বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, September 8, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » হাসপাতাল ঘুরলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে

হাসপাতাল ঘুরলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে 

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ-সংঘাতে নিহত সব মানুষের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি। খুঁজতে থাকলে নিহতের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর দুটি সরকারি ও তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এই পাঁচ হাসপাতালে নতুন করে আরও ৯টি মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ওই দিন আরও তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল গিয়ে হতাহতের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চায়নি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নতুন করে একজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালে মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

শুধু সরকারি হাসপাতালে নয়, অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে রাজি হচ্ছে না। কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের তথ্য তাঁরা সংগ্রহে রাখেননি। কেউ বলেছেন, ঘটনার দিনগুলোতে তাঁরা হাসপাতালে ছিলেন না।

গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালটির যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম এসব তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিক্ষোভ-সংঘাতের ঘটনায় নিউরোসায়েন্সেসে মোট ১৩২ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। তাঁদের মধ্যে ১০০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর ৩২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়জন মারা গেছেন। এর আগে এই হাসপাতাল থেকে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি। তবে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় যুক্ত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, আহত ৩০০ জন এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। এর মধ্যে ১০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। চারজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর তথ্য আগে পাওয়া যায়নি।

শুধু সরকারি হাসপাতালে নয়, অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে রাজি হচ্ছে না। কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের তথ্য তাঁরা সংগ্রহে রাখেননি। কেউ বলেছেন, ঘটনার দিনগুলোতে তাঁরা হাসপাতালে ছিলেন না।

বনশ্রীর আল-রাজী ইসলামিয়া হাসপাতাল থেকে হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলেন, বিক্ষোভ-সংঘাতের সময় আহত হয়ে আসা ব্যক্তিদের হিসাব তাঁরা রাখেননি।

অন্যতম সংঘাতপূর্ণ এলাকা ছিল বাড্ডা, আফতাবনগর, রামপুরা ও বনশ্রী। আফতাবনগর এলাকার নাগরিক স্পেশালাইজড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের এখানে দুজনের মরদেহ আনা হয়েছিল। তাদের একজন মো. জিল্লুর শেখ (১৭)। ১৮ জুলাই দুপুরে নামাজের পর আফতাবনগর এলাকায় গলা ও বুকে সে গুলিবিদ্ধ হয়। ওই হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আফতাবনগর এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকত জিল্লুর শেখ। গত বৃহস্পতিবার তাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার পরিবারের কেউ নেই। তার মরদেহ নিয়ে গোপালগঞ্জে গেছেন সবাই। প্রতিবেশীরা জানান, জিল্লুর তার বন্ধুর সঙ্গে রাস্তায় গিয়ে মারা যায়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ওর বাবাকে সেই বন্ধু ফোন করলে তাঁরা ভ্যানে করে তাকে হাসপাতালে নেন। মৃত ঘোষণার পর মরদেহ বাসার নিয়ে আসেন তাঁরা।

নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৯


ওই হাসপাতালে আরেকজনের মৃতদেহ আনা হয়েছিল বলে হাসপাতালের মানবসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান।

বনশ্রীর অ্যাডভান্সড হাসপাতালে গেলে হতাহতের তথ্য দিতে রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ। তবে তারা জানায়, তাদের হাসপাতাল লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। সিসিটিভি ভাঙচুর করা হয়েছে।

বনশ্রীর আল-রাজী ইসলামিয়া হাসপাতাল থেকে হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলেন, বিক্ষোভ-সংঘাতের সময় আহত হয়ে আসা ব্যক্তিদের হিসাব তাঁরা রাখেননি।

ঢাকা শহরের বেশি বিক্ষোভ-সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে উত্তরা, রামপুরা-বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর-বসিলা, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া এলাকায়। এসব এলাকায় কয়েক শ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। এসব হাসপাতালে আহত অনেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি।

রামপুরা এলাকার ডিআইটি রোডের দুই পাশে বেশ কিছু হাসপাতাল আছে। এই এলাকায় ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই বিক্ষোভ-সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ হয়েছে এসব হাসপাতালের সামনের রাস্তায়। বেটার লাইফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি। তবে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একজন কর্মকর্তা বলেন, অন্তত ৩০০ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। একাধিক মৃতদেহও আনা হয়। তবে তিনি নির্দিষ্টভাবে কোনো সংখ্যার উল্লেখ করেননি।

রাস্তার উল্টো দিকে বাড্ডার দিকে এগোলে পাশাপাশি দুটি হাসপাতাল। একটি ডেলটা হেলথ কেয়ার। এই প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার কেয়ার অফিসার নূরুন নবীসহ চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁরা বলেন, ১৮ জুলাই আহত অবস্থায় ২৫-৩০ জন ছাত্র এসেছিল। পরের দিন ১৯ জুলাই বেলা দুইটার দিকে হাসপাতালে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তাঁর বয়স ছিল ১৮-১৯ বছর। ওই ব্যক্তির বাহুতে গুলি লেগেছিল। সেই গুলি ফুসফুস ভেদ করে বের হয়ে যায়। সেই মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তাঁরা পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে এই ব্যক্তির মা-বাবা মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েছিলেন কি না, তা তাঁরা জানেন না।

এ ছাড়া একই দিন এই হাসপাতালের সামনে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তির মাথায় গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে সেই হাসপাতালের ফটকের সামনে ঢলে পড়েন। দেড় ঘণ্টার মতো সেই ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে ছিল।

হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলেন, তাঁরা পুলিশকে সেই লাশ নেওয়ার জন্য বলেছিলেন। পুলিশ আসেনি। দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকায় কিছু লোক ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদের হাসপাতালে হামলা চালায়। পরে পুলিশ ওই লাশ নিয়ে যায়।

দ্বিতীয়টি বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল। হাসপাতালের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। কয়েক দিনের বিক্ষোভ-সংঘাতে কতজন আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছিল, তা তাঁর জানা নেই।

ঢাকা শহরের বেশি বিক্ষোভ-সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে উত্তরা, রামপুরা-বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর-বসিলা, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া এলাকায়। এসব এলাকায় কয়েক শ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। এসব হাসপাতালে আহত অনেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone