মোদির শপথ অনুষ্ঠানে ৮ হাজার অতিথি
টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আজ শপথ নেবেন বিজেপিনেতা নরেন্দ্র মোদি। আজ সন্ধ্যায় দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নেতাদের। সব মিলিয়ে এই শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা হবে আট হাজার। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার দিল্লিতে পৌঁছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদির শপথ অনুষ্ঠানে সবরকম নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিল্লিতে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আজ সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যদের শপথ পাঠ করাবেন। মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় ২৭-৩০ জন সদস্য থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হবেন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) সদস্য।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, মোদির শপথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের নেতারা অংশগ্রহণ করবেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, সিসিলিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আফিফ, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ কুমার জুগনাথ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কুমার ডাহাল এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী থেসেরিং তোবগে।
মোদির শপথগ্রহণকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানস্থল রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঁচ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ান ছাড়াও এনএসজি কমান্ডো, ড্রোন এবং স্নাইপার নিয়ে বহুস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। অনুষ্ঠান চলাকালে ৯ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত দিল্লিতে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হয়েছে। বিদেশি অতিথিদের হোটেলে বিশেষ প্রোটোকলসহ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় রয়েছে লিলা, তাজ, আইটিসি মৌর্য, ক্ল্যারিজেস এবং ওবেরয়ের মতো নামি হোটেলগুলো। অতিথিরা হোটেল থেকে অনুষ্ঠানস্থলে যাবেন নির্দিষ্ট পথে। এ সময় বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ এবং ডাইভারশন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া সীমান্তেও শুরু হয়েছে কড়া নজরদারি।
গত মঙ্গলবার ভারতের ৫৪৩টি আসনের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আগের দুই মেয়াদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া বিজেপি এবার লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের মধ্যে এককভাবে মাত্র ২৪০টি আসন পেয়েছে। সরকার গঠনের জন্য ২৭২ আসন প্রয়োজন। তবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৯৩টি আসন জিতেছে। জোটের মধ্যে বিজেপির পরে উল্লেখযোগ্য আসন রয়েছে কেবল টিডিপি এবং জেডিইউর। ফলে কিংমেকার হয়ে উঠেছেন চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতিশ কুমার। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট ২৩২টি আসন জিতেছে, এর মধ্যে এককভাবে কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি আসন।
এদিকে মোদির নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভায় চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) চারটি মন্ত্রণালয় পেতে যাচ্ছে। নির্বাচনে তারা অন্ধ্র প্রদেশে ১৬টি লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছে। আর ১২ আসনে জেতা নীতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) পাচ্ছে দুটি মন্ত্রণালয়। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের বৈঠকে গতকাল শনিবার দিনভর দেনদরবার করে নতুন মন্ত্রিসভার বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
টিডিপি থেকে মোদির মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে চলা সম্ভাব্য চার নেতার মধ্যে তিনজন হলেন- রামমোহন নাইডু, হরিশ বালযোগী এবং দগ্গুমালা প্রসাদ। চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি দুটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, দুটি প্রতিমন্ত্রী ও একটি স্পিকারের পদ চেয়েছিল। তবে তারা একজন পূর্ণ মন্ত্রীর পাশাপাশি দুজন প্রতিমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার পদ পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে এরই মধ্যে দলের নেতা ৩৭ বছর বয়সী কিনজারাপু রামমোহন নাইডুর নাম শোনা যাচ্ছে।
অন্যদিকে নীতিশ কুমারের দল জেডিইউ থেকে সম্ভাব্য মন্ত্রী হিসেবে দুজন জ্যেষ্ঠ নেতার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা হলেনÑ লাল্লন সিং ও রাম নাথ ঠাকুর। তবে তারা কোন কোন মন্ত্রণালয় পেতে যাচ্ছে তা এখনো জানা যায়নি। লোকসভা ভোটে লাল্লন সিং বিহারের মুঙ্গের থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। আর রাম নাথ ঠাকুর রাজ্যসভার বিধায়ক। তিনি শ্রী ঠাকুর ভারতরত্ন প্রাপ্ত কর্পুরী ঠাকুরের পুত্র।