বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Friday, September 20, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » Uncategorized » কোটাবিরোধী আন্দোলন : দেশজুড়ে অবরোধ আজ

কোটাবিরোধী আন্দোলন : দেশজুড়ে অবরোধ আজ 

Aideshaisomoy

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে জোর আন্দোলন করে যাচ্ছেন দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনে অঘোষিতভাবে কয়েক দিনের মতো গতকাল শনিবারও রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা।

তাতেই সারা দেশে সড়ক যোগাযোগ বেহাল। এতেও কাজ না হওয়ায় আজ রোববার তাঁরা ঘোষণা দিয়ে মহাসড়ক অবরোধে নামছেন। আর রাজধানীতে তাঁরা কর্মসূচি দিয়েছেন ‘বাংলা ব্লকড’। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে হরতাল কর্মসূচিরও হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

এত আন্দোলনের পরও কোটার বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর এই আন্দোলনকে ‘ন্যায্য’ ও ‘যৌক্তিক’ উল্লেখ করে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি।

অন্যদিকে, আন্দোলনে অংশ নিতে গতকালও শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। রাজধানীর শাহবাগে গতকাল বিকেলে অবরোধ শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কাল (আজ) বেলা তিনটা থেকে বাংলা ব্লকড কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, ঢাকা শহরের সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।’

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকেরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।’

এর আগে গতকাল বেলা আড়াইটার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা আসতে থাকেন। অন্যদিকে মধুর ক্যানটিনে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আন্দোলনে অংশ না নিতে এদিনও বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের বাধা দিয়েছেন।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাস্টারদা সূর্য সেন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, সূর্য সেনসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, অমর একুশে হল, স্যার এ এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে যোগ দিতে বাধা দিয়েছেন।

তবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে নয়, নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা মধুর ক্যানটিনে জড়ো হয়েছেন।

বেলা সোয়া তিনটার দিকে গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বিভিন্ন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, বকশীবাজার, বুয়েট, পলাশী, আজিমপুর, ইডেন কলেজ, হোম ইকোনমিকস কলেজ, নীলক্ষেত মোড় ঘুরে পুনরায় রাজু ভাস্কর্য হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় শাহবাগে অবস্থান নেয়।

শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান নেওয়ার আগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান করছিল। তবে তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়নি। শাহবাগ অবরোধের ফলে চারপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। এক ঘণ্টা অবরোধ শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।

আর বেলা তিনটার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে তাঁরা রায়সাহেব বাজার পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। পরে তাঁতীবাজার মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। আড়াই ঘণ্টা তাঁতীবাজার মোড় অবরোধের ফলে সদরঘাট, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়।

গত পাঁচ দিনের মতো গতকালও রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ শেষে পার্শ্ববর্তী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে বিভিন্ন মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। কিছু সময়ের জন্য রাজধানীর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের নগরজলপাই বাইপাস অবরোধ করেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলাসহ ২৪ জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় মহাসড়কে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ১১টার দিকে ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে কোটা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

চট্টগ্রামে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নগরীর ২ নং গেট এলাকার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বেলা সাড়ে তিনটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের রাস্তার দুই পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

উত্তরবঙ্গের মতো শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে সড়ক যোগাযোগ কিছু সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়েছিল দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক জেলাতেও। বেলা ১১টার কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে বিকেল ৫টায় খুলনা মহানগরীর শিববাড়ি মোড়ে অবস্থান নেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ খুলনার সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে পুরো খুলনা শহরের যান চলাচল কার্যত অচল হয়ে যায়।

এদিকে ছাত্র আন্দোলনের এমন প্রেক্ষাপটে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। কোটার বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অন্যদিকে আন্দোলনকে যৌক্তিক উল্লেখ করে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডে এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির কাজই হচ্ছে অন্যদের ইস্যুর ওপর ভর করা। এখন শিক্ষকদের আন্দোলনের ওপর ভর করবে। আবার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা তো (কোটা) কোর্টের রায়ের ব্যাপার। আমরা তো কোথাও এই কোটা রাখিনি। আমাদের ব্যবস্থা ছিল কোটামুক্ত। আদালতে কারা মামলা করেছে? আদালতের রায়। সেখানে আমাদের কী বলার আছে? সরকারের কী দোষ?

তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ‘ন্যায্য’ ও ‘যৌক্তিক’ উল্লেখ করে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ, অনির্বাচিত, কর্তৃত্ববাদী সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে, অর্থাৎ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জনগণের ন্যায্য দাবিগুলো দমিয়ে রাখার ঘৃণ্য পুরোনো কৌশলেই ছাত্রসমাজের ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’

সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এই কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর ফলে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়।

তবে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। ফলে কোটা বহাল হয়ে যায়।

এতে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। কোটা বাতিলের দাবিতে আবার রাস্তায় নামেন তাঁরা। ঈদুল আজহার আগে কয়েক দিন বিক্ষোভের পর দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ১ জুলাই থেকে জোর আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone