খেলা আয়োজনে প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম!
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রধান ও ঐহিত্যবাহী ভেন্যুর নাম বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। দেশের সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া স্থাপনায় এক সময় ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, অ্যাথলেটিক্স, কুস্তি, বক্সিং ও আরচ্যারি খেলার পাশাপাশি আয়োজন হতো বিদেশি সার্কাসও। মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম ক্রিকেটের প্রধান ভেন্যু হিসেবে গড়ে ওঠার আগে ফুটবল ও অ্যাথলেটিক্সের সঙ্গে ভাগাভাগি করে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অয়োজন হতো ক্রিকেটের ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক আসরের বিভিন্ন খেলা। সর্বশেষ ২০০৪-০৫ সালে এখানে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। তখন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ ও ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০০৫ সালের ৩১ জানুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয়ার পর বঙ্গবন্ধুতে শেষ হয় ক্রিকেটযাত্রা। তখন থেকেই এই স্টেডিয়াম পাকাপাকিভাবে হয়ে যায় ফুটবলের। পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্সও ব্যবহার করে এই ভেন্যু। তবে মাঝে ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ও ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে।
বর্তমানে সংস্কার কাজ চলছে দেশের প্রধান ও বৃহৎ এই ক্রীড়া স্থাপনায়। তবে এই কাজ এখন থমকে আছে। আধুনিক ক্রীড়া ভেন্যু গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২১ সালের জুনে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ। চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এই সংস্কার কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরো এক বছর সময় লাগবে। কারণ কিছু কাজ বেড়ে গেছে। বর্ধিত বাজেটে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের আধুনিকায়নের কাজ শেষ হওয়ার নতুন সময় নির্ধারণ হয়েছে ২০২৪ সালের জুন মাস। এখানকার সংস্কার কাজের বর্ধিত বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা। তৃতীয়বার বাজেট বেড়েছে ৬০ কোটি টাকার মতো। অতিরিক্ত টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পেতে বিলম্ব হওয়ার কারণেই বর্তমানে স্থবির হয়ে আছে এই স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ। প্রথমত করোনাভাইরাসের ধাক্কা, দ্বিতীয়ত বাজেট বৃদ্ধি মিলিয়ে দীর্ঘ সময় ব্যয় হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামকে আধুনিক স্থাপনা হিসেবে গড়ে তুলতে।
২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজের জন্য যখন প্রথম ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজোল) তৈরি করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি), তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৮০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ওই প্রকল্প তৈরি হয়েছিল। কিন্তু যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এই স্টেডিয়ামের সংস্কার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনে এনএসসি। নতুন পরিকল্পনায় বাজেট বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ কোটি টাকা এবং সংস্কার শেষ করার দিনক্ষণ নির্ধারণ হয় ২০২২ সালের জুন। পরে সময় বাড়িয়ে তা ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছিল। তৃতীয়বার বাজেট বাড়ার পাশাপাশি প্রকল্পের সময়ও বাড়ানো হয়। বর্ধিত কাজ নিয়ে গতকাল যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘বর্ধিত কাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফ্লাড লাইট স্থাপন। ফ্লাইড লাইট স্থাপনের জন্য আমরা প্রথমে যে বাজেট ধরেছিলাম তার দ্বিগুণ লাগছে এখন। কারণ, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) চাহিদা অনুযায়ী আমাদের এখন এলইডি লাইট স্থাপন করতে হবে। এটার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। আমরা উনার মৌখিক অনুমতি নিয়েছি। এখন বর্ধিত বাজেট একনেকে উত্থাপন হবে। সেখানে অনুমোদন হলেই দরপত্র প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে।’
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে কবে নাগাদ খেলা হতে পারে? এ প্রসঙ্গে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্টেডিয়ামের মাঠের ঘাস সবুজ হয়ে গেছে। অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকও বসেছে। এখন ফুটবল ও অ্যাথলেটিক্স দুই ফেডারেশন চাইলে খেলা আয়োজন করতে পারে। বাফুফে যদি এখানে খেলা আয়োজন করে তাহলে আমরা স্টেডিয়াম সংস্কার কাজের কোনো কিছুই ভেতরে রাখবো না। ফ্লাডলাইট স্থাপন, শেডের বাকি অংশ বসানো এবং গ্যালারিতে চেয়ার স্থাপনের সময় মাঠের খেলায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। সব কিছু বাইরে রেখেই কাজ হবে। স্টেডিয়ামের ভেতরে খেলার উপযুক্ত পরিবেশই থাকবে। বাফুফে আগ্রহ দেখালেই আমরা মাঠ খেলার উপযুক্ত করে দেবো।’ আগামী মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দু’টি ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ আছে। অক্টোবরে মালদ্বীপের বিপক্ষে আছে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের খেলা। এ নিয়ে জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দু’টি হবে সিলেটে। অক্টোবরে মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটিও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আয়োজনের সম্ভাবনা নেই। কারণ, হাতে আছে মাত্র দুই মাস।’