কর্মসংস্থান সৃষ্টিই বড় চ্যালেঞ্জ মোদির
ভারতে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার গঠন করতে হচ্ছে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদিকে। আগামীকাল রোববার সন্ধ্যায় নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদি। জোট সরকার গঠনের পর বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের প্রচারের বড় ইস্যুও ছিল বেকারত্ব বৃদ্ধি। এই ইস্যুতে গত এনডিএ সরকার তেমন মনোযোগ না দেওয়ায় অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে এর যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু নরেন্দ্র মোদিকে পরবর্তী সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মোদি রাষ্ট্রপতি ভবনে দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তাকে এ আমন্ত্রণ জানান। এর আগে গতকাল সকালে রাজধানী দিল্লির পুরোনো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে এনডিএ জোটের নেতা নির্বাচিত হন মোদি। বৈঠকে এনডিএ জোটের নবনির্বাচিত আইনপ্রণেতারা অংশ নেন। এ বৈঠকের পরপরই প্রধানমন্ত্রী মোদি বিজেপির প্রবীণ দুই নেতা এলকে আদভানি ও মুরলি মনোহর যোশীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাদের বাসভবনে যান। এ ছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি। তাদের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে আশীর্বাদ নেন তিনি। খবর এনডিটিভির।
ভারতের বেসরকারি থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি অনুসারে, দেশটিতে বেকারত্বের হার চলতি বছরের এপ্রিলে বেড়ে ৮ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে, যা মার্চে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল। কভিড-১৯ মহামারির আগে এটি ৬ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। প্রতি বছরে ২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে মোদি প্রথম ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি সেই অঙ্গীকার পূরণ থেকে অনেক দূরে রয়েছেন। সর্বশেষ জানুয়ারি-মার্চের ত্রৈমাসিকের এক চিত্রে দেখা গেছে, শহুরে এলাকায় ১৫-২৯ বছর বয়সীদের বেকারত্বের হার আগের ত্রৈমাসিকের ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিজেপির মুখপাত্র গোপাল কৃষ্ণ আগরওয়াল বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা এটি বিবেচনায় নিয়েছি এবং সর্বোত্তম যা করা যায় তাই করছি।’ এ ছাড়া ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গ্রামীণ জীবনে দুর্দশা বেড়েছে। কেননা, এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবার হয়নি। ভারতের জনসংখ্যার সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ। ভারতে এখন মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের কাছাকাছি অবস্থান করছে, যা তুলনামূলকভাবে কম। তবে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ওপরে উঠে, এতে বিপাকে পড়েন দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সামনে মূল্যস্ফীতিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে মোদি সরকারের। ভারত-চীন উত্তেজনাময় সম্পর্কে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসাও একটি চ্যালেঞ্জ হবে। এ বিষয়ে বিশ্লেষক পারভীন ডন্থি বলেন, চীনের সঙ্গে টানাপোড়েনের কারণে ভারতের সমস্যা বহুগুণ বেড়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা অগ্রসর হয়নি এবং দুই দেশের মধ্যকার সরকার গঠনে একটি অচলাবস্থা রয়ে গেছে। তার মতে, নতুন সরকার অচলাবস্থা ভেঙে এই ফ্রন্টে অগ্রগতির জন্য চাপের মধ্যে থাকবে। এমনকি একই বিষয় মালদ্বীপের জন্যও প্রযোজ্য। এ ছাড়া তার মতে, দেশের ভেতরে কৃষক আন্দোলনসহ একাধিক অভ্যন্তরীণ সমস্যায়ও কাজ শুরু করতে হবে সরকারের। কেননা, এখন বিরোধী দলের অবস্থানও শক্ত হয়েছে। ফলে জনগণের আন্দোলনকে দমন করার মতো কেউ থাকবে না। কাজেই সামনে যে কৃষক আন্দোলন দেখা দেবে, তা মোকাবিলা করাটা অন্যতম চ্যালেঞ্জ হবে মোদি সরকারের।
এদিকে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পরবর্তী সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় মোদি রাষ্ট্রপতি ভবনে দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাকে এ আমন্ত্রণ জানান। মূলত নতুন সরকার গঠনের অনুরোধ জানাতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। এর আগে রাজধানীর পুরোনো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে নরেন্দ্র মোদিকে এনডিএ জোটের নেতা নির্বাচিত করা হয়। বৈঠকে এনডিএ জোটের নবনির্বাচিত আইনপ্রণেতারা অংশ নেন। গত ৪ জুন ভোট গণনা ও চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর শুক্রবার এনডিএ জোটের নেতাদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে বিজেপি দলীয় আইনপ্রণেতারাসহ অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) সর্বসম্মতিক্রমে নরেন্দ্র মোদিকে জোটের নেতা নির্বাচিত করে। বৈঠকে জোটের নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদির নাম প্রস্তাব করেন সদ্য বিদায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। পরে বিজেপির অন্যান্য নেতা ও জোটের সদস্যরা মোদিকে জোটের নেতা নির্বাচনে সমর্থন জানান। মোদির নাম প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে নবনির্বাচিত আইনপ্রণেতা ও জোটের জ্যেষ্ঠ নেতারা টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানান। বৈঠকে নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যে জোটের জয়গান শোনা যায়। সেই সঙ্গে বিরোধী দল কংগ্রেসকেও আক্রমণ করে বক্তব্য দিতে দেখা যায় তাকে। মোদি বলেন, কংগ্রেস গত ১০ বছরেও ১০০ আসন ছুঁতে পারেনি। এই নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে যত আসন পেয়েছে, কংগ্রেস এটিসহ গত তিন নির্বাচনেও সেই সংখ্যক আসন পায়নি। উল্লেখ্য, এবার কংগ্রেস ৯৯টি আসন পেয়েছে। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনে যথাক্রমে ৪৪ ও ৫২টি আসন পায় কংগ্রেস। নতুন জোট সরকার গঠনের পর সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে বেল মোদি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।