সত্যিই হোয়াইটওয়াশ হয় না বাংলাদেশ!
টানা দুই ম্যাচে বাজেভাবে হেরে সিরিজ খুয়ে ফেলার পর লজ্জার হোয়াইটওয়াশের শঙ্কা পেয়ে বসেছিল বাংলাদেশকে। তবে ব্যাটে-বলে দাপুটে পারফরম্যান্সে ধারা বজায় রেখে সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে লিটন দাসের দল। আফগানিস্তানকে তৃতীয় ম্যাচে ৭ উইকেটে হারিয়ে অন্তত হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারল বাংলাদেশ। গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে শরিফুল ইসলামের তোপে ৪.২ ওভারে মাত্র ১২৬ রানেই গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। ওই রান টপকাতে ¯্রফে ২৩.৩ ওভার খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এই জয়ে ৯ বছর ধরে ওয়ানডেতে দেশের মাঠে হোয়াইটওয়াশড না হওয়ার ধারাও অব্যাহত থাকল। সবশেষ ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে এই ম্যাচ জিততে পারলে আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বাইরে প্রথম কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেত আফগানিস্তান।
তবে নিজেদের সেরা সংস্করণে এমনটা হতে দেবে কেন বাংলাদেশ। কেননা গত ডিসেম্বর থেকে ধরলে সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশ সফলই হয়েছে বেশি। ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজে ইংল্যান্ডকে হারানো। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ এবং পরপর দুটি ওয়ানডে সিরিজ জয়। সেই দলটিই পড়ে গিয়েছিল লজ্জার মুখে। তবে ধুলার আবরণ সরিয়ে স্মৃতির আয়নাটা পরিষ্কার করে দেখুন, সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে হেরে তৃতীয় ম্যাচে ধবলধোলাই এড়ানোর চ্যালেঞ্জ, এ রকম ম্যাচে বাংলাদেশকে এখন সহজে হারানো যায় না। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ অত্যন্ত খারাপ খেলে সিরিজ হেরে গেলেও দেখা যায় শেষ ম্যাচে ঠিকই প্রবল প্রতাপে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষের ধবলধোলাইয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেয়। অন্তত সর্বশেষ এ রকম দুটি শঙ্কার সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ তা-ই করে দেখিয়েছে।
ফিরে যান এ বছরের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে, অথবা আরেকটু পিছিয়ে গত বছরের আগস্টে হওয়া জিম্বাবুয়ে সফরে। ২০২১ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ড থেকে ধবলধোলাই হয়ে আসার পর এই দুটি ওয়ানডে সিরিজেই প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে ৩-০তে হারানোর সুযোগ পেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পারেনি। গতকালও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বোলাররা গড়ে দেন জয়ের ভিত। নতুন বলে অসাধারণ স্পেল করেন শরিফুল ইসলাম। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২১ রানে শিকার করেন তিনি ৪ উইকেট। আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ নেন ২ উইকেট। সঙ্গে তিন স্পিনারের সংযোগে আফগানরা গুটিয়ে যায় ১২৬ রানেই। রান তাড়ায় শুরুতে মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও নাজমুল হোসেন শান্তকে হারালেও জিততে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।
