প্রিগোজিনের মৃত্যুকে যেভাবে দেখছে বিভিন্ন দেশ
গত জুনে রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের বিদ্রোহের পর থেকে বাহিনীটির প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। বুধবার রাতে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রিগোজিনসহ ওই বিমানে থাকা ১০ জন আরোহীর মৃত্যুতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ যাওয়ার পথে ‘এমব্রায়ের লিগ্যাসি’ নামের ওই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমান বিধ্বস্ত ও প্রিগোজিনের মৃত্যুর সংবাদের পর এখন পর্যন্ত চারটি দেশের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কোন দেশ কি বলছে দেখে নেওয়া যাক।
যুক্তরাষ্ট্র: বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার নেপথ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাত থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, মস্কোর বিরুদ্ধে ওয়াগনারের ব্যর্থ বিদ্রোহের পর এই বাহিনীটি যে রাশিয়ার নিশানায় থাকবে তা আমি আগেই ধারণা করেছিলাম। আমি জানি না কি ঘটেছে, কিন্তু আমি অবাক নই। নেভাদায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। অবশ্য এর আগেও গত জুলাইয়ে প্রিগোজিনের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র মস্কো স্টেশনের সাবেক প্রধান কর্মকর্তা ড্যানিয়েল হফম্যান বলেছেন, ‘আমার কোনো সন্দেহ নেই যে, এ কাজ পুতিনের নির্দেশেই হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, বিদ্রোহের পর পুতিন তাকে গ্রেপ্তার না করে মিথ্যা নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিলেন যাতে প্রিগোশিন স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারেন। আর সেই সুযোগে তাকে হত্যা করা যায়।
ইউক্রেন: দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সহকারী মাইখাইলো পোডোলিয়াক সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, রাশিয়ার আনুগত্যের বিপক্ষে যেই যাবে তার জন্য ক্রেমলিনের কাছ থেকে এটি একটি সংকেত।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার দুই মাস পর প্রিগোজিন ও ওয়াগনারের এ পরিণতি ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে পুতিনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার অভিজাতদের কাছে একটি সংকেত। সেটা হলো, সাবধান! বিশ্বাসঘাতকতা মৃত্যুর সমান।
এস্তোনিয়া: সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাজা ক্যালাস বলেছেন, যেই ভিন্ন মতপ্রকাশ করবে তাদের এভাবে ভয় দেখাবেন পুতিন।
পোলান্ড: পোলান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেবিগনিউ রাউ রাষ্ট্রীয় নিউজ চ্যানেল টিভিপি ইনফোতে বলেছেন, যারা পুতিনের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে তাদের কেউ স্বাভাবিকভাবে মারা যায় না। যে কেউ এটিকে একটি কাকতালীয় ঘটনা বলে মনে করতে পারে। তবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যাদেরই ভ্লাদিমির পুতিন তার ক্ষমতার জন্য হুমকি বলে মনে করেন তাদের কারও স্বাভাবিক মৃত্যু হয় না।
প্রসঙ্গত, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ওয়াগনার প্রধান। ইউক্রেন যুদ্ধেও রাশিয়ার হয়ে লড়েছিলেন ওয়াগনার যোদ্ধারা। তবে রুশ সামরিক নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ ছিল প্রিগোজিনের। এরই মধ্যে গত ২৩ জুন হঠাৎ বিদ্রোহ করে বসেন তিনি। এ সময় দলবল নিয়ে সে সময় ওয়াগনারপ্রধান মস্কোর দিকে এগুতে থাকেন। গোটা মস্কো অঞ্চলে ‘সন্ত্রাস-বিরোধী’ বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়। পরে পুতিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় প্রিগোজিন মস্কো অভিমুখে যাত্রা স্থগিত করেন।