যেভাবে বিজেপির উপহাসের জবাব দিলেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
কংগ্রেস নেতা রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বছরের পর বছর ধরে বিজেপির উপহাসের প্রধান লক্ষ্য ছিল। নির্বাচন থেকে শুরু করে যে কোনো জনসভা বা বৈঠক সব জায়গাতেই বিজেপির প্রধান আক্রমণ থাকে কংগ্রেসকে ঘিরে। কিন্তু উপহাসের শিকার সেই কংগ্রেস এবার একাই সেঞ্চুরি করেছে। আর এর জন্য রাহুল গান্ধী ও তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন।
সারাদেশে ভারত জোড়ো যাত্রার মাধ্যমে রাহুল গান্ধী তার প্রচারণা শুরু করেছিলেন। তার যাত্রার মাধ্যমে রাহুল দেশের জনগণের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন যার প্রতিফলন ঘটেছে ভোটে। এর আগে দেশের জনগণ রাহুলকে শুধু টিভির পর্দাতেই দেখত, কিন্তু তার এই ভারত জোড়ো যাত্রার মাধ্যমে তিনি পুরোপুরিভাবে দেশের সকল প্রান্তের মানুষের মন দখল করে নিয়েছিলেন যা বিজেপির ধারণাকে ভেঙে দিতে অবদান রাখে।
ভারত জোড়ো যাত্রাকালে রাহুল গান্ধীর কুকুরছানাকে আদর করার দৃশ্য, মানুষকে আলিঙ্গন করা এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের জনগণের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া, ছাত্র থেকে ট্রাকচালক সকল স্তরের মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ যা দেশের জনগণ আগে দেখেনি। এটি তার ভোটব্যাংকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তবে লোকসভা নির্বাচনে অনেকেই আশা করেছিলেন যে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কিন্তু যখন তিনি তা করেননি তখন নানারকম প্রশ্ন উঠেছিল। তার প্রতিক্রিয়ায় প্রিয়াঙ্কা বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এটি তার একটি সচেতন সিদ্ধান্ত। যদি তিনি এবং রাহুল উভয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তবে তারা একটি নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণার সাথে আবদ্ধ হবেন। কিন্তু তারা দুই ভাইবোনই একসঙ্গে প্রচারণায় আবদ্ধ হতে চাননি। তাই নিজেকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতেই তিনি নিজেকে মুক্ত রাখেন।
এবারের নির্বাচনে একজন প্রতিবাদী বক্তা হিসেবে প্রিয়াঙ্কার আবির্ভাব ঘটে। কথা দিয়ে তিনি দর্শকদের মোহিত করেন এবং তাদের সাথে মনের ভাব আদান প্রদান করেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অভিযোগের পাল্টা উত্তরও দেন।
কংগ্রেস জনগণের স্বর্ণ, মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেবে- মোদির এমন বক্তব্যের জেরে প্রিয়াঙ্কা বলেছিলেন, ভারত স্বাধীন হয়েছে ৭০ বছর। এর মধ্যে ৫৫ বছরই দেশ শাসন করেছে কংগ্রেস। এই ৫৫ বছরে কংগ্রেস কি জনগণের স্বর্ণ-মঙ্গলসূত্র কেড়ে নিয়েছে। বরঞ্চ যখন যুদ্ধ চলছিল, তখন ইন্দিরা গান্ধী দেশের জন্য তার স্বর্ণ দান করেছিলেন। আমার মা দেশের জন্য তার মঙ্গলসূত্র উৎসর্গ করেছিলেন।
তাদের ভাইবোনের এমন জনসংযোগ দেশের জনগণের কাছে বিজেপি যে ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল তা ভেঙে দিয়েছে এবং এর প্রেক্ষিতে শাসক দল তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
এবারের নির্বাচনে কংগ্রেস ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৩২৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যা ছিল সর্বকালের সর্বনিম্ন, বাকি ২১৫টি আসন মিত্রদের জন্য ছেড়ে দেয়। মল্লিকার্জুন খাড়গের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের এমন বড় সিদ্ধান্তের পেছনেও বড় ভূমিকা রাখেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা। এই সিদ্ধান্তেও উপকার পেয়েছে কংগ্রেস।
লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এখনও বিজেপির তুলনায় অর্ধেক আসন নিয়ে শেষ করতে পারে, কিন্তু গান্ধী ভাই-বোনরা তাদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে বেশ উজ্জ্বল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কংগ্রেসের সংবাদ সম্মেলনে মিস্টার গান্ধী দলের পারফরম্যান্সে বোন প্রিয়াঙ্কার অবদানের কথা তুলেও ধরেন।