বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, October 20, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » জামায়াত ও শিবির নিষিদ্ধ হচ্ছে, ১৪ দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত

জামায়াত ও শিবির নিষিদ্ধ হচ্ছে, ১৪ দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত 

4

জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোট। আগামী দু–এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জোটের বৈঠকে জানানো হয়েছে।

জোটের প্রধান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে গণভবনের ফটকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, তাঁদের বৈঠকে জামায়াত–শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এ সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৪–দলীয় জোটের নেতারা মনে করেন, বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির ও তাদের দোসর উগ্রবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র করছে। অতি সম্প্রতি চোরাগোপ্তা হামলা করে এবং গুলিবর্ষণ করে সরকারের ওপর দায় চাপাতে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

১৯ জুলাই রাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে কারফিউ জারি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১০ দিনের মাথায় আবার গতকাল জোটের জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেই জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়।

অবশ্য উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। দলটির ছাত্রসংগঠনের নাম ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে।

১৪–দলীয় জোটের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের শুরুতে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে যে নাশকতা, আগুন দেওয়ার ঘটনা ও পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে, এর পেছনে জামায়াত–শিবির রয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জামায়াত–শিবিরের প্রশিক্ষিত লোকজনকে ঢাকায় জড়ো করা হয়। তারাই এসব অপকর্ম করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে হলে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এরপর শরিক দলের নেতারা একে একে বক্তৃতা করেন। প্রথমেই ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ দরকার আছে। জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধের বিষয়টি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ই এসেছিল। তখন করা হয়নি। এখন বিবেচনায় নেওয়া যায়।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু তাঁর বক্তব্যে সরাসরি জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করার এখনই সময়। তাদের নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি এ বিষয়ে জনমত গঠনে রাজপথে মিছিল–সমাবেশ করারও প্রস্তাব দেন। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তিগুলোকেও এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হলে তারা আত্মগোপনে গিয়ে অন্য কোনো শক্তির ওপর ভর করতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও জোটের বৈঠকে আলোচনায় এসেছে। তবে সেটা ক্ষতিকর হবে না বলে মনে করেন ১৪ দলের নেতারা। বৈঠকে জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করলে তারা আত্মগোপনে (আন্ডারগ্রাউন্ড) চলে যাবে—এই ভয় পাচ্ছে সরকার। তারা আত্মগোপনে গেলেও কিছুই হবে না। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের কথা না শোনার পরামর্শ দেন তিনি। এ পর্যায়ে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, তারা (জামায়াত–শিবির) আত্মগোপনে ছিল। কিন্তু সরকার কিংবা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহায়তা না পেলে কিছুই করা যায় না। তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, তিনি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের জন্য মামলা করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি জামায়াত–শিবিরকে আগেই নিষিদ্ধ করা দরকার ছিল বলে মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত, আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার জন্য একটি আইনের খসড়া কয়েক বছর আগে তৈরি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু পরে সে বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি।

১৪–দলীয় জোটের বৈঠক শেষে ওই জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে সভার সমাপনী টানার কথা বলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই করা উচিত।

শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভার সমাপনী টানতে গিয়ে বলেন, ‘আপনাদের সুপারিশ থেকে এটা স্পষ্ট যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা এবং দেশে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করা দরকার।’ ১৪ দলের নেতাদের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নিতে তিনি একমত। প্রধানমন্ত্রী এটাও জানান, বুধবারের মধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জামায়াত–শিবিরকে নিষিদ্ধ করবে সরকার।

বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, দুটি শরিক দলের শীর্ষ নেতা আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘অতিকথন’–এর সমালোচনা করেন। এ ছাড়া অনেকেই গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির কার্যালয়ে লোকজনকে নিয়ে খাওয়ানো এবং সেই ছবি প্রচার করার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বলেও তাঁরা মত দেন।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone