বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » যে ভেলকিবাজিতে নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতেন মতিউর

যে ভেলকিবাজিতে নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতেন মতিউর 

image-823307-1719892985

ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমান সম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে দেখিয়েছেন ভেলকিবাজি। নিজের আয়কর ফাইল ‘ক্লিন’ রাখতে কৌশল হিসাবে সব সম্পদ করেছেন দুই পক্ষের স্ত্রী-সন্তান, ভাই ও স্বজনদের নামে।

 প্রথম পক্ষের ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব যখন শিক্ষার্থী তখনই তার নামে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। আটটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অর্ণবের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে তার আয়কর ফাইলে সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ২৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে আয়কর ফাইলে আয় দেখিয়েছেন ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

এদিকে মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীও সম্পদে পিছিয়ে নেই। হঠাৎ করেই গৃহিণী থেকে ব্যবসায়ী বনে যান তিনি। ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে ট্রেডিং ব্যবসায় ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়ে প্রথম আয়কর ফাইল খোলেন। কিন্তু এই টাকার উৎস উল্লেখ নেই। ২০১৩-১৪ সাল থেকে গৃহসম্পত্তি হিসাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ দেখানো শুরু করেন ফাইলে। বর্তমানে প্রায় ৩৮ কোটি টাকার সম্পদের মালিক শাম্মীর হাতে ও ব্যাংকে নগদ আছে প্রায় ২৭ কোটি টাকা। তবে প্রকৃতপক্ষে শিভলীর সম্পদও প্রায় শতকোটি টাকার। অর্ণব ও শিভলীর আয়কর ফাইল বিশ্লেষণ ও বাস্তবে দুজনের সম্পত্তির খোঁজ নিয়ে উল্লিখিত তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে বিনা ছুটিতে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকায় চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে পারেন মতিউর রহমান। এনবিআরের সদস্য পদ থেকে সরিয়ে সংযুক্তির পর আইআরডিতে যোগ দেননি। এমনকি তিনি ছুটির আবেদনও করেননি। দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, মতিউর রহমান নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের নামে সম্পদ করেছেন। কিন্তু তাদের সম্পদের উৎস খুঁজতে গেলেই মতিউর ফেঁসে যাবেন। এক্ষেত্রে নিজের অবৈধ সম্পদ বৈধ করার জন্য অন্যের নামে স্থানান্তর-রূপান্তর মাধ্যমে ভোগদখলে রাখার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা যাবে। সাবেক সংসদ-সদস্য শহিদুল ইসলাম পাপুল তার আত্মীয়স্বজনের নামে ১৩৪ কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। কিন্তু স্বজনদের সম্পদের উৎস খুঁজতে গিয়ে পাপুলের নাম জড়িয়ে যায়। একইভাবে মতিউর রহমানের স্ত্রী-সন্তানের সম্পদের উৎস খুঁজলেই মতিউরের পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

  ছেলে অর্ণবের ব্যবসায় বিনিয়োগ শতকোটি

আয়কর নথি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত আটটি কোম্পানির পরিচালক মতিউর রহমানের প্রথম পক্ষের ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব। যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করে দেশে ফেরা ছেলের বৈধ কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও তিনি এসব কোম্পানিতে কাগজে-কলমে বিনিয়োগ করেছেন ১১ কোটি ৫৮ লাখ ৩ হাজার ৪০০ টাকা। আটটির মধ্যে সাতটিই লিমিটেড কোম্পানি। এর মধ্যে শাহজালাল ইক্যুয়িটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডে ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার, অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেডে ৯ লাখ, ভীরগো কমিউনিকেশন লিমিটেডে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭০০, আইপি কমিউনিকেশন লিমিটেডে ২ লাখ ৬৬ হাজার, এনআরবি টেলিকম লিমিটেডে ৫০ হাজার, গ্লোবাল সুজ লিমিটেডে ১৬ লাখ ২৫ হাজার, লাকিলি বিল্ডার্স লিমিটেডে ৩০ লাখ এবং ওয়ান্ডার পার্ক নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তার ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে তার ২ কোটি ১২ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তিনি ঋণ দিয়েছেন ৯ কোটি টাকা। আয়কর ফাইল অনুযায়ী তার মোট ২৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। তবে মতিউরের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছে, ছেলের নামেই শতকোটি টাকার সম্পদ করেছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে এই তথ্যের সত্যতাও পাওয়া গেছে। ওয়ান্ডার পার্কে মাত্র ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ দেখালেও বিশাল এই পার্কেই বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা। এই পার্কের কয়েকজন পরিচালকের মধ্যে অর্ণব একজন। সে অনুযায়ী এই পার্কের মালিকদের একজন হিসাবে তিনি প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালিক। এছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা পারিবারিক কোম্পানি গ্লোবাল সুজ লিমিটেডে মাত্র ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখালেও এই কোম্পানির সম্পদ মূল্য কয়েকশ কোটি টাকা। একজন পরিচালক হিসাবে তিনি এখানেও বিপুল টাকার সম্পদের ভাগীদার। এভাবে প্রতিটি কোম্পানির সম্পদ মূল্য অনুযায়ী তিনি শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক। তার আয়কর ফাইলের তথ্যেও সেটা স্পষ্ট হয়েছে। গত অর্থবছরে তিনি ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। এর মধ্যে সম্পত্তি থেকে ১ কোটি ৯৮ লাখ এবং জমি বিক্রি করে আয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ছাগলকাণ্ডের পর দুই ছেলেকে নিয়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে পাড়ি জমানো মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীও সম্পদে খুব একটা পিছিয়ে নেই। খিলক্ষেত এলাকার বনরূপা আবাসিকে রয়েছে তার তিন কাঠার প্লট, ঢাকা ও চট্টগ্রামে রয়েছে ছয়টি ফ্ল্যাট। এর মধ্যে ঢাকার মধুবাগে একটি, মিরপুর সেনপাড়ায় একটি, ধানমন্ডিতে ২টি ও চট্টগ্রামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এসব ফ্ল্যাটের দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের একটি ফ্ল্যাটের আয়তন ৫ হাজার ৫০০ স্কয়ার ফুট। আয়কর ফাইলে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৭ কোটি ৭৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকার। এর মধ্যে ব্যাংক ও হাতে নগদ আছে ২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া ব্যাংক ডিপোজিট মিলেনিয়াম স্কিমে ২৮ লাখ ৬৫ হাজার, ডিপিএস ২২ লাখ ৫৪ হাজার, এফডিআর ৭০ লাখ ও অন্যান্য বিনিয়োগ দেখানো আছে ৫ কোটি টাকা। তবে এই টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা হয়েছে তা উল্লেখ নেই। আয়কর ফাইলের বাইরেও শাম্মী আখতারের আরও অনেক সম্পদ রয়েছে বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone