ডেঙ্গুতে বয়াবহ অবস্থা দেশের মৃত্যু ৫০০ ছাড়াল
দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখার পর এক বছরের মধ্যে এত মৃত্যু আগে কখনো দেখা যায়নি। দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ৫শ ছাড়িয়েছে। এদিকে কী কারণে এবার মৃত্যু বেশি তা জানতে এখনো ডেথ রিভিউ শুরু করেনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সংশ্লিষ্টদের ধারণা ছিল এবার আগের তুলনায় দাপট বাড়বে, তবে এতটা ভয়াবহ হবে তা কল্পনাতীত। সময় যত যাচ্ছে মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হচ্ছে। এদিকে সংক্রমণ না কমার পেছনে আবারও মশা নিধনে ব্যর্থতাকে দায়ী করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।সমন্বিত উদ্যোগ না হলে সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যু আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা কীটতত্ত্ববিদদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৭০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ৬ হাজার ৪২৯ জনে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
যদিও সাম্প্রতিক সময়ে আক্রান্তের হার ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে বেশি। তবে মোট আক্রান্ত রোগীর প্রায় অর্ধেকই ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা। বছরের প্রথমে জানুয়ারিতে প্রায় ৬শ রোগী শনাক্ত হওয়ার পরের তিন মাস কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও মে মাস থেকে পুরনো রূপে ফিরতে শুরু করে ডেঙ্গু। ওই মাসে সহস্রাধিক আক্রান্ত হয়। এরপর জুন-জুলাই ও চলতি আগস্টে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু। চলতি মাসের ২৩ দিনেই প্রায় ৫৫ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে ছয়জনের মৃত্যু দিয়ে বছর শুরু হলেও আট মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই মৃতের সংখ্যা ৫০৬ জনে পৌঁছেছে। এত কম সময়ে এত মৃত্যু এটাই প্রথম। এর মধ্যে ৩৭৪ জনই রাজধানীর বাসিন্দা।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের সব ওয়ার্ডে দ্বিতীয় দফায় শুরু হচ্ছে মুনসুন জরিপ। এডিস মশার সিজন শুরু হলে ঘনত্ব জানতে প্রতিবছর তিনটি সার্ভে (প্রি-মুনসুন, মুনসুন এবং আফটার মুনসুন) করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে জুনের শুরুতে প্রথম সার্ভে হয়েছিল। সে সময়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশেনের ৫৫টি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাস্তবেও হয়েছে তাই। এবার ঢাকার অধিকাংশ রোগী ওই সব এলাকার।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটে চললেও সেদিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে এই বছরে মৌসুমের আগে আগে সেটা প্রকট হয়ে উঠেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগীদের অবস্থা খুব তাড়াতাড়ি অবনতি হচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১৯৬৫ সালে। তখন এই রোগটি ঢাকা ফিভার নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে রোগটির সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে।
‘’আক্রান্তদের মধ্যে ডেঙ্গুর চারটি ধরন বা সেরোটাইপ পাওয়া যাচ্ছে। যারা এখন আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের মধ্যে দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাই বেশি। ২০০০ সালের আগে আগে আমরা দেখেছি, মানুষজন একটা ডেঙ্গুর একটা ধরনে আক্রান্ত হতো। ফলে তাদের মধ্যে একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতো। কিন্তু যখন মানুষ চারটা ধরনেই আক্রান্ত হতে শুরু করে, তখন প্রতিরোধ ক্ষমতা তেমন কাজ করে না। তখন সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তিনগুণ বেড়ে যায়,’’ তিনি বলছেন।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা বলেছেন, দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। তবে প্রতিটি হাসপাতালেই এখন ডেঙ্গু কর্নার আছে। প্রতিটি হাসপাতালেই পর্যাপ্ত শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও আমরা চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত আছি।