স্বরাষ্ট্র থেকে সরানো : যা বললেন সাখাওয়াত
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এম সাখাওয়াত হোসেন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, ‘এতে মন খারাপের কিছু নেই।’ শুক্রবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা থেকে সরিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেনকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমার যতটুকু করার সাধ্য ছিলো, করে আসছি।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদে এসেছেন শপথ নেয়া নতুন উপদেষ্টা লে. জে. অব. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। শুক্রবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেয়া প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং আরো ১৩ উপদেষ্টার সাথে শপথ নেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. এম সাখাওয়াত হোসেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হওয়ার পর গত ১২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন এম সাখাওয়াত হোসেন। ওইদিন আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়া আওয়ামী লীগকে গণ্ডগোল না পাকিয়ে নতুন মুখ নিয়ে দল গোছানো পরামর্শ দেন তিনি।
দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটা অনেক বড় পার্টি। আই হ্যাভ লট অব রেসপেক্ট ফর আওয়ামী লীগ। একসময় বাঙালিদের ভরসার জায়গা ছিল এই পার্টি। বায়ান্ন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অবদান ব্যক্তিগত কোনো কারণে নষ্ট করবেন না। এটা জাতীয় সম্পদ। আপনারা আসুন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বলব এমন কিছু করবেন না যাতে জীবন বিপন্ন হয়। আপনারা রাজনৈতিক দল হিসেবে দলকে গুছিয়ে নিন। নির্বাচন হলে অংশ নিন। জনগণ ভোট দিলে ভোটে যাবেন। তবে প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখলে হাজার-হাজার মানুষের রক্ত ঝরবে।’
সেইসঙ্গে ভারতে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন আরো বলেছিলেন, ‘আপনি ভালো থাকেন, আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গণ্ডগোল পাকানোর মানে হয় না, এতে লাভ হবে না। বরং লোকজন আরো ক্ষেপে উঠবে।’
ওইদিন তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এক বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আজকের উপদেষ্টাদের কেউ-কেউ খুনিদের পুনর্বাসন করার বক্তব্য দিচ্ছেন। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসনের বক্তব্য যারা দিতে চায়, আমরা ছাত্র-জনতা যেভাবে তাদেরকে উপদেষ্টা বানিয়েছি, ঠিক একইভাবে গদি থেকে ছুড়ে নামাতে দ্বিধা করবো না।’
ওই রাতে এম সাখাওয়াত হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিএনপির।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তার মায়ের মতো পরিণতি ভোগ করার হুমকি দিচ্ছে সেই ‘একই জনতা’।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে শেখ হাসিনার সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের একটি বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করতে বলেছেন।
তিনি আরো বলেন, “সেই একই ‘জনতা’ কোনোভাবেই তার সৎ পরামর্শ মেনে নিতে পারেনি, উল্টো তারা (জনতা) আমার মায়ের মতো একই পরিণতি ভোগ করার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে হুমকি দিয়েছে।”
এসব ঘটনার পর চাপে পড়েন সাখাওয়াত হোসেন। তাকে উপদেষ্টা থেকে সরিয়ে দেয়ার গুঞ্জন উঠে। ধারণা করা হচ্ছে, এসবের জেরে শুক্রবার তাকে স্বরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা প্রসঙ্গে এম সাখাওয়াত হোসেন আরো বলেন, ‘এখন যেখানে দিয়েছে, সেখানে কাজ করতে পারলে করবো, আর অপারগ হলে চলে যাবো।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগ দিতে আরো চারজন উপদেষ্টা শুক্রবার (১৬ অগাস্ট) শপথ নিয়েছেন।
নতুন উপদেষ্টারা হলেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক বিদ্যুৎ সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেয়া প্রজ্ঞাপনে নতুন উপদেষ্টাদের দপ্তর বন্টনের কথা জানানো হয়। এতে নতুন উপদেষ্টা মধ্যে-
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ- পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়
আলী ইমাম মজুমদার- প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত
মোঃ ফাউজুল কবির খান- বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়
লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়
বর্তমান উপদেষ্টাদের দায়িত্ব পুনঃবন্টন
১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ- অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
২. আসিফ নজরুল- আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়
৩. আদিলুর রহমান খান- শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
৪. রিজওয়ানা হাসান- শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
৫. নাহিদ ইসলাম- ডাক টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়
৬. আসিফ মাহমুদ- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়
৭. ফারুকী আজম- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
সূত্র : ভিওএ