বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Monday, December 23, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » গিলে খাবে রামগতি কমলনগর ধেয়ে আসছে মেঘনা

গিলে খাবে রামগতি কমলনগর ধেয়ে আসছে মেঘনা 

Aideshaisomoy

লক্ষ্মীপুরের রামগতি কমলনগরের মেঘনা নদীর পাড় ভাঙন রোধে তিন যুগ ধরে টেকসই বাঁধ না থাকায় ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না। কাজ বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানগুলো পালিয়েছে।

 

মেঘনা নদীর ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে গত ৫ বছরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। শুকনো মৌসুমেও ভাঙছে নদীর পাড়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু সংকটের অজুহাত দেখিয়ে একাধিকবার নদীর তীররক্ষা বাঁধের কাজ বন্ধ হয়েছে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বরাদ্দ থাকলেও টাকা ছাড় না পাওয়ায় কাজ করা যাচ্ছে না।

দুই উপজেলার ১৫টি পয়েন্টে শুকনা মৌসুমেও চলছে মেঘনার ভাঙন। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরের কয়েক লাখ মানুষের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জুনে ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এরপর ৯৯ প্যাকেজে ভাগ করে একই বছরের আগস্টে প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রথম পর্যায়ে ২৬টি প্যাকেজে ১৫ জন ঠিকাদারকে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ দেয়া হয়। এখনও কাজ চলছে।

৯৬ কিলোমিটার বন্যা প্রতিরোধ বেড়িবাঁধ থাকলেও প্রায় ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। সরকারি হিসাবে ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত দুই উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসতভিটা হারিয়েছে। তবে এ সংখ্যা দ্বিগুণ বলে দাবি স্থানীয়দের। এ সময়ে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। এছাড়া চরকালকিনি ও মাতাব্বর হাটসহ অন্তত ৩৫টি হাট-বাজার, ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনায় বসতভিটা হারিয়ে অন্যের জমিতে খুপরি ঘর করে আশ্রয় নিয়েছেন এক ব্যক্তি। এরকম শত শত মানুষ নিজের বসতভিটা হারিয়ে অন্যের জায়গায় উদ্বাস্তু হয়ে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ৯ জানুয়ারি কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার মাধ্যমে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে কাজের উদ্বোধন করেন। তখন ১৩ জন ঠিকাদার কাজ শুরু করেন। তবে মে মাসে বালুসংকট দেখিয়ে বাঁধের কাজ বন্ধ করে দেন তারা। বালুসংকট দূর করে জুনের শুরুতে আবারও শুরু হয় বাঁধের কাজ। তবে জুলাইয়ে ফের কাজ বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর ডিসেম্বরের শুরুতে ২৬ জন ঠিকাদারের মধ্যে ৮ জন নামমাত্র কাজ শুরু করলেও তা চলছে খুঁড়িয়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত এক বছরেও বাঁধ নির্মাণ কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ভাঙনের কবলে পড়েছে সাহেবের হাট, পাটওয়ারীর হাট, চরফলকন, মাতব্বর হাট, লুধুয়া, বাংলাবাজার, আসলপাড়া, গাবতলী ও বড়খেরীসহ ১৫টি এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা।

কমলনগর উপজেলার লুধুয়ার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির অভিযোগ করে বলেন, ‘কাজ শুরুর বছর পার হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। শুকনা মৌসুমেও ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। সব সময় আতঙ্কে থাকি। প্রতিদিন নতুন করে ভাঙছে একের পর এক বসতভিটা। অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছেন ঘরবাড়ি। এর সঙ্গে শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও যাচ্ছে মেঘনার গর্ভে।’

তিন যুগ ধরে টেকসই বাঁধ না থাকায় ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ কবিরের। বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না। কাজ বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানগুলো পালিয়েছে।

পর্যাপ্ত বালু থাকলেও কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ জেলা পরিষদের সদস্য ও রামগতি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিনের। তার দাবি, বালু সংকটের অজুহাতে কাজ হচ্ছে না। অথচ পর্যাপ্ত বালু রয়েছে। গত পাঁচ বছরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বসতবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউ এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে না। অথচ সরকারিভাবে বলা হচ্ছে ৫ বছরে ৫০ হাজার মানুষ বসতবাড়ি হারিয়েছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টেকের কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘বালু সংকট কাটিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু হলেও ফের একই সংকটে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কখন কাজ পুরোদমে শুরু করা হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ  বলেন, ‘বালু সংকটের কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে অর্থ সংকটও আছে। বাঁধ রক্ষার জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা ছাড় করা হয়নি। ফলে বারবার ঠিকাদারদের কাজ করতে নির্দেশনা দিলেও তা কাজে আসছে না।’

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone