পুতিন-জিনপিং না থাকায় সুবিধা বাইডেনের
জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছান। সেখানে তিনি চীন ও রাশিয়ার বিপরীতে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রকে তুলে ধরছেন। সম্মেলনে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুপস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব কথা উল্লেখ করা হয়।
নয়াদিল্লিতে পৌঁছার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেট্টির সঙ্গে করমর্দন করেন বাইডেন। সফরে সঙ্গে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভানও। বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে ২০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে দিল্লি পৌঁছেছেন। তিনি মোদির সঙ্গে ৫২ মিনিট বৈঠক করেন। বৈঠকে সাম্প্রতিক চন্দ্রাভিযান, ভারতের প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একসঙ্গে কাজ করা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা ‘বিশ্বস্ততা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে’ সম্পর্ক জোরদারে যৌথ অঙ্গীকারও করেন।
জি২০ সম্মেলন বাইডেনের জন্য একটা সুযোগ। সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিনি জিনপিং ও পুতিনকে ধন্যবাদ জানাতেই পারেন। এতে তিনি অধিকতর গুরুত্ব আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন। সেই সঙ্গে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ও এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য বিস্তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি আসতে বিশ্বনেতাদের সুযোগ করে দিয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত গত বছরের জি২০ সম্মেলনের চেয়ে এবার নয়াদিল্লিতে বাইডেনের উপস্থিতিতে ভিন্ন রাজনৈতিক আবহ রয়েছে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তাঁর দল ডেমোক্রেটিক পার্টি অপ্রত্যাশিত ভালো ফল করায় তিনি বেশ উজ্জীবিত ছিলেন। সে সময় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও তিনি করেছিলেন। তবে এ বছর নতুন উদ্বেগ মোকাবিলা করছেন বাইডেন। আগামী নভেম্বরে তাঁর বয়স ৮১ বছরে পৌঁছাবে। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সিএনএনের এক জরিপে দেখা গেছে, বাইডেনের অনুমোদনের হার অনেকটাই কম।
বাইডেন-মোদি বৈঠক প্রসঙ্গে এপির খবরে বলা হয়, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি বিষয়ে অংশীদারিত্বে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এর মধ্যে কম্পিউটার চিপ তৈরি, টেলিযোগাযোগ, উচ্চশিক্ষা, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শিপিং লেন তৈরি ও কার্বন নির্গমন কমানোর বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে।
বাইডেনের এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল-বিষয়ক উপদেষ্টা কুর্ট ক্যাম্পবেল বলেন, ‘আমরা পুরোপুরিভাবে সম্পর্ক গভীর ও জোরদারের চেষ্টা করেছি। সম্মেলনে চীন কেন থাকেনি, এটা ব্যাখ্যার দায়িত্ব তাদের ওপর ছেড়ে দিলাম।’
শনিবার জো বাইডেন ও তাঁর মিত্ররা ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত একটি রেলসংযোগ স্থাপন ও শিপিং করিডোর নির্মাণের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা দেন। রাজনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো ও অর্থনৈতিক গতি ত্বরান্বিত করতে তারা এ উদ্যোগ নিচ্ছেন। এটাকে ‘আসলেই বড় চুক্তি’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর তাঁর উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেছেন, এ করিডোরের মাধ্যমে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জ্বালানি সরবরাহ ও ডিজিটাল যোগাযোগ বাড়ানো সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, ইসরায়েল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংযুক্ত হবে।