নির্ধারিত দাম মানছেন না কেউ এলপিজি সিলিন্ডারের
তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বাসাবাড়িতে রান্নায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। চলতি মাসে ১ হাজার ২৮৪ টাকা, ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম বেঁধে দেওয়া হয়। তা কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের ১ হাজার ৬০০ টাকায়। প্রায় আড়াই বছর ধরে দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা কার্যকর করতে পারছে না জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা রওশন আরা জানান, গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) তিনি ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার কিনেছেন। দাম নিয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা বাসায় এনে দেওয়ার খরচসহ। কোনো লাভ হয়নি সরকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা দেখানো হলেও। রওশন আরা বলেন, প্রতি মাসে বাড়তি দামে সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে ‘এবারই প্রথম নয়।’
দেশে ব্যবসায়ীরা আইন মানছেন না,
এলপিজি খাত তার প্রমাণ।
বিইআরসি নতুন করে লাইসেন্স দিতে পারে,
বাজার প্রতিযোগিতামূলক করতে নির্ধারিত দামে বিক্রি করায় আগ্রহী কোম্পানিকে।
বিইআরসি সর্বশেষ ৩ সেপ্টেম্বর এলপিজি সিলিন্ডারের নতুন দাম ঘোষণা করে। এলপিজি খাতের পরিবেশকেরা জানান, পরিবেশকদের ৫০ টাকা ও খুচরা বিক্রেতার ৪৫ টাকা বাদ দিলে ১২ কেজি সিলিন্ডারের পাইকারি দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ১৮৯ টাকা। অথচ এখন কোম্পানিগুলো রাখছে ১ হাজার ২৮০ থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকা। এর সঙ্গে তাদের পরিবহন খরচ ও মুনাফা যুক্ত করে ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
সভাপতি সেলিম খান সারা দেশে এলপিজি সিলিন্ডার পরিবেশক সমিতির বলেন, এভাবে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করা সম্ভব নয়, নির্ধারিত দামে ভোক্তার কাছে। কেননা কোম্পানির কাছ থেকে এই সিলিন্ডার কিনতে হয়, সরকারের নির্ধারিত খুচরা দামের চেয়ে বেশি দামে। তাঁর মতে, কোম্পানি ও পরিবেশকদের মধ্যে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা উচিত।
পরিবেশকদের ৫০ টাকা ও খুচরা বিক্রেতার ৪৫ টাকা বাদ দিলে ১২ কেজি সিলিন্ডারের পাইকারি দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ১৮৯ টাকা। অথচ ১ হাজার ২৮০ থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকা এখন কোম্পানিগুলো রাখছে।
ডলার যখন অজুহাত
বাড়তি দামে সিলিন্ডার বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন, এলপিজি কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, এখন সহনীয় বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম। কিন্তু এখন ডলার কিনতে হচ্ছে ১১৮ টাকায়, দেশে ঋণপত্র খুলতে। এরপরও পাওয়া যাচ্ছে না অনেক সময় ডলার। বাধ্য হয়ে আমদানি কমাতে হচ্ছে। বিইআরসি প্রতি মাসে একবার এলপিজির মূল্য সমন্বয় করছে। এলপিজির দাম বদলে যাচ্ছে, ডলারের দরের ওঠা–নামার কারণে পাইকারি পর্যায়ে।
এ বিষয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান নূরুল আমিন বলেন, ডলারের বাড়তি দামের অজুহাত ঠিক নয়। পর্যাপ্ত এলপিজি বাজারে আছে। বাড়তি মুনাফা করছেন সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা বলে। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে।
বাড়তি দাম ঢাকার বাইরেও
ব্যবসায়ীরা আইন মানছেন না
বিইআরসির কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের ডলারের ‘অজুহাত’ প্রসঙ্গে, ডলারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের দর ধরে হিসাব না করে আমদানি ঋণপত্রের গড় দর হিসাব করা হয়। সিলিন্ডার বিক্রি করা হচ্ছে নানা অজুহাতে বাড়তি দামে। বিইআরসি এটা রুখতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে চারটি কোম্পানিকে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, যে আইন মানছেন না দেশে ব্যবসায়ীরা, এলপিজি খাত তার প্রমাণ। বিইআরসি বাজার প্রতিযোগিতামূলক করতে নির্ধারিত দামে বিক্রি করায় আগ্রহী কোম্পানিকে নতুন করে লাইসেন্স দিতে পারে।