বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, October 27, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » পুলিশ ভেরিফিকেশনে বাদ, ১৩ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে বসে জানলেন বিসিএস হয়েছে

পুলিশ ভেরিফিকেশনে বাদ, ১৩ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে বসে জানলেন বিসিএস হয়েছে 

মো. ইব্রাহীম সাবিতছবি: সবংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করার পর ২০০৯ সালে বিসিএস পরীক্ষায় বসেছিলেন মো. ইব্রাহীম সাবিত। ২৯তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করে বিসিএস তথ্য ক্যাডারে প্রথম হয়ে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে নিয়োগের জন্য সুপারিশও পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০১১ সালে ২৯তম বিসিএসের প্রকাশিত গেজেটে পুলিশের নেতিবাচক প্রতিবেদনের কারণে নাম ওঠেনি ইব্রাহীম সাবিতের। ১৩ বছর পর ১৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে বসে তথ্য ক্যাডারে গেজেটভুক্ত হওয়ার খবর জানতে পারেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে মো. ইব্রাহীম সাবিত প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৯তম বিসিএসের ভাইভায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর গেজেট প্রকাশের আগে দুটো ধাপ থাকে শুধু। একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও অপরটি পুলিশ ভেরিফিকেশন। যেহেতু জীবনে কখনো ডিসিপ্লিনারি কোনো ইস্যু ছিল না, তাই গেজেটে নাম আসবে না, এটা কখনো আশা করিনি। পারিবারিকভাবে তখনকার বিরোধী দলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় গেজেটে নাম আসেনি বলে মনে করি। এত দিন পর গেজেটে নাম আসাটাও প্রমাণ করে কারণটা মোটেই যুক্তিযুক্ত ছিল না। পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় স্থানীয় পুলিশও আমার পরিবারকে বলেছিল, পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ধর্তব্য নয়। এনএসআইয়ের ভেরিফিকেশনের জন্য তো বাসায় আসে না কেউ। আমি বলতে পারছি না তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় কী। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, এসব ভেরিফিকেশন রিপোর্টের ভিত্তিতে যারা সিদ্ধান্ত নেয়, তারাই প্রকৃত দোষী।’

বিসিএস প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা দীর্ঘ সময় ধরে হয়। এত কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়ে চাকরিটা পাওয়ার জন্য অনেক আশা তৈরি হয়। তাই গেজেটে নাম না দেখে অনেক হতাশ হয়েছিলেন  মো. ইব্রাহীম সাবিত। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় বিসিএসের চাকরি থেকে কেউ বাদ পড়তে পারে, এটা তখন পর্যন্ত জানা ছিল না। এখন গেজেটে দেখলাম ২৮তম বিসিএস থেকেও ৭ জন বাদ পড়েছিলেন। আশপাশের কিছু মানুষ তো জানত বিসিএস দিচ্ছি, শেষ পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা ছাড়া বাদ পড়ে যাওয়াটা একটু হলেও অপমানজনক ছিল। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না, এরপর ৩০তম বিসিএসে ভাইভা দিয়েছি। সেখানে ২৯তম বিসিএস নিয়ে প্রশ্নও করা হয়েছিল, “শেষ পর্যন্ত হয়নি”- এভাবেই বিষয়টা এড়িয়ে যেতে হয়েছিল। আরও বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল।’

পিএসসির বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দিতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার

২৯তম বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সময় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ বাংলা সুগার মিলে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মো. ইব্রাহীম সাবিত। তিনি বলেন, ‘স্নাতক পাসের পর কখনোই চাকরির আশায় বসে থাকতে হয়নি। এর কিছুদিন আগেই উপজেলা নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে কাজ করে এসেছিলাম। ভোট গ্রহণ ও গণনাতে সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থী জিততে না পারায় আমাকে হুমকি, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে হেনস্তা এবং কীভাবে ওই এলাকায় চাকরি করি, এমনটা দেখে নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে গেজেট থেকে বাদ পড়াটা তাই মানসিকভাবে আরও একটা বড় আঘাত হয়ে আসে।’

 মো. ইব্রাহীম সাবিত এখন থাকেন আমেরিকায়
মো. ইব্রাহীম সাবিত এখন থাকেন আমেরিকায়ছবি: সংগৃহীত

১৩ বছর পর গেজেটে নাম দেখে কেমন লাগছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে মো. ইব্রাহীম সাবিত বলেন, ‘এত দিন পর গেজেটে নাম দেখে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে কয়েকটা কারণে। গেজেটে ২৫৯ জনের নাম দেখে আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না বাদ পড়াদের তালিকাটা এত বড়। আমার বিশ্বাস, দেশের অধিকাংশ মানুষ জানতই না যে বিসিএসের নিয়োগ থেকে এ রকম অকারণে মানুষ বাদ পড়েছে বছরের পর বছর, ভবিষ্যৎ সুন্দর বাংলাদেশ গঠনে এ রকম অবিচার যাতে ঠেকানো যায়, তার বড় একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এই গেজেট। মানুষ যাতে নিজের মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে, সে বিষয়টা নিশ্চিত করা দরকার।’

গেজেট থেকে নাম বাদ পড়ার পর সাবিতের জীবনে এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে মেরিল্যান্ডেই বসবাস। তিনি বলেন, ‘সেই ঘটনার পর ১৩ বছর পেরিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন চাকরি করছি। এখানে সংসার হয়েছে। চাইলেও হঠাৎ করে সব ছেড়ে বা গুটিয়ে দেশে চলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ২৯তম বিসিএসের পর চার বছর বাংলাদেশে ছিলাম, তখনো গেজেট সংশোধিত হলে অবশ্যই আর অন্যদিকে চিন্তা না করে এই চাকরিতে যোগ দিতাম।’

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone