দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি
চূড়ান্ত হিসেবে দেশের মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী এ তথ্য জানিয়েছে বিবিএস। এর আগে প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। সর্বশেষ ২০১১ সালের শুমারিতে জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৯৮ লাখ। এ হিসেবে গত ১০ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে দুই কোটি ২৮ হাজার ৯১১ জন। গতকাল রোববার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর সমন্বয়কৃত জনসংখ্যার তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস। এসময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন ও মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান এবং বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনয়ক সেন। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন।
গত বছরের ১৫-২১ জুন দেশের প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা পরিচালনা করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। শুমারি শেষে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে দেশের গণনাকৃত মোট জনসংখ্যার হিসাব দেয়া হয়। গণনাকালে সৃষ্ট কভারেজ ও কনটেন্ট ইরোর নিরূপণের জন্য বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে শুমারি পরবর্তী যাচাই পিইসি জরিপ পরিচালনা করে। তাদের জরিপে বিবিএসের করা প্রাথমিক প্রতিবেদনের সাথে মোট জনসংখ্যায় ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ২৯৫ জন যোগ হয় ।
জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৩ জন, নারী ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২০ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ বেশি। নারী পুরুষের পাশাপাশি দেশে হিজড়া ১২ হাজার ৬২৯ জন এবং ব্যালেন্স পপুলেশন (সরাসরি যাদের সাক্ষাৎ নেওয়া সম্ভব হয়নি) ৮৫ হাজার ৯৫৭ জন।
প্রতিবেদন অনুযায়ি, শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি মানুষ বসবাস করে। মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ গ্রামে এবং ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শহরে বাস করে। গ্রামে বসবাস করে ১১ কোটি ৬১ লাখ আর শহরে ৫ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে মোট পরিবার বা খানার সংখ্যা চার কোটি ১০ লাখ।
জনসংখ্যার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে আর সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে। ঢাকা বিভাগে বসবাস করে ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৫ জন। এবং বরিশাল বিভাগে বসবাস করে বরিশাল বিভাগে ৯৩ লাখ ২৫ হাজার ৮১৮ জন। এছাড়া, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮১ জন, রাজশাহী বিভাগে ২ কোটি ৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৩ জন। রংপুর বিভাগে ১ কোটি ৮০ রাখ ২০ হাজার ৭৩ জন। খুলনা বিভাগে ১ কোটি ৭৮ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৭ জন। ময়মনসিংহ বিভাগে ১ কোটি ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫২৪ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার ২১ জন বসবাস করে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইসলামধর্মালম্বী। দেশের মোট জনসংখ্যার ৯১ শতাংশই মুসলিম। দেশে মুসলমানের সংখ্যা ১৫ কোটি ৪৫ লাখ ৪২ হাজার ৭৮ জন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ১ কোটি ৫২ লাখ ৮৭৬ জন।
দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরই বেশি শুন্য থেকে ৩০ বছর বয়সী। মোট ৯ কোটি ৩১ লাখ ২৯ হাজার ৫৮৬ জনে বয়স ৩০ বছরের নিচে। অর্থাৎ মোট ৫৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠি । আর সবচেয়ে কম ৭০ থেকে ৭৮ বছর বয়সী মানুষ। এই বয়সী জনগোষ্ঠীর হার ১ দশমিক ৭২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম শুমারিতে দেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৪ লাখ। এরপর ১৯৮১ সালে জনশুমারিতে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় আট কোটি ৯৯ লাখ। ১৯৯১ সালে দেশে মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ কোটি ১৫ লাখ। ২০০১ সালে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৫ লাখ।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, করোনা ও বন্যা শুমারির গণণাকে কিছুটা বাঁধাগ্রস্ত করলেও শেষ পর্যন্ত খুব ভালোভাবে এটি করা সম্ভব হয়েছে। এখন যে সংখ্যাটি দেয়া হলো এটিও চূড়ান্ত হিসাব। আর কোন জনসংখ্যার আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন দেয়া হবে না। তবে আগামীতে উন্নত দেশগুলোর মতো রিয়েল টাইম তথ্য যাতে পাওয়া যায় সেজন্য কাজ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, বড় ধরনের জরিপ বা শুমারিতে কিছু ভুল থাকবে। কিন্তু সেটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে থাকলেই চলে। আমেরিকার মতো দেশেও এই ধরনের ভুল থাকে। শুমারির তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে দেশে তরুণ ও কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেশি। এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে কাজ করছে সরকার। তিনি বলেন, গ্রামে এখন শহরের সুবিধা পৌঁছে যাওয়ায় মানুষ গ্রামেই বেশি থাকছেন। শহরের ওপর নির্ভরশীলতা কমছে। এখন ইউনিয়ন পর্যায়েও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে।
বিবিএস সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে আছে। তবে এখনও আমরা পুরোপুরি উন্নত হইনি। তাই আমাদের কাজে ভুল হবে। আমরা তা সংশোধন করে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবো। আবার এগিয়ে যাব। ড. বিনায়ক সেন বলেন, শহরে জনসংখ্যা ৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। এটা খুব বেশি না হলেও একেবারেই কম নয়। এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।