বাস-পিকআপভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১৪ ফরিদপুর
বাস-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন, ফরিদপুরের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কানাইপুরের তেতুলতলা নামক স্থানে মঙ্গলবার সকাল পৌনে আটটার দিকে। আরও তিনজন ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। আহতদের ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে দুর্ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এছাড়া হাইওয়ে পুলিশও আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ সুপার শাহিনূর আলম খান। এদিকে, নিহতদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ৫ লাখ, আহতদের ৩ লাখ টাকা দেবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিহতদের লাশ দাফনে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে দুপুরে নিহতদের লাশ বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গায় পাঠানো হয়।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আলফাডাঙ্গা থেকে সকালে সিয়াম-সিনমুন নামের একটি পিকআপে করে ১৭ জন যাত্রী ফরিদপুরে আসছিলেন। পথিমধ্যে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর শহরতলীর কানাইপুরের তেতুলতলা নামক এলাকায় ঢাকা থেকে মাগুরাগামী একটি দ্রুতগামী বাস পিকআপটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই ১১ জন নিহত হন। পরে হাসপাতালে নেবার পর মারা যান আরো ৩ জন। নিহতদের মধ্যে ৭ জন নারী, ৪ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু রয়েছে।
দুঘর্টনার খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। ঘটনাস্থল থেকে ৬ জনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরো দু’জন। নিহত ১৪ জন হলেন আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের সওরাকান্দা গ্রামের তারা মোল্লার পুত্র রাকিব হোসেন মিলন মোল্লা (৪৫), তার স্ত্রী সুমি বেগম (৩০), শিশু পুত্র রোহান (৬), আরেক শিশুপুত্র আবু সিনান (৩), মা মর্জিনা বেগম (৭০), আলফাডাঙ্গার হিদাডাঙ্গা গ্রামের মৃত আলেক সরদারের স্ত্রী শুকুরুন্নেছা (৯৫), আলফাডাঙ্গা উপজেলার চর সরাইল গ্রামের তবিবুর খান (৫৫), আলফাডাঙ্গার বেজিডাঙ্গা গ্রামের সোনিয়া বেগম (৩৫), জাহানারা বেগম (৪৫), শিশু নুরানী (৮), হিদাডাঙ্গা গ্রামের কোহিনুর বেগম (৬০), বোয়ালমারীর কুমড়াইল গ্রামের ইকবাল শেখ (৩০) ও বোয়ালমারীর শেখর ইউনিয়নের কুমড়াইল গ্রামের সুর্য্য বেগম (৪৫) এবং পিকআপের ড্রাইভার আলফাডাঙ্গার কুসুমদি গ্রামের নজরুল ইসলাম (৪০)। দুর্ঘটনার পর ঘাতক বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
দুর্ঘটনাস্থলে থাকা কয়েক ব্যক্তি জানান, পিকআপের ড্রাইভার গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে বাসটির সামনের অংশে আঘাত করে। এতে পিকআপটির সামনের অংশ বাসের নিচে চলে যায়। পিকআপে থাকা যাত্রীদের কয়েকজন ছিটকে পাকা সড়কে পড়ে নিহত হন। এসময় ঘাতক বাসটির চালক ও হেলপার অন্য একটি গাড়িতে ওঠে পালিয়ে যায়।
নিহত রাকিব হোসেন মিলনের মামাতো ভাই নুরুজ্জামান খসরু জানান, নিহত রাকিব হোসেন মিলন ঢাকায় একটি মন্ত্রণালয়ে লিফটম্যান হিসাবে কাজ করতো। সে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত তার পবিারসহ এলাকার দরিদ্র কয়েকজনের জন্য ত্রাণের ঢেউটিন বরাদ্দ করায়। সেই টিন আনতে গিয়েই তারা এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন।
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার সুভাষ বাড়ই জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তারা দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার কাজে অংশ নেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১১ জনের লাশ এবং কয়েকজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ উদ্ধার কাজে অংশ নেন। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিতে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, নিহতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা এবং আহতদের ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি লাশ দাফনের জন্য নগর ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।