মে থেকে ফোরজি!
প্রযুক্তি ডেস্ক : আগামী মে মাস থেকে চালু হতে যাচ্ছে লং টার্ম ইভ্যুলুশন-এলটিই সেবা। দেশের ওয়াইম্যাক্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মোবাইল অপারেটররাও আগামী ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে চতুর্থ প্রজন্মের এই ইন্টারনেট সেবা চালু করবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস।
কিন্তু একই সময়ে লাইসেন্স না পাওয়া এবং তরঙ্গ বরাদ্দ ও দেশজুড়ে থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সিং নীতিমালার মারপ্যাঁচে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না মোবাইল অপারেটররা। তাদের ভাষ্য, এখন থ্রিজি সেবা পৌঁছে দেয়ার বিষয়েই তারা মনোযোগ দিচ্ছেন। ফোরজির জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়িয়ে ডেটার ব্যবহার বাড়ানোই এখন থ্রিজি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল ও টেলিটক এর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা চালু করতে লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলালায়ন, কিউবি এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (বিআইইএল) এর অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার। এপ্রল নগাদ এসব প্রতিষ্ঠান অফিসিয়ালি নিজেদের নেটওয়ার্কের কার্যক্রম পরীক্ষা করবে। এরপরই গ্রাহকদের জন্য এলটিই সেবা চালু করতে যাচ্ছে ওয়াইম্যাক্স প্রতিষ্ঠান তিনটি।
এ বিষয়ে বাংলালায়ন এর হেড অব মার্কেটিং কমিউনিকেশন জিএম ফারুক খান বলেন, আগামী মে মাসে ঢাকা চট্টগ্রামে এলইটিই সেবা চালু করবে বাংলালায়ন। এর পর পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় শহরে এই সেবা চালু করবে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে ওয়াইম্যাক্স এবং এলটিই দুই সেবাই কি একইসাথে চলবে না কি ওয়াইম্যাক্স সেবা বন্ধ করে দেয়া হবে সে বিষয় এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের আগে ফোরজি ইন্টারনেট সেবা চালু করা মোবাইল অপারেটরদের জন্য মোটেই সম্ভব নয় বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে আগামী ২০১-১৫ অর্থবছরেও এই সেবা চালু দুরুহ বলেই আলাপকালে জানা গেছে।
এ বিষয়ে রবি আজিয়েটা লিমিটেড এর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (সিআরএল) মাহমুদুর রহমান বলেন, “থ্রিজি ল্যাইসেন্স কেনার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ফোরজি সেবা দেয়ার বিষয়ে অধিকার পেয়েছি। কিন্তু চালুর অনুমতি পাইনি। আর তাই এখন লাইসেন্সং গাইড লাইন মেনে দেশজুড়ে থ্রিজি নেটওয়ার্ক সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছি।”
একই বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির এর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি নীতিমালা ও নির্দেশনা তৈরির আগেই আমাদের যুক্ত উপস্থাপন করেছি। তাই গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না। সময় হলে আনুষ্ঠানিকভাবেই এ বিষয়ে জানানো হবে।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ফোরজি সেবা চালু করার জন্য ২০০৮ সালের নিলামে ৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচটি (বাংলালায়ন, কিউবি, বাংলাদেশ ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (বিআইইএল), ম্যাংগো এবং রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ কোম্পানি বিটিসিএল) প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। লাইসেন্স বাবদ এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুণতে হচ্ছে ২৪৬ কোটি টাকা। এদের মধ্যে বাংলালায়ন ও কিউবি লাইসেন্স নেয় এবং ম্যাংগো ছাড়া বাকি সবাই আর্নেস্ট মানি তুলে নেয়। আগের নিলামের ওপর ভিত্তি করেই ম্যাংগোকে এলটিই লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। গত অক্টোবর মাসে বিডব্লিউএ গাইডলাইন সংশোধনের বিষয়টি প্রকাশ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
সূত্র আরো জানায়, ইতিমধ্যেই রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান মাল্টিনেটের মালিকানাধীন বিআইইএলকে ২৪৬ কোটি টাকা দিয়ে এলটিই লাইসেন্স ও দুই হাজার ৬০০ ব্যান্ডে তরঙ্গ বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয়। তবে নীতিমালা অনুযায়ী এই অপারেটর কেবল ডেটা সার্ভিস দিতে পারবে, কোনোভাবেই ভয়েস সার্ভিস দিতে পারবে না।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে বিটিসিএল এলটিই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেট সেবা দেবে। আর লাইসেন্স বা তরঙ্গ ফি ওই প্রকল্প থেকেই দেয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে গত বছরের অক্টোবরে থ্রিজি (থার্ড জেনারেশন) মোবাইল ফোন সেবা চালু করা হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে এ সেবা চালু করা হয়। এতে প্রযুক্তিগত সহায়তা করেছে চীন।
পরবর্তীতে ৮ সেপ্টেম্বর নিলামের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে থ্রিজি অপারেশনের সুযোগ পায় চার বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেল। থ্রিজির নীতিমালা অনুযায়ী অপারেটররা ১৫ বছরের জন্য লাইসেন্স পায়।
লাইসেন্স পাওয়ার পরের মাস অক্টোবর থেকেই (বাংলালিংক বাদে) অপারেটররা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থ্রিজি সেবা চালু করে। চলতি বছরের মধ্যেই সারা দেশে থ্রিজি সেবা পৌঁছে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ডিভাইস স্বল্পতার কারণে মোবাইল অপারেটররা ফোরজি সেবা চলতি বছরে চালু করছে না। একই সঙ্গে ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের ফোরজি সেবা চালু করা এবং কম টাকায় লাইসেন্স দেয়াকে পক্ষপাত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে বাজার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে এই সেবা শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় এতে ডিজিটাল বৈষম্যও দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।