১০০ বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধি দল কী তথ্য নিয়ে গেলেন?
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দল সফর শেষে গতকাল ২৩ জুলাই ঢাকা ছেড়েছে। ঢাকা ছাড়ার আগে সরকারি বেসরকারি প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় ১০০টি বৈঠক করেছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এই ১০০ বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব খুঁজেছেন তারা।
ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সফরকালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দুদফা বৈঠক করেছেন। সে সময় তারা নির্বাচনী ব্যবস্থা, নির্বাচনের সময় সহিংসতা, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা, ভোটার তালিকা ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চেয়েছেন । একই সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে কীভাবে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক করা যায়, তারা সে উত্তর খুঁজেছেন।
ইইউ প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আর বিএনপি ইইউ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বিধায়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি।
ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ঢাকা সফরকালে ৪ জন সম্পাদক এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশে গণমাধ্যম কতটুকু স্বাধীন, এ নিয়ে জানতে চান ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
সফরকালে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আদিবাসী, সংখ্যালঘু স¤প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। নির্বাচনকালে তারা কি কি সমস্যায় পড়েন সেসব বিষয়ে জানতে চান ইইউ প্রতিনিধিরা। এ সময় নিজ নিজ প্রতিনিধিরা নির্বাচনকালে তাদের সমস্যা তুলে ধরেন।
আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে শান্তি বজায় রাখবে সে জবাবও খুঁজেছেন তারা। এছাড়া বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন, সে বিষয়েও অনুসন্ধান করেছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
ইইউ প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দলটির সফর ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ঢাকার বাইরে সিলেটে গিয়েও প্রতিনিধি দল সফর করে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ৬ সপ্তাহের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা সফর করতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ সময় তারা পার্বত্য এলাকার নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করবে। ইইউ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি সরকারের কাছে এই প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইইউ›কে এখনো জানানো হয়নি।
ইইউ প্রতিনিধি দল ঢাকা থেকে ফিরে গিয়ে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন ব্রাসেলসের ইইউ অফিসে পেশ করবে। তবে আগামী নির্বাচনে প্রতিনিধি দল পাঠাবে কি না, সে বিষয়ে ব্রাসেলস অফিস চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়টি চ‚ড়ান্ত না হলেও পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দলের জন্য একটি অফিস খুঁজছে ঢাকার ইইউ অফিস। ব্রাসেলস থেকে পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত এলে দ্রæত যেন অফিস নেওয়া যায়, সে জন্য আগেভাগেই অফিস খোঁজা হচ্ছে।
এর আগে রিকার্ডো কেলেরির নেতৃত্বে ৬ সদস্যের ইইউ প্রতিনিধি দল গত ৯ জুলাই ঢাকায় আসেন। তবে প্রতিনিধিদলের নেতা রিকার্ডো কেলেরিসহ ২ জন সদস্য ১৭ জুলাই ঢাকা থেকে ফিরে যান। পরবর্তীতে বাকী ৪ সদস্য ঢাকায় অবস্থান করেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউ কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, প্রতিনিধি দল সে বিষয়ে সুপারিশ করবে। তাদের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করেই ইইউ এ বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তারা কি রিপোর্ট জমা দেবেন তা জানার জন্য মুখিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের ভোটের অধিকার হারানো মানুষ।