বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, October 27, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » সাবেক মন্ত্রীসহ আলোচিতরা কোথা থেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন

সাবেক মন্ত্রীসহ আলোচিতরা কোথা থেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন 

ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা। আত্মগোপনের তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ব্যক্তিরাও। তাঁদের কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হচ্ছেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকায় এখন পর্যন্ত ছয় আলোচিত ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। এ ছাড়া একজন সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাও আছেন। এই ছয় জনের দুজনকে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েকদিন আগে বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগের সময় আটকে দেওয়া হয়েছে বলে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ভিন্ন স্থান থেকে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, আটক হওয়া ব্যক্তিরা তাহলে কোথা থেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন?

তবে কোন পর্যায়ের ব্যক্তিরা আশ্রয় পেয়েছেন, সে বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। ফলে হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা হলে তাঁকে কীভাবে আইনের আওতায় নেওয়া হবে, সে বিষয়েও স্পষ্ট করে জানা যায়নি।

সাবেক এমপি রমেশ চন্দ্র সেনছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সেনা হেফাজতে নেওয়াসংক্রান্ত বিষয়ে ১৩ আগস্ট রাজশাহী সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘কারও যদি জীবন বিপন্ন হয়, ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে, অবশ্যই আমরা তাঁদের আশ্রয় দিয়েছি। তাঁদের প্রতি যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, অবশ্যই তাঁরা শাস্তির আওতায় যাবেন। কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইব না যে বিচারবহির্ভূত কোনো কাজ হোক, হামলা হোক। তাঁদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাঁদের আশ্রয় দিয়েছি। যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক, যে ধর্মের হোক, সেটা আমরা করব।’

সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান

সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান

তবে কোন পর্যায়ের ব্যক্তিরা আশ্রয় পেয়েছেন, সে বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। ফলে হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা হলে তাঁকে কীভাবে আইনের আওতায় নেওয়া হবে, সে বিষয়েও স্পষ্ট করে জানা যায়নি।

পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের কাছে গতকাল বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তারা বলেছে, সেনাপ্রধান ইতিপূর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তাই এ নিয়ে তাদের আলাদা কোনো বক্তব্য নেই।

আলোচিত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ১৩ আগস্ট জানানো হয়েছিল, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানী ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে এই দুজনকে নিউমার্কেট থানার মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হয়, আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে আগেই আটক করা হয়েছিল। গ্রেপ্তার দেখানো হয় পরে।

এখন পুরো পরিস্থিতিই অস্বাভাবিক। সে কারণে হয়তো এমন কিছু ঘটনা ঘটছে। তবে মামলার স্বার্থে, সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে আসামি গ্রেপ্তার ও আলামত জব্দের প্রতিটি বিষয় সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ

শামসুল হক টুকু, জুনাইদ আহমেদ পলক ও তানভীর হাসান সৈকত
শামসুল হক টুকু, জুনাইদ আহমেদ পলক ও তানভীর হাসান সৈকতফাইল ছবি

১৪ আগস্ট সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহ্‌মেদ পলক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তারের খবর জানায় ডিএমপি। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শামসুল হক টুকু, পলক ও ছাত্রলীগ নেতা সৈকত গ্রেপ্তার

তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক তাঁর ব্যক্তিগত দুজন কর্মকর্তাকে নিয়ে দেশত্যাগের জন্য ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। সে সময় তাঁকে বিমানে উঠতে না দিয়ে ইমিগ্রেশন হেফাজতে আটকে রাখা হয়, সে খবর তখন গণমাধ্যমে প্রচারও হয়েছিল। একইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকে তাঁরা কোথায় ছিলেন, তা আর জানা যায়নি। আটদিন পর পলক ও সৈকতকে গ্রেপ্তার করা হলেও রিয়াজের অবস্থান সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনারকে একাধিকবার কল করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ ১৬ আগস্ট গ্রেপ্তার হন সেনাবাহিনী থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। তিনি সর্বশেষ টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। ১৬ আগস্ট বেলা ১টা ৫৪টা মিনিটে ডিএমপি গণমাধ্যমকে জানায়, নিউমার্কেট থানার একটি মামলায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে ১৫ আগস্ট গভীর রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কারাগারে রমেশ চন্দ্র সেন, আসামি আরও ৫ এমপি

পরে রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ডিএমপির পক্ষ থেকে সংশোধনী দিয়ে বলা হয়, জিয়াউল আহসানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় সেনাবাহিনীর আশ্রয় গ্রহণ করলে ১৫ আগস্ট দিবাগত রাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যদিও জিয়াউল আহসানকে আদালতে হাজির করে যে রিমান্ড আবেদন করা হয় তাতে পুলিশ বলেছে, ১৬ আগস্ট রাজধানীর ৩০০ ফিট সংলগ্ন খিলক্ষেত থানা এলাকা থেকে অভিযান পরিচালনা করে তাঁকে আটক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের মুঠোফোনে পাঁচবার কল করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। এ ছাড়া ডিএমপির ঊর্ধ্বতন আরও তিন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনারকে একাধিকবার কল করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

পরে এ নিয়ে কথা হয় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পুরো পরিস্থিতিই অস্বাভাবিক। সে কারণে হয়তো এমন কিছু ঘটনা ঘটছে। তবে মামলার স্বার্থে, সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে আসামি গ্রেপ্তার ও আলামত জব্দের প্রতিটি বিষয় সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে।’

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone