বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » কিশোর গ্রেপ্তার, ১২ দিন ধরে কারাগারে (আবু সাঈদ হত্যা মামলায়)

কিশোর গ্রেপ্তার, ১২ দিন ধরে কারাগারে (আবু সাঈদ হত্যা মামলায়) 

কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন আবু সাঈদ

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। গ্রেপ্তারের পর ১২ দিন ধরে রংপুর কারাগারে বন্দী রয়েছে সে। পুলিশ মামলায় তার বয়স উল্লেখ করেছে ১৯ বছর।

এই কিশোর রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির (বিজ্ঞান বিভাগ) ছাত্র। প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) সেলিম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেটি তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। সে রংপুর কারাগারে বন্দী আছে বলে গতকাল বুধবার জানতে পেরেছেন।

এই শিক্ষার্থীর বাবা রংপুরের পার্কের মোড়ে স্টুডিও ব্যবসা করেন। তিনি গতকাল বিকেলে  বলেন, আবু সাঈদ নিহত হন ১৬ জুলাই। আর তাঁর ছেলে বাড়ি থেকে বের হয় ১৮ জুলাই দুপুরে। এরপর সে মডার্ন মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। তিনি শুনেছেন, তাঁর ছেলের পায়ে পুলিশ গুলি করেছে। এ কারণে সে পালাতে পারেনি। ওই দিন রাতে তাঁকে ফোন করে বলা হয়েছিল, তাঁর ছেলে পুলিশি হেফাজতে আছে। পরদিন ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ছেলেটিকে ছেড়ে না দিয়ে জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

আবু সাঈদের বুক ও পেট ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল।

রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম

রংপুরের আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরকে ১৯ জুলাই আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটনের তাজহাট আমলি আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।

আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ওই দিন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।

সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। তিনি গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, আবু সাঈদের বুক ও পেট ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল।

আবু সাঈদ যে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন, তা ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট বোঝা যায়। তাহলে অল্প বয়সী এই শিক্ষার্থীকে কীভাবে এই হত্যা মামলার আসামি করা হলো? তার বয়স কীভাবে ১৯ উল্লেখ করা হলো? পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে এ প্রশ্নের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুরের তাজহাট থানার উপপরিদর্শক জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের সময় বয়স যাচাই করার সুযোগ হয়নি। পরে জেনেছেন, ছেলেটির বয়স ১৭ বছরের মতো হবে।

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড: মানুষ যা দেখছে, মামলার বাদী কি তা দেখেননি

ছেলেটির বাবা বলেন, তাঁর ছেলে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু পুলিশ তাকে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আসামি করে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। তিনি শুনেছেন, তাঁর ছেলে অসুস্থ। কারাগারে নেওয়ার পর তিন দিন পরিবারসহ সেখানে গেছেন। কিন্তু তাঁদের দেখতে দেওয়া হয়নি।

গ্রেপ্তারের সময় বয়স যাচাই করার সুযোগ হয়নি। পরে জেনেছেন, ছেলেটির বয়স ১৭ বছরের মতো হবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুরের তাজহাট থানার উপপরিদর্শক জিল্লুর রহমান

যোগাযোগ করা হলে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গতকাল বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তাঁরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন।

কিশোরের আইনজীবী আবদুল মোকছেদ বাহালুল প্রথম আলোকে বলেন, জন্মসনদসহ যাবতীয় প্রমাণপত্র দিয়ে রংপুর শিশু আদালত-১–এ গত ৩০ জুলাই জামিনের আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে ৪ আগস্ট।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone