বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » প্রযুক্তি » রোগ নির্ণয় করবে স্মার্টফোন

রোগ নির্ণয় করবে স্মার্টফোন 

Smartphone

প্রযুক্তি ডেস্ক :  প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নানা অনুষঙ্গ, যাদের মূল লক্ষ্যই হলো মানুষের জীবনযাত্রাকে উন্নত ও সহজ করা। বর্তমান প্রযুক্তির প্রথম সারিতে থাকা যন্ত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্মার্টফোন। তবে বর্তমানে স্মার্টফোন শুধু কল করা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। অচিরেই এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে চোখের নানা অসুখ। এমনই দাবি করেছে ভারতীয় একদল গবেষক। অন্যদিকে জাপানি প্রতিষ্ঠান তোশিবা নতুন একটি শ্বাসগ্রহণ যন্ত্র উন্মোচন করেছে, যার মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে নির্ণয় করা যাবে অনেকগুলো রোগের উপস্থিতি। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

ভারতীয় একদল চক্ষু বিশেষজ্ঞ দাবি করেছে, তারা স্মার্টফোনকে চক্ষু পরীক্ষায় ব্যবহৃত অপথালমোস্কোপে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন, যার মাধ্যমে রেটিনার উচ্চমানের ছবি তোলা সম্ভব হবে। এ ছবিগুলো দেখেই চক্ষু বিশেষজ্ঞরা সংশ্লিষ্ট রোগ শনাক্ত করতে পারবেন।

তবে স্মার্টফোনকে অপথালমোস্কোপে পরিণত করাটা তেমন ব্যয়বহুল নয় বলে দাবি করেন যন্ত্রটি প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত সেনকারা আই হসপিটাল। তাদের হিসাবে স্মার্টফোনকে অপথালমোস্কোপে পরিণত করতে এর ক্যামেরার সঙ্গে অতিরিক্ত একটি এলইডি বাল্ব যোগ করতে হবে, যা পরবর্তীতে তারের মাধ্যমে স্মার্টফোনের ব্যাটারির সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এ সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটিতে মাত্র ৩৫ থেকে ৫০ রুপি খরচ হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ব্যবস্থাটি করা হলে যন্ত্রটি দিয়ে তোলা ছবি নিরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হবে চক্ষু বিশেষজ্ঞদের কাছে।

নতুন যন্ত্রটি তৈরি সম্পন্ন হলেও এর ব্যবহারের ব্যাপকতা নিয়ে এখনো সংশয়ে সংশ্লিষ্টরা। যন্ত্রটি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ড. দেভইয়াশ কে. মিশ্রা জানান, এখনই রোগীরা নিজস্বভাবে এটি ব্যবহার করবেন কিনা, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। তবে গ্রামীণ পর্যায়ে রোগীদের চক্ষু রোগ শনাক্ত করতে যন্ত্রটি বেশ সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি। কেননা ভারতের গ্রামগুলোর বেশির ভাগই চক্ষু রোগ নির্ণয়ের জন্য উচ্চমানের প্রযুক্তির বেশ অভাব রয়েছে। নতুন যন্ত্রটির মাধ্যমে তোলা ছবি দেখে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা রোগের গতিপ্রকৃতি সহজেই শনাক্ত করতে পারবেন বলে আশা করছেন মিশ্রা। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে চোখের টিউমার, গ্লুকোমা ও অন্যান্য রোগ। তবে ভালোভাবে চোখের রোগ শনাক্ত করার জন্য কমপক্ষে ৫ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা-সংবলিত স্মার্টফোন প্রয়োজন হবে বলে জানান মিশ্রা।

সেনকারা চক্ষু হাসপাতালের নতুন যন্ত্রটি তৈরির পেছনে ড. মিশ্রা ছাড়াও ছিলেন ড. মাধু কুমার, ড. রাজেশ আর, ড. শ্রীনিভাশুলু রেড্ডি ও ড. গ্লাডস রড্রিগেজ। দলটির কার্যক্রম পরিচালনার মূল দায়িত্বে ছিলেন ড. মাহেশ পি সানমুগাম।

স্মার্টফোন ও অপথালমোস্কোপের এ সংমিশ্রণ অনেক আগে থেকেই তৈরির চেষ্টা করছিলেন সানমুগাম। এ লক্ষ্যে ২০০২ সালে হ্যান্ডিক্যামের মাধ্যমে প্রথম চোখের ছবি তোলার চেষ্টা করেন তিনি। যদিও এর সক্ষমতা ছিল খুবই কম। কিন্তু প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে অনেক স্মার্টফোনেই রয়েছে ২১ মেগাপিক্সেল পর্যন্ত ক্যামেরা।

মিশ্রা আরো জানান, নতুন যন্ত্রটি আবিষ্কারের পরও তারা অপথালমোস্কোপের ব্যবহার বন্ধ করতে পারবেন না। তবে এর মাধ্যমে গ্রামীণ রোগীদের দুরারোগ্য চক্ষু রোগ শনাক্তকরণ আরো সহজ হবে। যেখানে চক্ষুরোগ শনাক্ত করার উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্র নেই, সেখানকার রোগীদের চোখের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সহায়তায় অতি দ্রুত শহরের বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো সম্ভব হবে বলে দাবি করেন তিনি।

ভারতীয় চিকিত্সকদের চক্ষুরোগ শনাক্তকরণ যন্ত্র তৈরির সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে জাপানি ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা কোম্পানি তোশিবা নতুন একটি শ্বাসগ্রহণ যন্ত্র বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে। যন্ত্রটিতে একজন গ্রাহক একবার শ্বাস নিলে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে বেশ অনেকগুলো রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হবে। গত মঙ্গলবার কোম্পানিটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

তোশিবা আরো জানায়, শ্বাসগ্রহণ যন্ত্রটির আকার একটি ছোট ডিশওয়াশারের সমান। এতে যুক্ত থাকবে একটি নজল। যেখানে রোগীদের কয়েকবার শ্বাস নিতে হবে। এরপর যন্ত্রটি রোগীর শ্বাস থেকে বিভিন্ন গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত করবে। যার মাধ্যমে তার শরীরে থাকা নানা ধরনের রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হবে। যার মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিকস, পাকস্থলীর সমস্যা ও নানা ধরনের রোগ।

তোশিবার বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, রোগীর শ্বাস থেকে প্রাপ্ত গ্যাসগুলোয় যন্ত্রটি থেকে বেশ কিছু রশ্মি বিচ্ছুরণ করা হয়। যার মাধ্যমেই বিভিন্ন রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া সম্ভব হয়।

পরীক্ষার আওতায় থাকা গ্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যালডিহাইড, মিথেন ও অ্যাসিটোন। যাদের প্রতিটিই বিভিন্ন ধরনের রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দেয়। যন্ত্রটির মাধ্যমে রোগ শনাক্তকরণের আওতা অচিরেই আরো বৃদ্ধি করা হবে বলে জানায় তোশিবা। আগামী বছরের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে কোম্পানিটি।

 

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone