নৌকা ডুবল অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে
ঘূর্ণিঝড় রিমেলের কারণে শনিবার রাতেই বাগেরহাটের মোংলায় জারি করা হয় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত। উপকূল জুড়ে আতংক দেখা দিয়েছে । প্রস্তুত রাখা হয় শত শত আশ্রয় কেন্দ্র। সাগর- নদী উত্তাল রয়েছে । ঝড় মোকাবেলায় করনীয় সব কিছু করতে ঘুম নেই সংশ্লিষ্টদের। অথচ এসবের থোড়াই কেয়ার নদীতে চলাচলকারী ট্রলার মাঝিদের।
৭ নম্বর বিপদ সংকেতের মধ্যেই রোববার (২৬ মে) ভোর থেকে যাত্রী নিয়ে বাগেরহাটের মোংলা নদীতে অবিরাম ছুটছে তাদের ট্রলার। তবে ট্রলারে যাত্রী বহনে নির্দিষ্ট সংখ্যার নিয়ম থাকলেও চারগুন যাত্রী নিয়ে পারপার করেছেন তারা। অন্তত ৮০ জন যাত্রী নিয়ে নদীর ওপার থেকে এপারে ভিড়তেই ডুবে যায় একটি ট্রলার। যেন তীরে এসে ডুবল তরী। রোববার (২৬ মে) সকাল ৯ টায় মোংলা নদীর ঘাটে এই দূর্ঘটনা ঘটে।
তবে নদীর পাড়ে ডুবে যাওয়ায় কিছু যাত্রী উঠে গেলেও অনেকের নিঁখোজের আশংকা করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারে নৌ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের ডুবুরি দল নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার ভোর থেকেই ট্রলারে করে শত শত যাত্রী পার হয়েছে। যার অধিকাংশই ইপিজেডের ‘ভিআইপি’ নামক একটি কারখানার কর্মরত শ্রমিক। এদিন প্রত্যকটি ট্রলারে ৭০ থেকে ৮০ জন যাত্রী ছিল। ট্রলার চালকরা ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই অতি মুনাফার লোভে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে নদী পার করছিলো। দূর্ঘটনার পর খবর পেয়ে ছুটে আসেন ডুবে যাওয়া ট্রলারে যাত্রীদের স্বজনরা। তারা এসময় পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে থাকা টোল আদায়ের কাউন্টার ভাংচুর চালায়। এ ঘটনার পর থেকে মোংলা নদীতে ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ঝড়ের মধ্যে ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের বিষয় জানতে চাইলে মোংলা নদী পারাপার ট্রলার মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম বাবুল বলেন, ‘যাত্রীরা লাফিয়ে লাফিয়ে ট্রলারে উঠে পড়লে আমাদের কি করার আছে, বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।
এদিকে ডুবে যাওয়া ট্রলারে থাকা যাত্রীদের অধিকাংশ বাগেরহাটের মোংলা ইপিজেডের ভিআইপি কারখানার শ্রমিক ছিলেন।
সাত নম্বর বিপদ সংকেতের মধ্যেও কারখানা খুলে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে, ভিআইপি কারখানার মানব সম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান দাবি করেন, ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি হওয়ার পরই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাহলে সকালে কেন শ্রমিক পার হচ্ছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘আমি মিটিংয়ে আছি। আপনারা যা লেখার লেখেন’
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, ঝড়ের মধ্যে কারখানায় যাওয়ার বিষয়ে ভিআইপির মিজান স্যার ফোন দিয়ে জোর করে তাদেরকে নিয়েছেন।
মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, ট্রলার দূর্ঘটনার পরপরই খোঁজ খবর রাখছি, কোনও যাত্রী নিখোঁজ আছে কিনা, সে বিষয়ে পৌরসভার সিসি ক্যামেরায় দেখা হচ্ছে।