হালাল উপার্জনের অর্থ দিয়ে হজে যেতে হবে জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
হজ একটি ফরজ বিধান ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মাঝে। হজের মাসের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায় শাওয়াল মাস থেকেই। যার আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্য আছে তার ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে। শুধু পুরুষই নয়; মহিলাদের ওপরও হজ ফরজ করা হয়েছে। হালাল উপার্জনের অর্থ দিয়ে হজে যেতে হবে। কারো অর্থ আত্মসাৎ বা মানুষের হক নষ্ট করে হজে গেলে হজ হবে না। সুদ-ঘুষ খেয়ে হজে গেলেও হজ হবে না। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে খতিব এসব কথা বলেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিন গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ একটি ফরজ বিধান। শাওয়াল মাস থেকেই হজের মাসের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। যার আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্য আছে তার ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে। শুধু পুরুষই নয়; মহিলাদের ওপরও হজ ফরজ করা হয়েছে। খতিব বলেন, আল্লাহ এই জমিন সৃষ্টির পরেই পবিত্র বায়তুল্লাহর ঘর তৈরি করেছেন। ইব্রাহিম আ. বায়তুল্লাহ থেকে আজান দিয়েছেন। রুহের জগতে যারাই এই আজান শুনেছেন তারাই পবিত্র হজ করার সুযোগ পাবেন। বিশ্বের সকল হাজীগণই একই রকম এহরামের কাপড় পড়ে লাব্বাইক আল্লাহুম্মাহ লাব্বাইক বলে ওকোফে আরাফায় হাজির হবেন। হালাল উপার্জনের অর্থ দিয়ে হজে যেতে হবে। কারো অর্থ আত্মসাৎ বা মানুষের হক নষ্ট করে হজে গেলে হজ হবে না। সুদ-ঘুষ খেয়ে হজে গেলেও হজ হবে না। খতিব বলেন, রাসূল (সা.)-এর বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ কিয়ামত পর্যন্ত গুরুত্ব বহন করবে। বিদায় হজের ভাষণে রাসূল (সা.) অমুসলিমদের স্বার্থ রক্ষায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। অমুসলিমদের কষ্ট দেয়া যাবে না। অমুসলিমদের কষ্ট দেয়া কোনো মুসলমানের কাজ হতে পারে না। খতিব বলেন, সামর্থ্য থাকার পরেও যদি কেউ হজে না যায় তাকে আল্লাহর কাছে দায়ী থাকতে হবে। আল্লাহ সবাইকে ছহিভাবে হজ্জে মাবরুর নছিব করুন। আমিন।
ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, আমাদের মাঝ থেকে রমজান মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন আমাদের উচিত রমজানে যে সকল নেক আমল করেছি তা বহাল রাখা। কারণ এই ফেৎনার জমানায় নেক আমলের উপর অটল থাকা মানে সাহাবাদের যুগের পঞ্চাশ জনের নেক আমলের সমপরিমান সাওয়াবের যোগ্য হওয়া। ইবনে মাজাহ ও তিরমিজি শরীফের বর্ণনায় এসেছে: হযরত আবু সা’লাব আল খুশানী (রাদি.) বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন: তোমাদের পরে আসবে ধর্যের যুগ। যখন নেক আমলের উপর অটল থাকা হাতে আগুনের অঙ্গার রাখার সামতুল্য। এই কঠিন মুহূর্তে যারা নেক আমলের উপর অটল থাকবে তাদেরকে পঞ্চাশ জন ব্যক্তির সমপরিমাণ প্রতিদান প্রদান করা হবে। আবু দাউদ শরীফের বর্ণনায় এসেছে যে সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ আমাদের যুগের পঞ্চাশ জন নাকি তাদের যুগের পঞ্চাশ জন? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : বরং তোমাদের যুগের পঞ্চাশ জন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন: হে মানুষ সকল তোমরা সাধ্যমত নেক আমল কর। কেননা তোমরা নেক আমল করতে থাকলে তা সাওয়াব প্রদানে আল্লাহ ক্লান্ত হন না। কিন্তু তোমরা যখন নেক আমল বাদ দাও তখন আল্লাহ তোমাদেরকে সাওয়াব প্রদান করেন না। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল তাই যা কম হোক কিন্তু সর্বদা আমল করা হয়। রমজানে বা বিশেষ বিশেষ সময় কিছু নেক আমল করলাম তাতেই যথেষ্ট না বরং তা সর্বদা আমলে রাখতে হবে। তাহলেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুসংবাদের অধিকারী হওয়া যাবে। আল্লাহ সবাইকে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।
গাজীপুরের টঙ্গি পূর্ব আরিপুর সরকার বাড়ি ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক জুমা-পূর্ব বয়ানে বলেন, ‘হজের কয়েকটি মাস আছে সুপ্রসিদ্ধ’। সূরা বাকারা-১৯৭।
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলেন, হজের মাসসমূহ হচ্ছে শাওয়াল, যিলকদ ও জিলহজ। কেউ যদি শাওয়াল মাসে হজের নিয়াতে ইহরাম বাঁধে তাহলে ওই ব্যক্তি উক্ত ইহরামে হজ করতে পারবে। তবে তা মাকরুহ হবে।
হযরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত যথা : কালিমা, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাশ্য নাই, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল, নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ আদায় করা এবং রমজান মাসে রোজা রাখা।
যাদের উপর হজ ফরজ তাদেরকে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, হজ তাড়াতাড়ি আদায় কর, কেননা তোমাদের কারো যানা নেই যে, পরবর্তীতে সে কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। হজের বিধান হযরত আদম (আ.) হতে চলে আসছে
যেদিন বাইতুল্লাহর ভিত্তি রাখা হয় সে দিন হতেই এর তাওয়াফ ও যিয়ারত শুরু হয়েছে, কোনো দিন বন্ধ হয়নি। কোনো দিন হবেও না। আল্লার নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আ.) বাইতুল্লাহ পুনঃনির্মাণ করেন। তুমি মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা করে দাও।
ইরশাদ হচ্ছে : লোক সমাজে হজ্জের ঘোষণা করে দাও তারা পদব্রজে এবং দুর্বল উষ্ট্রী চড়ে দূরদুরান্ত হতে এসে হাজির হবে (সূরা হজ্জ-২৭)।
হজের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে হজ করলো এবং হজ সম্পন্ন কালে স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকলো ও গুনাহ করলো না, সে নবজাতক শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, “কবুল হজের বদলা একমাত্র জান্নাত।” সহি ইবনে খুজাইমাহ।
সুনানে নাসাঈ শরীফে হাদিস বর্ণিত হয়েছে : তোমরা হজ ও ওমরাহ একের পর এক আদায় করো কেননা হজ ও ওমরাহ, গুনাহ ও দরিদ্রতা দূর করে দেয়।
খতিব বলেন, হজ ফরজ হওয়ার বিধান কোরআনের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা: মানুষের মধ্যে যার সেখানে (বাইতুল্লায়) যাওয়ার সামার্থ রয়েছে আল্লাহর উদ্দেশে ওই গৃহে হজ করা তার উপর ফরজ এবং কেউ তা প্রত্যাখ্যান করলে সে জনে রাখুক নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাস ঘাতকের মুখাপেক্ষী নয়। সূরা আল ইমরান-৯৭।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি পেতে হলে কোরআন ও সুন্নাহের অনুসরণের বিকল্প নেই। দুনিয়ার মহব্বত সকল পাপের মূল। দুনিয়ার লোভ লালসার কারণে মানুষের নেক আমল নষ্ট হয়ে যায়। শয়তান মানুষের নিকট দুনিয়াকে সজ্জিত করে দেখায় আর মানুষ দুনিয়ার অর্থ সম্পদ, নারী গাড়ি, ঘর বাড়ি ও সম্মান মর্যাদার মোহে পড়ে অবুঝ শিশুর ন্যায় দুনিয়া নামক ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামান্য শান্তির আশায় পরকালের স্থায়ী অনাবিল শান্তি হারিয়ে ফেলে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিতেছ। অথচ আখিরাতের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। (সূরা আ’লা )। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দুনিয়ার মহব্বত সমস্ত অপকর্মের উৎস। (আল হাদিস)। খতিব বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ দুনিয়ার মহব্বত ভালোবাসা, লোভ লালসা, সম্মান মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে পরস্পরে মারামারি কাটাকাটি, সন্ত্রাসী রাহাজানি, জুলুম অত্যাচার, নির্যাতন নিপীড়ন ও দুর্নীতি, হক তলফী এমনকি অপর ভাইকে অন্যায় ভাবে হত্যা পর্যন্ত করতে দ্বিধাবোধ করে না। যার কারণে দুনিয়া থেকেই জাহান্নামী সাব্যস্ত হয়ে যায়। অতএব আসুন দুনিয়ার মহব্বত, লোভ লালসা, যশ খ্যাতি, অহংকার তাকাব্বুরি ও সর্বপ্রকার গুনাহের কাজ পরিহার করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে জীবন গড়ি। তাহলেই দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি আসবে। আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করুন। (আমিন)।