মাইলফলক ছোঁয়া সাকিব আল হাসান ও লিটন কুমার দাসের জুটি দলকে এগিয়ে নেয় অনেকটা। সাকিব জয়ের কাছে গিয়ে আউট হলেও জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন অধিনায়ক লিটন। ৬০ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক লিটন। তবে জয়ের ভিত গড়ে দিয়ে মূল নায়ক শরিফুলই। ৯ ওভার বল করে ২১ রান খরচায় ৪ উইকেটন নেন বাঁহাতি পেসার। এই ম্যাচটা জিতলেও আফগানদের কাছে প্রথমবার ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হারার অস্বস্তি অবশ্য থাকবেই। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে শুরু করা সিরিজে প্রাপ্তির খাতা ছিল প্রায় শূন্য। ৮ বছর পর ঘরের মাঠে কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার শঙ্কাও চোখ রাঙাচ্ছিল। অবশেষে এমন সমীকরণের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ পেল সান্ত¡না।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় নেমে আবারও চরম হতাশ করেন নাঈম শেখ। ১২৬ তাড়া করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ফজল হক ফারুকির বলে তার বোল্ড হয়ে যাওয়া হতাশা ছড়িয়েছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। তামিম ইকবাল না থাকায় সিরিজের শেষ দুটি ওয়ানডেতে খেলার সুযোগ পান এই বাঁহাতি ওপেনার। কিন্তু দুই বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরে দুই সুযোগের কোনোটিই পারলেন না কাজে লাগাতে। বরং দুই ম্যাচেই ফারুকির বলে প্রায় একই রকম আউট, স্টাম্পে বল টেনে এনে বোল্ড। আগের ম্যাচে ২১ বলে করেছিলেন ৯, এবার ৮ বলে কোন রান করে বিদায় নেন এই ব্যাটার।
অধিনায়ক লিটনের সঙ্গে মিলে নাজমুল হোসেন শান্ত দুই চারে থিতু হওয়ার আভাস দিতেই নিভেছেন। তারও হন্তারক ফারুকি। ফারুকির বল স্টাম্প থেকে সরে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন, পরাস্ত ভেতরে ঢোকা বল তার স্টাম্প ভেঙে দেয়, শেষ মুহূর্তে আর সামাল দিতে পারেননি তিনি। ২৮ রানে ২ উইকেট হারানোর পর জুটি বাঁধেন সাকিব-লিটন। দুই ম্যাচেই থিতু হয়ে আত্মাহুতি দেওয়া লিটন এবার খেলেন আরও সতর্ক হয়ে। সাকিবের (৩৯) সঙ্গে ৬১ ও তৌহিদ হৃদয়ের (২২*) সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৪০ রানের জুটিতে অধিনায়ক লিটন দাস ফিরেছেন দলকে ম্যাচ জিতিয়ে, সঙ্গে অলঙ্কার হিসেবে নামের পাশে অপরাজিত ৫৩ রান।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং বেছে খেলতে নেমেই চরম বিপদে পড়ে সফরকারীরা। প্রথম দুই ম্যাচে বেঞ্চে বসে অপেক্ষায় ছিলেন শরিফুল। ভেতরে তাড়না হয়ত ছিল প্রবল বিশ্বকাপে নিজের দাবি জোরালো করার সুযোগ পেয়েই তেড়েফুঁড়ে উঠেন তিনি। উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় করে চাপে ফেলতে থাকেন ব্যাটারদের। প্রথম উইকেটটি অবশ্য পেয়েছেন আড়াআড়ি বেরিয়ে যাওয়া বলে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইব্রাহিম জাদরান এবার ১ রান করেই জমা পড়েন মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। এক বল পরই রহমত শাহর ক্যাচ উঠে গালিতে। মেহেদী হাসান মিরাজ তা নিতে না পারলেও অপেক্ষে পুড়তে হয়নি। পরের বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনিও।
চাপে পড়া আফগানরা ৬ষ্ঠ ওভারে পড়ে আরও বিপদে। বিপদজনক রাহমানুল্লাহ গুরবাজকে বাড়তি বাউন্সে কাবু করেন তাসকিন। শর্ট বল খেলতে না পেরে গুরবাজের দেওয়া ক্যাচ অনেকখানি লাফিয়ে ধরেন মুশফিক। মোহাম্মদ নবিকে নিয়ে অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শহিদি পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছিলেন। রানের চাকা মন্থর হয়ে গেলেও টিকে থাকার দিকে মন দিচ্ছিলেন তারা, লাভ হয়নি। নবম ওভারে নিজের প্রথম স্পেলে আরেক সাফল্য শরিফুলের। তার বলে ফ্লিক খেলতে গিয়ে পায়ে লাগিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন।।
হাসমতুল্লাহ তাইজুল ইসলামকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান। অভিষিক্ত আব্দুল রহমানকে ছেঁটে শরিফুল নিজের চতুর্থ উইকেট তুললে ৬৮ রানেই ৭ উইকেট পড়ে যায় আফগানিস্তানের। এরপর টেল এন্ডারদের নিয়ে ইনিংস লম্বা করেছেন আজমতুল্লাহ ওমরজাই। ওয়ানডেতে তার প্রথম ফিফটিতে আফগানরা পেরিয়ে যায় তিন অঙ্কের ঘর। তবে তাদের মামুলি পুঁজি আর সমস্যার কারণ হতে পারেনি বাংলাদেশের।