যুক্তরাষ্ট্রে আমলা-পুলিশের ২৫২ বাড়ি
- তালিকা পুরো সরকারের শীর্ষ মহলে
- একাধিক বাড়ি রয়েছে ৩০-৩৫ জন ওসিরও
- দেখভাল করেন বাড়িঘর আত্মীয়স্বজনরা
এমন ২৫২ জন আমলা যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কিনেছেন দেশের টাকা পাচার করে, একটি তালিকা পাওয়া গেছে, পুলিশসহ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। সেই তালিকা সরকারের শীর্ষ মহলে পাঠানো হয়েছে। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ঐই তালিকা, এই ২৫২ জনের মধ্যে অন্তত ৩০-৩৫ জন পুলিশের ওসি (ইন্সপেক্টর) রয়েছেন। একাধিক বাড়িও আছে এদের কারও কারও আবার। বাড়ি কিনেছেন কারা যুক্তরাষ্ট্রে? এই বিষয় নিয়ে কয়েকমাস ধরে তদন্ত করছিল একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সামনে এসেছে সেই রিপোর্টটি এখন। যুক্তরাষ্ট্রে নিয়েছেন এদের সবাই দেশ থেকে টাকা পাচার করে। বিশেষজ্ঞরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন।
এই তালিকায় সরকারের সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছাড়াও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাও আছেন। যারা সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। শুধু এই সরকারের আমলে নয়, বিগত সরকারগুলোর সময়ও আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ সরকারী কর্মকর্তারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। বিদেশে সম্পদ থাকার তালিকা প্রকাশ হয়েছিলড় তখনও কয়েকশ’ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর। এমন অনেকেই এখন বিদেশে নিজেদের সেই সব বাড়িতে অবস্থান করে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। ফলে জনগণের ভোট নিয়ে তাদের চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। বর্তমান সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছে। নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে এসব অসৎ কর্মকর্তাদের কারণে দেশে বিদেশে প্রধানমন্ত্রীকেই। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, গত জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি আছে এমন আমলাদের তালিকা সংসদে প্রকাশের দাবি করেছিলেন। গণমাধ্যমে এসেছে আমলাদের বিদেশে প্রচুর সম্পদ আছে। সংসদে প্রকাশ করা উচিৎ আমলাদের মধ্যে কাদের বিদেশে বাড়ি-গাড়ি আছে তাদের তালিকা। বিচারের আওতায় আনা উচিৎ তাদের বরখাস্ত করে। এমনকি তাদের ফাঁসি দেওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন এই সংসদ সদস্য।
আমদানি ও রফতানির প্রকৃত তথ্য গোপন করে ১০ বছরে (২০০৬ থেকে ২০১৫) বাংলাদেশ থেকে ৬ হাজার ৩০৯ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, দুই বছর আগে একটা রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিল, সেখানে বলা হয়েছিল। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫ লাখ হাজার কোটি টাকা। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) অর্থ পাচারের এ তথ্য প্রকাশ করেছিল। জিএফআই বলেছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা বা ৫৯০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।
আমেরিকার নিউইয়র্কেই দু’টি বাড়ি রয়েছে, সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার। ভাইরা সেই বাড়ি দেখাশোনা করেন ওই কর্মকর্তার। এক তথ্যে দেখা গেছে, আমলাদের অর্ধেকের বেশি’র সন্তান বিদেশে পড়াশোনা করে। আবার পুলিশেরও ঊর্ধ্বতনদের বড় একটা অংশের ছেলে মেয়ে বিদেশে পড়াশোনা করে। স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করছে যেখানে তারা পড়াশোনা করে সেখানেই তারা স্ত্রীকে পাঠিয়ে বাড়ি কিনে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, কানাডা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড এমনকি ভারতেও বাড়ি কিনে রেখেছেন অনেক কর্মকর্তা। সম্প্রতি ভারতে এক পুলিশ কর্মকর্তার একটি বাড়ি তার দেখভালের দায়িত্বে থাকা আত্মীয় দখল করে নিয়েছেন। ওই আত্মীয়ের দেশের বাড়িতে থাকা স্বজনদের চাপ দিয়ে বাড়িটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন তিনি।
গত অর্থবছরে পাচার করা টাকা দেশে আনার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। স্বাধীনতার পর দেশে প্রথমবারের মতো বাজেটে পাচার করা টাকা বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হয়; কিন্তু কোনো সাড়া মিলল না এই উদ্যোগে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে বলে। বলা হয়ে থাকে, কানাডায় গড়ে উঠেছে ‘বেগম পাড়া’ দেশ থেকে পাচার করা টাকা দিয়েই। একইভাবে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম কর্মসূচির তালিকায়ও বাংলাদেশিরা শীর্ষ পাঁচে আছে। এ ছাড়া দুবাইয়েও রয়েছে বাংলাদেশিদের টাকা।
গত জানুয়ারি মাসের ওই সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হক চুন্নু বলেছিলেন, বিষয়গুলো তদন্ত হওয়া উচিৎ বাংলাদেশিদের বিদেশে বাড়ি, গাড়ি, সম্পত্তি সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রকাশ হয়েছে তা সত্য কী না।
তিনি বলেন, ইদানিং লক্ষ্য করছি টাকা পাচার, বিদেশে ফ্ল্যাট কেনার সংবাদ পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে, নিউজ আসছে। দেখলাম আমাদের পররাষ্ট্র সচিব বলছেন, এ দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের বাংলাদেশের মানুষ যারা আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে থাকে তারা। সেটা নিচ্ছেন না বৈধ পথে। পররাষ্ট্র সচিব এ বিষয়টি স্বরাষ্ট্র এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন বলে দেখলাম। তিনি বলেন, যারা ইউরোপ-আমেরিকায় থাকে তারা তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে বৈধ পথে টাকা নিলে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু অবৈধ পথে কেন টাকা যাবে?