দুই বছরেও কার্যকর হলো না ব্যাংক সহায়ক নীতি
প্রধান প্রতিবেদক : ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যাংকগুলোকে সরকারি উন্নয়ন কাজে অংশীদার করার জন্য ‘ব্যাংক সহায়ক নীতি’ তৈরির কাজ দুই বছরেও সম্পন্ন হয়নি। এ সংক্রান্ত সংশোধনী অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকার কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা কার্যকর করতে পারছে না।
এদিকে, এ নীতিমালা না থাকায় প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো থেকে বন্ড ও বিলের মাধমে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করলেও ইসলামী ব্যাংকগুলো থেকে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রচলিত ধারার ব্যাংকের কাছ থেকে সরকার বিভিন্ন সময় ট্রেজারি বন্ড ও বিল বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে। সরকার এর বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ দিচ্ছে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত তারল্য থাকার পরও ইনস্ট্রুমেন্ট (সহায়ক নীতি) না থাকায় উন্নয়ন কাজে সরকার এসব ব্যাংক থেকে টাকা নিতে পারছে না।
সূত্রটি জানায়, দেশে শরীয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত আটটি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আল আরাফাহ ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। এ আটটি ব্যাংকের কাছে ব্যাংকিং খাতের মোট সম্পদের ২০ শতাংশ সম্পদ রয়েছে। অন্যদিকে, প্রচলিত ধারার প্রায় ৪৫টি ব্যাংকের কাছে রয়েছে ৮০ শতাংশ সম্পদ।
শরীয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যাংকগুলোকে সরকারি উন্নয়ন কাজে অংশীদার করার জন্য ইসলামী বিনিয়োগ বন্ড রুল-২০০৪ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত সংশোধনী ২০১১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত তা ফিরে আসেনি।
সূত্রটি আরো জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শরীয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যাংকগুলোর কাছে বন্ড ও বিল বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে তারা ‘শুকুক’ নামে আখ্যা বন্ড ও বিলের বিকল্প সহায়ক নীতিতে অর্থ সংগ্রহ করে। এ লক্ষ্যে নীতিমালা তৈরিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ শুরু করে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত সংশোধনী ফিরে না আসার কারণে তা কার্যকর করা যাচ্ছে না।
প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার সহজ শর্তে বন্ড ও বিলের মাধ্যমে যে পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করে তা জনগণের কাছে বিনিয়োগ করলে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর মুনাফার পরিমাণ বাড়তো। কিন্তু সরকারের বন্ড ও বিল ক্রয়ের কারণে মুনাফার পরিমাণ কিছুটা কমছে। অন্যদিকে, ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সরকার বন্ড ও বিলের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ না করার কারণে তারা গ্রাহকদের কাছে বিনিয়োগ করে বেশি মুনাফা পাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তরিকতা ও উদ্যোগের ব্যাপার। কলমানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শরীয়াহভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে যেভাবে টাকা লেনদেন করে এক্ষেত্রেও তা করতে পারে। তবে এ ব্যাপারে ‘নর্মস’ করে দিতে হবে। প্রচলিত ধারার ও শরীয়াহভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকের মাঝে সমতার প্রয়োজনে এটা যৌক্তিক বলে মনে করেন তিনি।