মানুষের চাহিদা বাড়ছে কিন্তু কমছে ধৈর্য
প্রত্যেক মানুষ আলাদা। তাই কিছুটা মতপার্থক্য, কলহ, তর্কবিতর্ক—এগুলো থাকবেই। আবার ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হবে, সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকবে। কিন্তু পারিবারিক কলহ থেকে হত্যা, খুন—এ ধরনের বর্বরতা অবশ্যই আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।এককথায় বলা যায়, মানুষে মানুষে বন্ধন যেন হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ খুব আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। অর্থ-বিত্তের মোহে পড়ে যেকোনো নৃশংসতা ঘটিয়ে ফেলছে। এগুলো আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের পরিণতি।
তবে এসব যে রাতারাতি হয়েছে এমনটা নয়।
সাধারণ মানুষ বৈধ উপার্জনের অর্থ দিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটাতে বেগ পাচ্ছে। এটা তার মনের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে।
আরেকটি সমস্যা হলো সবাই এখন বুঝে-না বুঝে খুব বেশি করে ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা বলছে। ব্যক্তিস্বাধীনতা, স্বাতন্ত্র্যের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এটা যেকোনো বয়সে হতে পারে।
যে আদৌ বোঝে না স্বাধীনতা মানে কী, সে-ও স্বাধীনতা চায়। এ থেকে ঘটছে দ্বন্দ্ব।
আমাদের প্রত্যেককে ধৈর্য ধরা শিখতে হবে। এখন মানুষ রাতারাতি অনেক কিছু পেতে চায়। কিছু পেতে হলে তা পাওয়ার সামর্থ্য বা যোগ্যতা থাকতে হবে এবং কিছু সময়ও যে লাগবে সেটা আমরা মনে রাখছি না। বড়দের থেকে ছোটরাও এটা শিখছে। বড় হয়ে তারাও একই আচরণ করবে।
প্রতিটি সম্পর্কের অর্থ ও গুরুত্ব কী, সম্পর্ক কিভাবে রক্ষা করতে হয়—এটা শুরু থেকে আমাদের শিখতে হবে। এ শিক্ষাটা যদি ছোটবেলা থেকে শিশুদের দিতে পারি তাহলে একসময় একটা পরিবর্তন আসবে। শিশু যেন একই সঙ্গে পরিবার, স্কুল-কলেজ, বয়োজ্যেষ্ঠদের থেকে এ শিক্ষাটা পায় সে ব্যবস্থা থাকতে হবে। বর্তমান সময়ে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এ নিয়ে আলোচনা করা দরকার। শিশুর সঙ্গে মা-বাবার এবং অন্য বড়দের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করতে হবে।
সবার ভালো থাকা নিশ্চিত করার জন্য মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকতে হবে। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে এবং প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে হবে। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে।
লেখক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান