বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Monday, December 23, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » বাবার কবর জিয়ারতে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হন এইচএসসি শিক্ষার্থী অরন্য

বাবার কবর জিয়ারতে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হন এইচএসসি শিক্ষার্থী অরন্য 

বাবার কবর জিয়ারতে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হন এইচএসসি শিক্ষার্থী অরন্য

গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাবার মৃত্যুর পর প্রায় প্রতিদিন বাবার কবর জিয়ারত করতে যেতেন আহনাব আকিব অরন্য (১৮)। কোনো কোনো দিন দুবারও যেতেন। গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বাবার কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিলেন। তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল পুলিশের একটি গাড়ি। গাড়িটি সামনে গিয়ে আবার পেছনে ফিরে আসে। একটি ছবি দেখিয়ে সাধারণ পোশাকের এক পুলিশ জিজ্ঞাসা করেন, এটা তিনি কি না। হ্যাঁ বলতেই তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

অরন্যের বড় ভাইয়ের সামনেই এ ঘটনা ঘটে। অরন্য এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বাড়ির পাশে রাজশাহী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী থানার হরিয়ান এলাকার মৃত মো. রায়হান কবিরের ছেলে। গত শনিবার নগরের মতিহার থানার একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সেদিন থেকেই তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। তাঁর সঙ্গে স্বজনদের কেউ এখন পর্যন্ত দেখা করতে পারেননি।

নগরের মতিহার থানায় বিস্ফোরক মামলাটি হয় গত ১৮ জুলাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সাহাব উদ্দীন-আল-ফারুক মামলার বাদী। মামলার তদন্ত করছেন থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. সাহাবুল ইসলাম। মামলায় ওই পরীক্ষার্থীসহ এখন পর্যন্ত ৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার এজাহারে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে ওই পরীক্ষার্থীর নাম নেই।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ১৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা গেট থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেনের মাঝামাঝি আমবাগানে বিএনপি-জামায়াতের উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা একত্র হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে গেলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং পুলিশের ওপর ইটের টুকরা নিক্ষেপ করা হয়।

গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার অরন্যের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বড় ভাই ও মাকে পাওয়া যায়। বড় ভাই বলেন, ‘আমার ভাই ১৬ জুলাই কাটাখালীতে একটি মিছিলে গিয়েছিল। পুলিশ মিছিলটি করতে দেয়নি। সেখানে অনেক শিক্ষার্থী ছিল। তারপর আর কোথাও যায়নি। রাতে তো বেরই হয় না। কিন্তু তাকে মামলা দেওয়া হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের ঘটনায়। গ্রেপ্তার দেখিয়েছে কাটাখালী থানায়। আমার ভাই কোনো অন্যায় করেনি।’

ছেলের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা মোছা. ছালমা রায়হান। তিনি বলেন, ‘প্রতি জুমার নামাজ পড়ে সাধারণত অরন্য বাবার কবর জিয়ারত করে। পরে এসে দুপুরের খাবার খায়। গত শুক্রবারও সে কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিল। এ সময় পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। পরে আমরা থানায় গিয়ে অনেক কাকুতিমিনতি করেছি। কিন্তু থানার কেউ শোনেনি। পরে তাকে মতিহার থানায় পাঠানো হলো। আমি অটোরিকশা করে গেলাম। গিয়ে দেখি থানার ভেতরে রেখেছে। অরন্যের পরীক্ষার কাগজপত্র দেখিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি। সেখান থেকে রাত দেড়টায় ছেলেকে রেখে চলে আসি। তারপর আর দেখা করতে পারিনি। কারাগারে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। দেখা করতে দেয়নি।’

ছালমা রায়হান আরও বলেন, ‘ছেলেটা কোনো দিন বাইরে থাকেনি। কী খাচ্ছে, কীভাবে আছে, কিছুই জানি না। ছোট মানুষ এমনিতেই খুব ভয় পায়। পরীক্ষা নিয়ে খুব টেনশনে থাকে। ছেলে বারবারই বলে, “মা, আমাকে ১৮ ঘণ্টা পড়তে হবে। না হলে ভালো ফলাফল হবে না। ভালো ফলাফল না হলে বুয়েটে পরীক্ষা দিতে পারব না।”’ তিনি বলেন, ‘আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই। শুধু আমি না, প্রত্যেকটা মায়েরই এই দাবি। কেন ছোট ছোট বাচ্চাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অনেক মায়ের বুক খালি হয়ে গেছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমার ছেলে আন্দোলন করলেও সেটা ন্যায়। এই অধিকার আমার ছেলের আছে। আমার ছেলে অন্যায় করলে একটা কথা ছিল। সে কোনো অন্যায় করেনি।’

মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহেদী প্রথম আলোকে বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থী অরন্যের গ্রেপ্তারের পর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জামিন চেয়ে পাননি। কাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে জামিন শুনানি আছে। আশা করছেন, জামিন পাবেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. সাহাবুল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে কাটাখালী থানার সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এইচএসসি পরীক্ষার কাগজপত্র দেখালে আদালত জামিন দেবেন বলে তিনিও আশা করছেন।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone