বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, October 20, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » ‘এখন বাবা নেই, জানি না কীভাবে আমি পড়াশোনা করব’

‘এখন বাবা নেই, জানি না কীভাবে আমি পড়াশোনা করব’ 

2

‘বাবা বলেছিলেন “আমি অভাবে লেখাপড়া করতে পারি নাই, মা তুমি আমার স্বপ্ন পূরণ করবা”, কিন্ত এখন বাবা নেই। আমি নিঃস্ব, কী হবে আমার? পড়াশোনায় অনেক খরচ, জানি না কীভাবে আমি পড়াশোনা করব।’

কথাগুলো বলছিল বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নুজহাত হোসেন। তাঁর বাবা জামাল সিকদার ২০ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডের পাইনদী এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। জামাল ঢাকায় রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে রায়েরবাজারে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামে।

সোমবার সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আড়িয়াল খাঁ নদীর শাখা পালরদী নদীর তীরেই ছিল জামাল সিকদারদের বাড়ি। এখন তার চিহ্ন নেই। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর তীরে মা–বাবার কবরের পাশে তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছে। কবরের পাশে বসেই কান্না করছেন জামাল সিকদারের স্ত্রী শিউলী আফরোজ (৩৩) ও মেয়ে নুজহাত হোসেন। পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামে বাড়ি না থাকায় মা-মেয়ে আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে।

শিউলী আফরোজ জানান, নদী বাড়িঘর গ্রাস করার পরে ২০০২ সালে তাঁকে নিয়ে ঢাকায় আসেন জামাল। বড় ভাই আবুল কালাম রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। তাঁর সঙ্গে থেকে জামাল রংমিস্ত্রির কাজ শিখে অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতেন। পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে অনেক দিনের আশা ছিল বিদেশ যাবেন, মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে অনেক বড় করবেন। ধারদেনা করে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্রি ভিসাসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। একমাত্র মেয়ে নুজহাত হোসেনকে ১৭ জুলাই ধানমন্ডির বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজে ভর্তি করেছেন। জামালের ২৫ জুলাই বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল। তাই ঘুরে ঘুরে ঢাকায় থাকা সব আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন।

সেদিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে শিউলী আফরোজ বলেন, ঘটনার দিন সকালে খালার কাছে বিদায় নিতে চিটাগাং রোডের পাইনদী নতুন মহল্লার বাসায় যান। দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে বিকেল পাঁচটায় শ্যালক তাওহীদ চৌধুরীকে নিয়ে কেনাকাটার জন্য মার্কেটে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জামাল। বিদেশ যাওয়ার আগেই আখেরি ভিসা নিয়ে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাওহীদ চৌধুরী (২৭) বলেন, ‘কেনাকাটা করার জন্য বের হয়ে চিটাগাং রোডের ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের কাছাকাছি পৌঁছে দেখি সামনে গন্ডগোল হচ্ছে, তখন আমরা ফিরে আসার প্রস্তুতি নিই। আমরা বাসার দিকে দৌড় দিই। কিছুদূর যেতেই পেছনে ফিরে দেখি দুলাভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে গেছেন। আমি তাঁর দিকে এগিয়ে গেলে আমাকেও লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। কীভাবে আমি প্রাণে বেঁচেছি, তা আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না।’

তাওহীদ চৌধুরী আরও বলেন, একপর্যায়ে জামাল সিকদারকে টেনেহিঁচড়ে কিছুদূরে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে খানপুর হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতাল গেলে তাঁরা জানান এই রোগীর চিকিৎসা এখানে হবে না। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁদের কথামতো রওনা হলে পথিমধ্যে জামাল সিকদার মারা যান।

কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নুজহাত হোসেন বলেন, ‘বাবা ছিলেন আমার একমাত্র আশ্রয়স্থল, আল্লাহ আমার আশ্রয়স্থল কেড়ে নিয়েছে। আমি এবারে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজে ভর্তি হয়েছি। জানি না কী করে মাকে নিয়ে আগামী দিনগুলো চলব।’

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone