অর্থনীতিতে ক্ষতি এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা
গত সপ্তাহের ছাত্র আন্দোলন, সহিংসতা এবং কারফিউয়ের কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনীতিতে ক্ষতি হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। রোববার (২৮ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ব্যবসায়ী নেতারা এ তথ্য তুলে ধরেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিডা ভবনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আক্তার এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, দেশে সীমিত অনলাইন এবং ফিজিক্যাল সংযোগের সঙ্গে ধীরে ধীরে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সম্পূর্ণ কার্যক্রম এখনও ফিরে আসেনি এবং আমরা অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ কাজে লাগাতে পারছি।
এদিকে বন্দরের জট, ঋণ পেতে সমস্যা, গ্যাস- বিদ্যুতের সংকট, ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট এবং এনবিআরকেন্দ্রিক সমস্যা- এই ৫ সমস্যার কথাও তুলে ধরেন ব্যবসায়ী নেতারা। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও কারফিউয়ের জেরে এই পাঁচটি সমস্যার উদ্ভব হওয়ার কথা সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে। ব্যবসায়ীদের পক্ষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমসহ বোর্ড সদস্যরা, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরীসহ অন্তত ৫০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে ব্যবসায়ীরা বেশ খোলামেলা আলাপ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে অন্তত পাঁচটি সমস্যার কথা উঠে এসেছে। আমরা এইসব সমস্যার সমাধানে পৃথকভাবে আবার বসব। ব্যবসায়ীরা আজকে দিনের শেষে প্রতিটা খাতের ক্ষতির চিত্র লিখিতভাবে জানাবেন। পরে সেটা নিয়ে আগামীকাল (আজ) মন্ত্রিসভার বৈঠকে কথা হবে।”
উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীরা যে পাঁচ সমস্যার কথা বলেছেন, তার একটি চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে। ব্যবসায়ীরা বন্দরে কন্টেইনার জট, ডেমারেজের কথা বলেছেন। আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনসগুলোর সমস্যার কথা বলেছেন। ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, এনবিআর ও শিপিং মিনিস্ট্রিকে নিয়ে বসে আমরা এই সমস্যা নিয়ে আরেকটি মিটিং করব।
ব্যাংক ঋণ অনেক বেশি, ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। পুনঃতফসিল ও সুদ মওকুফের কথা বলেছেন। গ্যাস- বিদ্যুতের দাম বেশি ও নিয়মিত গ্যাস না পাওয়ার কথা ব্যবসায়ীরা বলেছেন। ইন্টারনেটের বিকল্প একটা সিস্টেম চালু করা যায় কিনা। জেনারেল সিস্টেম বিকল হয়ে গেলে বিকল্প কোনো উপায় আছে কিনা। নিজস্ব একটা স্ট্যান্ডবাই সিস্টেম চালু করা যায় কিনা-সেই পরামর্শ এসেছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, এনবিআরকেন্দ্রিক সমস্যার কথাও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বলেছেন। এনবিআরকে নিয়ে সেকেন্ড আরেকটা মিটিং করতে চাই। তৃতীয় মিটিং করতে চাই, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে। ব্যাংককেন্দ্রিক যেসব সমস্যার কথা (ব্যবসায়ীরা) বলেছেন, সেটা সমাধান করতে চাই।
এছাড়া ব্রডব্যান্ড ও আইসিটি বা ইন্টারনেট নিয়ে ব্যবসায়ীরা কথা বলেছেন। আইসিটি নিয়েও বসতে হবে। ইন্টারনেট ছাড়া এখন ব্যবসা সম্ভব নয়। ছোট ছোট নারী উদ্যোক্তারা ইন্টারনেটের ওপর ডিপেন্ডেন্ট আছে। ইকমার্স খাতের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাদা মিটিং করব। গ্যাস বিদ্যুতের সমস্যা নিয়েও আমরা আলাদাভাবে বসব। চেষ্টা করব যতটুকু সমাধান করতে পারি।
এ সময় ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, শিল্পের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য আমাদের সম্পূর্ণ ব্রডব্যান্ড সংযোগ এবং যাতায়াত সুবিধা প্রয়োজন। এ ছাড়া, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্দর থেকে পণ্য খালাস এবং শাটডাউনের সময় কাজ করতে না পারার কারণে অতিরিক্ত বিলম্ব শুল্ক নির্ধারণসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
তারা বলেন, রফতানিমুখী শিল্প, ব্যাংকিং, বিমা, লজিস্টিকস, অবকাঠামো, টেলিকম, ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, রাইড-হেলিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং সোশ্যাল কমার্সের ওপর নির্ভরশীল অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠান শাটডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিল্পের ওপর এ আর্থিক প্রভাব কয়েক মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত যেতে পারে।
বর্তমানে বিদ্যমান অনেক বিনিয়োগকারী নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করতে চেয়েও অনিশ্চয়তাবোধ করছে বলে জানান ফিকি নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, পণ্য খালাস, অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং অদক্ষতা ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যদি আমরা আমাদের বর্তমান বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসা সহজীকরণকে অগ্রাধিকার দিতে ব্যর্থ হই, তাহলে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনায় রাখতে নিরুৎসাহিত হবে।
এক সপ্তাহের মধ্যে কারফিউ উঠবে
এদিকে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, কারফিউ প্রতিদিনই শিথিল হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ আগামী ৭ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আগামীতে উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে ব্যবসায়ীরা আলাদা ইন্টারনেট চেয়েছেন।
বিদেশি ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ার তথ্য জানা নেই: এফবিসিসিআই সভাপতি
এদিকে বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণে ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলো কাজ করছে। তবে যেভাবে বলা হচ্ছে বিদেশি বায়ারদের অর্ডার বাতিল হচ্ছে; এ রকম কোনো রকম তথ্য আজ আমাদের বিজিএমইএ কিংবা বিকেএমইএ দিতে পারেনি। এটা একটা রিউমার।
তিনি বলেন, আজকের মধ্যে ক্ষতির হিসাব আমরা পেয়ে যাবো। আগামী কেবিনেট মিটিং এটা দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট আজ জানিয়েছে তাদের প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিকেএমইএ বলেছে তাদেরও ক্ষতি হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষতির পরিমাণ পাইনি।
Posted in: জাতীয়