার ২৪৪ জন হজযাত্রীর নিবন্ধন বাকি আছে।
গত ২ এপ্রিল রিলিজিয়াস রিপোর্টার্স ফোরামের (আরআরএফ) উদ্যোগে ‘হজ প্যাকেজ ২০২৩ ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সেমিনার ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, সরকারি ক্ষেত্রে কিছু খালি আছে। সরকারি ক্ষেত্রে খালি থাকার কারণ হলো- ডিফেন্সের যারা যান, তাদেরটা যুক্ত হবে। আরও নানান জায়গা থেকে যুক্ত হবে। এতে আমরা সংকুলান করতে পারবো বলে আশা করি।
তিনি বলেন, বেসরকারিভাবে হজযাত্রীও পূরণ হয়ে যাবে। আগে হজযাত্রী যাওয়া, না যাওয়া নিয়ে আগে যে একটা চিন্তা-ভাবনা ছিল কেমন যায় না যায়। হজযাত্রী যেতে পারবে না, সেই চিন্তা করার অবকাশ ইনশাআল্লাহ অবকাশ নেই।
চলতি বছর হজে যেতে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। তবে কোটার বিপরীতে খুবই কম সংখ্যাক হজযাত্রী নিবন্ধিত হন। পরে নিবন্ধনের সময় ৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেই সময়েও কোটার অর্ধেকেরও কম হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়।
সর্বশেষ নিবন্ধনের সময় ১৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্েযও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই নিবন্ধনের সময় ২১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরে সময় আরেক দফা বেড়ে হয় ৩০ মার্চ পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যে কোটা পূরণ না হলে শেষে নিবন্ধনের সময় ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের নিয়ম রাখা হয়েছে। এবার সরকারিভাবে হজ পালনে খরচ নির্ধারণ করা হয় ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয় ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে কোরবানির খরচ।
গত বছর সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ হয়। সেই অনুযায়ী প্যাকেজ-১-এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বাড়ে ৯৬ হাজার ৬৭৮ টাকা, প্যাকেজ-২-এর ক্ষেত্রে খরচ বাড়ে এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা। বেসরকারিভাবে হজ পালনে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বাড়ে এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৪ টাকা। এবারের হজে যাওয়ার খরচ অনেকেরই সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।
পরে সউদী প্রান্তের খরচ কমায় গত ২২ মার্চ সরকারি ও বেসরকারি হজের প্যাকেজ মূল্য কমানোর ঘোষণা দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। তখন মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, সরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনার তাবু ‘সি’ ক্যাটাগরি ধরে প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে, তাই সরকারি প্যাকেজ মূল্য ৪১৩ সউদী রিয়াল সমপরিমাণ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানো হয়েছে। এজন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় বর্তমান হজ প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে ছয় লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করা হলো।
হজ এজেন্সিজগুলোও মিনার তাবু ‘সি’ ক্যাটাগরি ধরে প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে, তাই বেসরকারিভাবে হজ পালনে প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে ছয় লাখ ৬০ হাজার ৮৯০ টাকা নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়।
হজে যেতে এখনো সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাঁচ হাজার ৬৪৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ৫৮ হাজার জন প্রাক-নিবন্ধিত রয়েছেন। দফায় দফায় নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েও যখন এবার কোটা পূরণ হচ্ছিল না, তখন প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমিক উন্মুক্ত করে দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
শেষে গত ২ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও সউদী আরবের হারাম শরিফের কাছাকাছি বিভিন্ন হোটেল ভেঙে ফেলায় আগামী বছরগুলোতে হজের খরচ আরও বাড়বে। তাই এবারের হজ প্যাকেজকে সর্বনিম্ন হিসেবে বিবেচনা করছেন তারা। তাই হজে যেতে ইচ্ছুকদের এবার হজে যেতে নিবন্ধন করার অনুরোধ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপরও হজযাত্রী নিবন্ধনে গতি আসেনি।