সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কী পরিবর্তন আনছে
কয়েক মাস ধরে সৌদি আরব ও ইসরাইল নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করে আসছে যার নেপথ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে তার মিত্র এই দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক প্রধান অগ্রাধিকার। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এটিকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এদিকে বছরের পর বছর শত্রুতার পর ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপন প্রক্রিয়ার মধ্যে এমন চুক্তির কথা আলোচনায় আসায় তা মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি সামনে এনেছে।
বুধবার, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রের ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টায় সৌদি আরব এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন আমরা আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছি। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তিতে পৌঁছতে কী কী বিষয় গুরুত্বপূর্ণ- এই প্রশ্নে মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, এক্ষেত্রে ফিলিস্তিন ইস্যুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা আমাদের সমাধান করতে হবে। আশা করি, আমরা এমন এক জায়গায় পৌঁছাতে পারব যা ফিলিস্তিনিদের জীবনকে সহজ করবে। ওই সাক্ষাৎকার মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, যদি ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হয়ে যায় তাহলে সৌদি আরবও তা চাইবে।
সৌদি আরবের শর্ত কী?
সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি চায়। এতে মার্কিন অস্ত্র বিক্রিতে কম নিষেধাজ্ঞা এবং দেশটির নিজস্ব বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি বিকাশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চায় রিয়াদ। সৌদি আরব আরও বলছে, যেকোনো চুক্তির জন্য একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনে বড় অগ্রগতির প্রয়োজন হবে। তবে এটি ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ধর্মীয় ও চরম ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী সরকারের জন্য একটি কঠিন শর্ত।
সৌদি আরব ২০০২ সালে আরব শান্তি উদ্যোগের একটি বড় উদ্যোক্তা ছিল। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমি থেকে ইসরায়েলের প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে শর্ত দেয় রিয়াদ। সৌদি আরব বলছে, এই উদ্যোগের মধ্যে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু এবং তাদের বংশধরদের দুর্দশার একটি ‘ন্যায্য সমাধান’ খুঁজে বের করা উদ্যোগ রয়েছে। যাদের অধিকাংশই প্রতিবেশী দেশগুলোর শরণার্থী শিবিরে বাস করে।
ইসরায়েল কি বলছে?
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার আশাবাদী সুরে বলেছেন, তিনি আশা করছেন শিগগিরই তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবেন। তিনি বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব পূরণ করা যেতে পারে। আমি মনে করি অবশ্যই একটি সম্ভাবনা আছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল-মে মাসের দিকে আমরা এমন একটি পর্যায়ে যেতে সক্ষম হব যেখানে একটি চুক্তির বিবরণ চূড়ান্ত হবে। সৌদি আরবের পারমাণবিক কর্মসূচি গড়ে তোলার আকাঙ্খা কোনো বাধা বলে মনে হচ্ছে না। ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হ্যানেগবি বলেলেন, অনেক দেশ বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প পরিচালনা করে। এটি এমন কিছু নয় যা তাদের বা তাদের প্রতিবেশীদের জন্য বিপজ্জনক। যাই হোক, ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) ‘ছাড়’ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া কী?
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে রাজি করানোর জন্য সৌদি আরব ২০২১ সালে সাহায্য শূন্যে নেমে যাওয়ার পরে তাদের আর্থিক সহায়তা আবার শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছে। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল রিয়াদে গিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সৌদি আরবকে সম্মতি দেওয়ার বিনিময়ে তাদের নিজস্ব শর্তের জন্য চাপ দেয়। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে মার্কিন কনস্যুলেট আবার চালু করা যা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৯ সালে বন্ধ করে দেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি একক প্রতিনিধিত্বকে সমর্থন করতে বলেছে। অন্যান্য শর্তের মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে আরও নিয়ন্ত্রণ দেওয়া এবং অবৈধ ইসরায়েলি ফাঁড়িগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া।
ইরান কি বলেছে?
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো চুক্তি না করার বিষয়ে সৌদি আরবকে সতর্ক করেছেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এক সংবাদ সম্মেলনে রাইসি বলেন, এই ধরনের চুক্তি ফিলিস্তিনি জনগণ এবং তাদের প্রতিরোধের পিঠে ছুরিকাঘাতের সামিল। তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই ইসলামিক দেশগুলো ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশার পবিত্র নীতি পরিত্যাগ করতে রাজি নয়। কারণ পবিত্র নগরী জেরুজালেমের মুক্তি সকল মুসলমানের বিশ্বাসের মূলে রয়েছে।