বঙ্গবাজারের অস্থায়ী মার্কেট চালু
মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ী সংঘর্ষ
আগুনে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার মার্কেটের জায়গায় আজ বুধবার থেকে অস্থায়ীভাবে বসার সুযোগ পাবেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। ইট বিছিয়ে মেরামত করে নতুনভাবে গড়ে ওঠা অস্থায়ী এই মার্কেট এখন দৃশ্যমান।
আজ বুধবার থেকে এখানে বসে বেচাকেনা শুরু করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী নেতারা। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার পুড়ে যাওয়া মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষে কামাল হোসেন রিপন নামে এক ব্যবসয়ী আহত হয়েছেন। ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, ‘সভাপতি, সেক্রেটারির মধ্যে ত্রাণ তহবিল নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে এ সংঘর্ষ হয়। বঙ্গবাজারে অগ্নিকাÐে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের চ‚ড়ান্ত তালিকা তৈরি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তদন্ত কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানান ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, ডিএসসিসির গঠিত তদন্ত কমিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে ন‚র তাপসের কাছে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদনে দাখিল করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৩ হাজার ৮৪৫ জন। এর আগে মঙ্গলবার বিকেল ৫ টায় কমিটির সভাপতি ও অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে ন‚র তাপসের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এসব ব্যবসায়ীদেরকে আজ দুপুর থেকে মার্কেটের জায়গায় অস্থায়ীভাবে বসানো হবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এসে ব্যবসায়ীদেরকে বসানোর ব্যবস্থা করবেন।
এদিকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তহবিলে গত সোমবার পর্যন্ত ২ কোটি ১২ লাখ টাকা জমা পড়েছে। এই তহবিলের পুরো টাকা সরকারের কাছে যাবে। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একটা বড় অনুদান আসবে। সব মিলিয়ে এই টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরকারি উদ্যোগেই বণ্টন করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে আগুনে পোড়া মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ শেষের দিকে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের মতো জায়গা নতুন ইট ও বালু দিয়ে সংস্কার করে চৌকি বসানোর মতো ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করছেন, কখন তারা নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
টাঙ্গাইল ফ্যাশন নামের ১০৬৭ নম্বর দোকানের মালিক মো. মিনজু আলম ভ‚ঁইয়া বলেন, আজ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদেরকে বসানোর কথা বলা হচ্ছে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে বঙ্গবাজারে ফুটপাতে বসানো দোকানের পাশাপাশি আশপাশের মার্কেটের দোকানগুলোও খুলেছে। আংশিকভাবে পোড়া এনেক্সকো টাওয়ার, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুর্নবাসনের পাশাপাশি বঙ্গবাজারে ক্রেতা ফেরানোর জন্যও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করতে হবে। তা না হলে এখানকার ব্যবসায়ীরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের চৌকি বিছিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিতে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাÐস্থল প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদের তত্ত¡াবধানে এবং করপোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটির সার্বিক সহযোগিতায় অঞ্চল-১-এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীলের নেতৃত্বে দোকানের জায়গা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই কাজের অংশ হিসেবে বঙ্গবাজারের ১ দশমিক ৭৯ একর জায়গাজুড়ে বালু ও ইট বিছানো হবে। ইতোমধ্যে সেখানে ৪০ গাড়ি বালু ফেলা এবং প্রায় ৯০ হাজার ইট বিছানো হয়েছে। পুরো এলাকায় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার ইট বিছানো এবং প্রায় ১৫০ গাড়ি বালু ফেলা হবে জানা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, পুড়ে যাওয়া জায়গা থেকে বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম চলছে। করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. হায়দর আলীর নেতৃত্বে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অগ্নিকাÐস্থল থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগে। আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের বঙ্গ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট, মহানগর শপিং কমপেক্স, আদর্শ মার্কেট ও এনেক্স টাওয়ার।