উদ্বাস্তু শিবিরে জন্ম নেওয়া ইসমাইল হানিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনী
ইসমাইল হানিয়া মিশর অধিকৃত গাজা উপত্যকার আল-শাতি উদ্বাস্তু শিবিরে ১৯৬৩ সালের ২৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় তার বাবা-মা বর্তমান ইসরায়েলের অন্তর্গত আসকালানের নিকটস্থ বাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হন। হানিয়া জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি হামাসে যোগ দেন। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধি ছাত্র কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন। ইসলামিক এসোসিয়েশন ফুটবল দলে তিনি মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতেন। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম ইন্তিফাদার প্রায় সমসাময়িক কালে তিনি স্নাতক হন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে তিনি ইসরায়েলে স্বল্পকালীন কারাদন্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৮৮ সালে তিনি পুনরায় ইসরায়েল কর্তৃক গ্রেপ্তার হন এবং ছয় মাস কারাদন্ডে দণ্ডিত হন। এরপর ১৯৮৯ সালে তিনি তিন বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত হন। ১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়ার পর আবদুল আজিজ আল-রানতিসি, মাহমুদ জাহহার ও আরও ৪০০ কর্মীর সঙ্গে ইসরায়েল তাকে লেবানন পাঠিয়ে দেয়। তারা দক্ষিণ লেবাননের মার্জ আল-জহুরে এক বছর অবস্থান করেছিলেন। বিবিসির মতে এখানে হামাস যথেষ্ট পরিমাণে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে উঠে। এক বছর পর তিনি গাজায় ফিরে আসেন এবং ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিযুক্ত হন।
ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধানের পদে থাকলেও তাকেই এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা মনে করা হয়।
গত শতকের আশির দশকে হামাসের উত্থানকালে ফিলিস্তিনি সুন্নি মুসলিমদের এই রাজনৈতিক ও সামরিক আন্দোলনের সামনের কাতারে ছিলেন ইসমাইল হানিয়া।
১৯৯৭ সালে হামাসের মতাদর্শিক গুরুর কার্যালয়ের প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি। এতে হামাসে তার পদমর্যাদা বাড়ে।
ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনে হামাস বেশির ভাগ আসনে জয় পাওয়ার পর ২০০৬ সালে ইসমাইল হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গাজায় মাহমুদ আব্বাসের দল ফাত্তাহর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হানিয়েকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে হানিয়ে ওই সিদ্ধান্তকে ‘‘অসাংবিধানিক’’ আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, তার সরকার ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের জাতীয় দায়িত্ব থেকে সরবে না এবং তিনি গাজা শাসন করতে থাকেন।
পরে ২০১৭ সালে ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন। পরের বছর ইসমাইল হানিয়াকে ‘‘সন্ত্রাসী’’ তকমা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। কয়েক বছর ধরে ইসমাইল হানিয়া কাতারে বসবাস করে আসছিলেন।
ইরানের রাজধানী তেহরানে এক হামলায় হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়াহ নিহত হয়েছেন। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীও হামাসের এ শীর্ষ নেতার নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হানিয়া তেহরানে গিয়েছিলেন।