বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » আসলে নিহত কত

আসলে নিহত কত 

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় নিহতদের পরিসংখ্যান নিয়ে দেশ-বিদেশে চলছে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা। কেউ বলছে, আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ৫ শতাধিক। বেসরকারি একটি সংস্থার হিসাব মতে, নিহত হয়েছেন ২৬৬ জন। দেশের শীর্ষ জাতীয় একটি দৈনিকে নিহতের সংখ্যা বলা হয়েছে ২০৯ জন। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, এ সংখ্যা দেড় শর বেশি নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সহিংসতায় ১৪৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি অবশ্য এ-ও বলেছেন, নিহতদের আরও তথ্য অনুসন্ধানে কাজ চলছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা অনুসন্ধান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ১৮৫ জনের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে। নিহতদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে এসব মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ১৮৫টি লাশের মধ্যে অন্তত ১৫টি লাশের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। ডিএনএ নমুনা রেখে এ লাশগুলো আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য ও হাসপাতাল এবং ক্লিনিক ঘুরে ১৮৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা হাসপাতালসহ উত্তরা, বনশ্রী, মিরপুরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গুলিবিদ্ধ অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহত অবস্থায় গত তিন দিনে হাসপাতালে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। তাদের বেশির ভাগই মারা গেছেন গুলিবিদ্ধ হয়ে। নিহতদের মধ্যে ছাত্র, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, গাড়ি চালক, সাংবাদিক ও পুলিশ রয়েছেন। রাজনৈতিক দলের কর্মীও রয়েছেন নিহতের তালিকায়। এদের মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন গুলিবিদ্ধ হয়ে। জানা গেছে, অস্বাভাবিক, সন্দেহজনক এবং হঠাৎ মৃত্যু হলে ব্যক্তির পরিচয় ও মৃত্যুর কারণ শনাক্তে ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত করে প্রথমত মৃত্যুর কারণ, নেচার অব ডেথ বা মৃত্যুর ধরন জানা যায়। যেমন- কীভাবে মারা গেছে, কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকারী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়, যেমন- হত্যাকারী পেশাদার কি না। ডান হাতে না বাঁ হাতে হত্যা করা হয়েছে।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানার মধ্যে লালবাগ, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় কেউ অপঘাতে মারা গেলে ওই লাশের ময়নাতদন্ত হতো স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের মর্গে। বাকি ময়নাতদন্ত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে। এখন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সব থানা, উত্তরা (পূর্ব ও পশ্চিম), তুরাগ, দক্ষিণখান, বাড্ডা, ভাটারা থানার মৃতদেহ যায় শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মর্গে। এই তিন মর্গে সহিংসতায় নিহত ১৩৯টি লাশ আসে। এর মধ্যে ১৫টি ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যান স্বজনরা। ৫৬ জন নিহত হন ঢাকার বাইরে। এ লাশগুলোর ময়নাতদন্ত হয় ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতাল মর্গে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় সর্বশেষ মারা যান পোশাকশ্রমিক ইয়ামিন চৌধুরী (১৮)। তিনি ১৯ জুলাই রাজধানীর বাড্ডায় সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। ইয়ামিনের বাবা রতন চৌধুরী জানান, তার ছেলে উত্তর বাড্ডার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। ১৯ জুলাই বেলা ১টার দিকে কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। উত্তর বাড্ডা সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে এলে তার পেটে ও ডান হাতে গুলি লাগে। পথচারীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়। মা-বাবার সঙ্গে বাড্ডার হাসান উদ্দিন রোডে থাকতেন ইয়ামিন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কাঞ্চনপুরে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ১২০টি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। গত ১৭ জুলাই নিউমার্কেটে নিহত হন শাহজাহান (২৬) ও সবুজ আলী (২৬)। ১৮ জুলাই শাহবাগে কুরবান আলী (১৭) ও সোহাগ (১৭), ভাটারায় আবদুল জলিল (৪২)। ১৯ জুলাই মুগদায় জাফর হাওলাদার (৪৫), ক্যান্টনমেন্টে সামির (২৮), উত্তরা পশ্চিমে রুবেল (৩৫), যাত্রাবাড়ীতে মেহেদী হাসান (২৬), নাজমুল কাজী (৩৪), ওয়াসিম শেখ (৩৮)। ২০ জুলাই নিউমার্কেটে শুভ (১৯), মতিঝিলে আনসার সদস্য জুয়েল শেখ (২২), পল্টনে নবীন তালুকদার (৪০) ও কামাল মিয়া (৩৫)। শাহবাগে মোবারক (৩৫), মুকতাদির (৪৮) ও রনি আলামিন (২০)। মোহাম্মদপুরে শাকিল (২২), কাফরুলে কবির হোসেন (৩৪), নিউমার্কেটে জহির জামাল (২৭)। ২১ জুলাই শাহবাগে গণি শেখ (৪৬), মাসুদ (৪০), ইমন (২৬), ইউসুফ মিয়া (৩৫), কামরুল (১৭), হান্নান (৩২), তৌফিকুল, মোশাররফ (৩৮), রাজিব (৩০), শাহরিয়ার (১৯), সোহাগ (২৫), জাকির (৩৬), আহাদুল (১৮), মেহেদী (২০), হোসাইন (১০), জিসান (২০), ওয়াসিম (২৫), ইমাম হোসেন তাইম (১৯), আবদুল্লাহ আবির (২৫), আবদুল আহাদ (৩) ও হাসান (১৮), সুত্রাপুরে ওমর (২৩), লালবাগে আবদুল ওয়াদুদ (৪৬), আলী হোসেন (৩৫), খালিদ হাসান (১৮) ও দুলাল (৪০), কলাবাগানে মোবারক হোসেন (১৩) ও টিটু (৩৩), রামপুরায় ইফতি (১৬), সোহাগ (১৯), মারুফা (২০) ও রাকিব (২৩)। কাফরুলে রাকিব (২৮), যাত্রাবাড়ীতে আরিফ (৩৫), ইউসুফ আলী, আবির ও শাকিল। ২২ জুলাইয়ে শাহবাগে ইমরান, আবদুল লতিফ, মনির, রাজু, আজিজুল, রাসেল, গণি মিয়া ও ইমরান। ২৩ জুলাইয়ে ধানমন্ডিতে মনির, শাহবাগে হৃদয় চন্দ্র, যাত্রাবাড়ীতে নাসির। ২৩ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান অজ্ঞাত (৮), ইমরান, মনির, হৃদয় চন্দ্র বড়ুয়া, নাসির, রিয়া গোপ (৬), সাজেদুর রহমান ওমর (২০), শাহজাহান হৃদয় (২১), মো. জাকির হোসেন (২৯), মো. জামাল মিয়া (১৭), সোহেল রানা (২০), মাইনুদ্দিন (২৫), ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির (২৩), মো. ইয়াসিন (১৭) ও মো. ইয়ামিন (১৮)। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে ১২টি লাশের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে গত ১৯ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ পাঠায় বরগুনার বেতাগী উপজেলার লিটনের (৩২) লাশ। ২০ জুলাই শেরেবাংলা নগর এলাকায় অজ্ঞাত (২৮), রাকিব হাসান (১০) ও অজ্ঞাত (৪০)। ২১ জুলাই কাফরুলে অজ্ঞাত (৪৫), ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ পাঠায় আমজাদ আলী (৪৪), রাকিব (২৩) ও নাসিরুল ইসলাম (২১) নামে তিনজনের লাশ। একই দিনে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ অজ্ঞাত দুজনের লাশ পাঠায়, তাদের বয়স যথাক্রমে ২৩ ও ৫০। ২৩ জুলাই একই থানা থেকে পাঠানো হয় রবিউল ইসলাম (২৭) এবং ইব্রাহিম (৩৫) নামে দুজনের লাশ। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ চারটি লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। দুজনের লাশ আত্মীয়স্বজনরা জোর করে নিয়ে যান। মর্গে দুটি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন জেলায় ৫৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে

মাদারীপুর : গত ১৮ জুলাই মাদারীপুরে মারা যান কলেজ ছাত্র দীপ্ত দে। তিনি মাদারীপুর শহরের স্বপন দে নামে অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তার ছেলে। ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে রোমান বেপারী (৩২) ও তাওহীদ সন্নামত (২০) নামে দুজন মারা যান। রোমান মাদারীপুর সদর উপজেলার ভদ্রখোলা গ্রামের আমর বেপারীর ছেলে। তিনি পেশায় ট্রাকচালক এবং নিহত কলেজছাত্র তাওহীদ সদর উপজেলার সুচিয়ারভাঙা গ্রামের সালাহউদ্দিন সন্নামতের ছেলে। বগুড়া : গত ২০ জুলাই বগুড়া শহরের সেউগাড়ি এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন ভাঙারি বিক্রেতা সিয়াম। ২১ জুলাই সিয়ামকে বগুড়া শহরের আঞ্জুমান কবরস্থানে দাফন করা হয়। সিলেট : গত ১৮ জুলাই পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সুরমা আবাসিক এলাকার ভিতরের একটি খাল পার হতে গিয়ে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের  কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র সেন। রুদ্র দিনাজপুর সদর উপজেলার সুবীর সেন ও শিখা বণিকের ছেলে। গত ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর নগরের কালেক্টরেট জামে মসজিদ থেকে মিছিল বের করে বিএনপি। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার এ টি এম তুরাব গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে প্রথমে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয় নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ওইদিন সন্ধ্যায় তিনি হাসপাতালে মারা যান।

ময়মনসিংহ : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গৌরীপুরে নিহত হন তিনজন, ফুলপুর ও সদরে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২০ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টায় গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়া বাজার এলাকায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে গুলিবিদ্ধ হয়ে দামগাঁও গ্রামের হেকিম মুন্সীর ছেলে রাকিব (১৯), চুড়ালী গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে বিপ্লব (১৯) ও কাউরাট গ্রামের আইন উদ্দিনের ছেলে জুবায়ের হোসেন নিহত হন। ফুলপুর উপজেলা সদরের বাসস্ট?্যান্ডে বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হলে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাইফুল ইসলাম নামে এক পথচারী কৃষক নিহত হন। গত ১৯ জুলাই বিকালে ময়মনসিংহ নগরীর মিন্টু কলেজ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নগরীর আকুয়া চৌরাঙ্গী মোড় এলাকার আসাদ মিয়ার ছেলে রিদোয়ান হোসেন সাগর (১৯) নিহত হন। রংপুর : গত ১৯ জুলাই রংপুর নগরীর কামালকাছনা এলাকার বাবু মিয়ার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (৩০), জুম্মাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত ছামছুল ইসলামের ছেলে মিরাজুল ইসলাম, নগরীর গণেশপুর বকুলতলা এলাকার মৃত মন্টু মিয়ার ছেলে মোসলেম উদ্দিন মিলন (৪০), নগরীর সিও বাজার এলাকার তোফাজ্জল হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ছাড়া নগরীর পূর্ব ঘাঘটপাড়া এলাকার সেকেন্দার মিয়ার ছেলে অটোচালক মানিক মিয়া (৩৫)। গাজীপুর : হামিদুর রহমান জুয়েল মোল্লা (৩৬)। তিনি যুবলীগ কর্মী। তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছা এলাকার চান্দরা গ্রামের মো. আবদুল বারেক মোল্লার ছেলে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৯ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় তিনি হত্যাকাে র শিকার হন। কক্সবাজার : কক্সবাজার শহরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এহসান হাবিব। তিনি চকরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্র। নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে কোটা আন্দোলকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সাইন বোর্ডে আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হন পিবিআই ইন্সপেক্টর মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া (৫২)। তিনি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ী ইউনিয়নের কালান্ধর গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের কাজীপাড়া স্ট্যান্ড ও ভূঁইগড় পেট্রল পাম্পের পাশে ভাঙারি ব্যবসায়ী আবদুর রহমান (৫৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি ফতুল্লার ভূঁইগড় জোড়াপুকুর এলাকার বাসিন্দা। ফতুল্লায় রাকিব (২০) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। তিনি ফতুল্লার খোশপাড়া এলাকার ভাড়াটিয়া ও বরিশাল সদর এলাকার মোশারফ মিয়ার ছেলে। সিদ্ধিরগঞ্জে আরাফাত হোসেন আকাশ (১৫) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়। সে তার বাবা আকরাম হোসেনের সঙ্গে চিটাগাং রোড খানকা মসজিদের সামনে ভ্যানগাড়িতে করে ফল বিক্রি করত। মিলন (৩৮) নামে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় কাঁচাবাজারের মাছ ব্যবসায়ী নিহত হন। তিনি যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে মাছ আনতে যাওয়ার সময় শিমরাইল ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সজীব (২০) নামে একজন নিহত হন। তিনি পটুয়াখালীর ধুমকি থানার ঘাটারা এলাকার আলী হোসেন হাওলাদারের ছেলে ও চিটাগাং রোড আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেটের বিক্রমপুর হার্ডওয়ার দোকানের কর্মচারী। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সৈয়দ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজু (৩৬)। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকায় মোটর ওয়ার্কশপের মিস্ত্রি ছিলেন। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকার সরোয়ার আলমের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার পশ্চিমবিঘা গ্রামের সৈয়দ আবদুল করিমের ছেলে। মেহেদী (২০) নামে একজন নিহত হয়। তিনি গজারিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র। মেহেদীর বাবার নাম সানাউল্লাহ। শাহীন (২৩) নামে একজন সিদ্ধিরগঞ্জের নিউ হীরাঝিল হোটেলের ক্যাশিয়ার মারা যান। সুমাইয়া আক্তার সুমি (২০) নামে এক গৃহিণী সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লায় থাকতেন। বারান্দায় থাকা অবস্থায় গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। তিনি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের বাসিন্দা। আলা উদ্দিন (৩৫) নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি চাঁদপুরের মতলব থানার সিদ্দিকুর রহমান সরদারের ছেলে ও তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী নুরবাগ এলাকায় শাহাজাহানের বাড়ির ভাড়াটিয়া তার বেয়াইনের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জে হৃদয় (২৫), মৌচাক এলাকার সজল (২২) ও মিনারুল ইসলাম (২৫) নামে তিনজন নিহত হয়েছেন। এদের বিস্তারিত পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। ঢাকা-চট্টগাম মহাসড়কের পাশে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় হাজি ইব্রাহীম শপিং কমেপ্লেক্স ও প্রিয়ম নিবাসে অগ্নিসংযোগের পর ভবনে থাকা দোতলায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কক্ষ থেকে তিনজন কাঠমিস্ত্রির পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়। চট্টগ্রাম : গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্র-যুবলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। তারা হলেন- চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কক্সবাজারের পেকুয়ার ওয়াসিম আকরাম (২২), এমইএস কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের মহিষাদী গ্রামের ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২০) ও পথচারী ফার্নিচার দোকানের হেলপার নোয়াখালীর মো. ফারুক। ১৮ জুলাই বহদ্দারহাট এলাকায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত হন তিনজন। তারা হলেন- সরকারি আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার তানভীর আহমেদ (১৮) ও বহদ্দারহাটের মুদি দোকানের কর্মী চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সায়মন (২২)। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পটুয়াখালীর হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২২) মারা যান। চাঁদপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবদুল মজিদ নামে বাসের হেলপার। নরসিংদীতে সহিংসতায় নিহত নয়জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন- নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিসপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ও এন কে এম স্কুল অ্যান্ড হোমসের নবম শ্রেণির ছাত্র তাহমিদ (১৬)। একই এলাকার হালিম সরকারের ছেলে ডা. সজীব সরকার (৩২)। নরসিংদী পলাশ উপজেলার দড়িচর গ্রামের আবদুল কাইয়ুমের ছেলে ইমন (২১)। নরসিংদী সদর উপজেলার পৌলানপুর গ্রামের আক্কাস আলীর ছেলে নাহিদ (২৫), সদর উপজেলার ভগিরথপুর গ্রামের আবদুল খালেক সরকারের ছেলে রাব্বি (১৮), সদর উপজেলার শেখেরচর গ্রামের আলী হোসেন, সদর উপজেলার আলগী মনোহরপুরের মজিবুর রহমানের ছেলে শাওন আহমেদ সোহাগ (১৮), শিবপুর উপজেলার পশ্চিমপাড়া এলাকার ফাইজ উদ্দিনের ছেলে টিপু সুলতান (৪৫) ও শিবপুরের শহীদ মিনার এলাকার মৃত শিবলি রেজার ছেলে সিয়াম। নিহতরা বেশির ভাগই নরসিংদীর ভেলানগর, ইটাখোলা, মেহেরপাড়া এলাকায় নিহত হয়েছেন। সাভারে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১১ জন। এদের মধ্যে ছাত্র পাঁচজন। তারা হলেন- ইয়ামিন (২৪), শুভী শীল (২৪), আল আমীন (২৪), সাদ (১৩) ও তুহিন আহম্মেদ (২৪)। অন্যরা হলেন ব্যবসায়ী কুরবান আলী শেখ (৫২), শেখ শামিম (৬৫), অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ রনি (২৪) এবং শ্রমিক মেহেদী হাসান (৪৫), ফারুক আহম্মেদ (৪৫) ও নবী নুর মোড়ল (৪৫)।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone