বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » আগামী বাজেটে সংসার চালানোর খরচ আরও বাড়তে পারে

আগামী বাজেটে সংসার চালানোর খরচ আরও বাড়তে পারে 

দিশেহারা নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষ- মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে । আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ থাকছে না। উলটো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে রাজস্ব আয় বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তাতে সংসার খরচ আরও  বাড়তে পারে। প্রায় অর্ধশত পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট হার এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। পথের ভিখারি থেকে ধনিকশ্রেণির মানুষকেও ভ্যাটের ভার বইতে হবে। এ তালিকায় আছে মোবাইল ফোন, সিগারেট, আমসত্ত্ব, ফলের জুস, কোমল পানীয়, কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকস, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাল্ব প্রভৃতি। এছাড়া শূন্য শুল্কের শতাধিক পণ্যের ওপর এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। এতে ভোক্তা পর্যায়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

বর্তমানে আমাদের দেশে ৩৭ লাখ ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে বড় অংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির করদাতা। এ শ্রেণির করদাতাদের জন্য বাজেটে আয়কর খাতে ছাড় থাকছে না। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও আয়কর আদায়ের কথা চিন্তা করে বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। তবে করদাতা হয়রানি কমাতে আয়কর রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের বিধান বাতিল করা হচ্ছে।

করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়লে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী আয়করের আওতার বাইরে চলে যাবে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সেই সঙ্গে আনুপাতিক হারে মানুষের আয়ও বেড়েছে বলে এনবিআর মনে করে। তাই সীমা বাড়ানোকে যৌক্তিক মনে করে না সংস্থাটি। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এনবিআর কখনোই টানা করমুক্ত আয়ের সীমা কমায়নি। সাধারণত ২-৩ বছর বিরতিতে আয়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। ২০২০-২১ সালে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা হয়।

অবশ্য বিত্তশালীদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায়ের পদক্ষেপ থাকছে বাজেটে। বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ রয়েছে। বছরে সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় থাকলে ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। এটিকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। বছরে সাড়ে ৪৬ লাখ টাকার বেশি থাকলে ৩০ শতাংশ আয়কর দিতে হবে।

অন্যদিকে রাজস্ব আয় বাড়াতে পরোক্ষ কর (আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট) খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পরোক্ষ করের হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভাব সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষের ওপর পড়ে। পথের ভিখারি থেকে ধনিকশ্রেণি-সব মানুষকে পরোক্ষ কর দিতে হয়। আসন্ন বাজেটে স্থানীয় শিল্পের কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা সংকুচিত করে আনা; সিগারেট এবং মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। বর্তমানে মোবাইল ফোনে কথা বলায় ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত আছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। এর সঙ্গে ভোক্তাদের এক শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। আসন্ন বাজেটে আরও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে মোবাইল সেবার দাম বাড়তে পারে।

এক-কথায়  বলা যায়, একজন ভোক্তা বর্তমানে মোবাইল ফোনে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ৮৩ টাকার কথা বলতে পারেন। বাকি ২৭ টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক হিসাবে কেটে নেয় মোবাইল অপারেটরগুলো। পরে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। মোবাইল সেবার ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে ভোক্তারা ৭৮ টাকার কথা বলতে পারবেন। একইভাবে ইন্টারনেট খরচ বাড়বে।

আমরা অবসরে পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর জন্য অনেকে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে ঘুরতে যান। রাজস্ব আয় বাড়াতে সেখানেও হাত দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে প্রবেশে এবং রাইডে চড়তে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত আছে। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে পার্কে ঘোরার খরচ বাড়বে। এছাড়া প্রতিবছরের মতো এবারও সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এতে ধূমপায়ীদের পকেট খরচ বাড়বে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোমল পানীয়, কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকস, ফলের জুস, আমসত্ত্বের দাম বাড়তে পারে। কারণ, সরবরাহ পর্যায়ে এসব পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। এটি বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।

অন্যদিকে আইএমএফ-এর পরামর্শে কর ব্যয় কমিয়ে আনতে আমদানি শুল্ক খাতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শূন্য শুল্কহারবিশিষ্ট শতাধিক পণ্যের ওপর এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। এ তালিকায় আছে চাল, গম, ভুট্টা, সরিষা বীজ, পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েল, সানফ্লাওয়ার বীজ, তুলা বীজ, বিভিন্ন শাকসবজির বীজ, ক্রুড অয়েল, সার, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিটুমিন, কয়লা, জিপসাম, ভিটামিন, ইনসুলিন, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যক ওষুধ এবং ভ্যাকসিন ও ওষুধের কাঁচামাল, বিভিন্ন ধরনের দরকারি রাসায়নিক ইত্যাদি। বর্তমানে ৩৩৫টি আইটেমের পণ্য আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় না।

এক শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে বাজারে সেসব পণ্যের দাম বাড়বে না বলে মনে করছে এনবিআর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআর-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিত্যপণ্য রাখতে শুল্কছাড় বা শূন্য শুল্ক রয়েছে। এছাড়া বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা, শিল্পের প্রসার, রপ্তানি পণ্যের বাজার টেকসই করা এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় অনেক পণ্যে শুল্কহার শূন্য রাখা হয়। রাজস্ব আয় বাড়াতে এবং আইএমএফ-এর ঋণের শর্ত পূরণে শূন্য শুল্কের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের বিকল্প নেই।

Screenshot_3

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone