বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Friday, October 25, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » বেনামি ঋণ আটকে দিল ইসলামী ব্যাংক

বেনামি ঋণ আটকে দিল ইসলামী ব্যাংক 

বেনামি ঋণ আটকে দিল ইসলামী ব্যাংক

সরকার পরিবর্তনের পর বেনামি ঋণের মাধ্যমে অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা ঠেকানোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। গত মঙ্গলবার এক দিনেই ব্যাংকটি ৮৮৯ কোটি টাকা উত্তোলন ঠেকিয়েছে। এসব অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল গ্লোডেন স্টার ও টপ টেন ট্রেডিং হাউস নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। কর্মকর্তারা জানান, দুটি প্রতিষ্ঠানই ব্যাংকের মালিকপক্ষের সঙ্গে যুক্ত। এ জন্য সরকার পরিবর্তনের ফলেই তাঁরা এভাবে অর্থ তুলে নেওয়া ঠেকিয়ে দিতে পেরেছেন। ইসলামী ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংকে শুরু হওয়া অস্থিরতা গতকাল বুধবারও দেখা গেছে। ২০১৭ সালে মালিকানা পরিবর্তনের পর বাদ পড়া ও বঞ্চিত কর্মকর্তারা এদিনও বিক্ষোভ করেন। তাঁরা মালিকপক্ষের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের পদত্যাগের পাশাপাশি গত সাত বছরে যোগ দেওয়া কর্মকর্তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। একপর্যায়ে তাঁরা ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মুহাম্মদ কায়সার আলীকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেন। পরে তিনি এমডির কাছে পদত্যাগ করে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ব্যাংক ত্যাগ করেন।

জানা যায়, ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ যখন ব্যাংকটির কর্তৃত্ব হাতে নেয়, তখন মুহাম্মদ কায়সার আলী ছিলেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক। এস আলম গ্রুপও ব্যাংকটির একই শাখার গ্রাহক। ফলে অল্প সময়ে তাঁকে একাধিক পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত এমডি করা হয়। এ জন্য তাঁর ওপর ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ।

সরকার পরিবর্তনের পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা ব্যাংকটিতে যাচ্ছেন না। তাঁদের বেশির ভাগই এস আলম গ্রুপের মদদপুষ্ট। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ব্যক্তিগত সহকারী ও ব্যাংকটির ডিএমডি আকিজ উদ্দিন; ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন ও কাজী মো রেজাউল করিমের নামফলক ভাঙচুর করেছেন ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এদিকে গতকাল ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে স্বেচ্ছায়, জোরপূর্বক ও বাধ্যতামূলক পদত্যাগে বাধ্য হওয়া কর্মকর্তাদের পদত্যাগপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁদের দ্রুত ব্যাংকে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখায় সোনালী, জনতা, রূপালী, পূবালী ও সিটি ব্যাংকের পাঁচটি চেক নগদায়নের জন্য পাঠানো হয়। গ্লোডেন স্টার নামক একটি প্রতিষ্ঠান এই পাঁচটি চেক ইস্যু করেছিল। প্রতিষ্ঠানের মূল হিসাব ছিল আগ্রবাদ শাখায়। ওই পাঁচটি চেক আগ্রাবাদ শাখার ম্যানেজার প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়ার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে ৩৪৬ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের তৎপরতায় তা আটকে যায়। একই দিন টপ টেন ট্রেডিংয়ের ৫৪৮ কোটি টাকার বেনামি ঋণও আটকে দেয় ব্যাংকটি।

এ নিয়ে বক্তব্য জানতে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

তবে ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বেনামি ঋণ নিয়ে যেভাবে ব্যাংকটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেওয়া হয়েছে, তা এখনো অব্যাহত আছে। টাকা তুলে ডলার করে বাইরে পাঠানো হচ্ছে। দ্রুতই সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ না নিলে এই ব্যাংকে বিপর্যয় নেমে আসবে।

ব্যাংকটি তদারকিতে যুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের নতুন ঋণ দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে। এরপরও তা না শুনলে কী করা যায়। নতুন সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সে অপেক্ষায় আছি আমরা।’

এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন সাতটি ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক থাকলেও কীভাবে লেনদেন চলছে, এর জবাবে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, এই সবকিছু এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর। তারা যে নির্দেশনা দেবে, তার আলোকেই কাজ করা হবে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone