বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Monday, December 23, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » রাবিতে পুলিশের সামনেই ঘুরছে সেই অস্ত্রধারীরা

রাবিতে পুলিশের সামনেই ঘুরছে সেই অস্ত্রধারীরা 

R.U picture20140203030012

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকোর্সবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর গত ২ ফেব্রুয়ারি হামলাকারী ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে দিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হামলার ঘটনার এক মাস ২২ দিন পার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি।

অভিযোগ রয়েছে, অস্ত্রধারী সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানার ছত্রছায়ায় এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলের বিভিন্ন কক্ষে অবস্থান করছেন। এতে করে ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে অস্ত্রধারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশন।

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে তারা অস্ত্রধারীদের খুঁজে না পাওয়ায় তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, ২ ফেব্রুয়ারির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একযোগে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও পুলিশ। এতে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ সাংবাদিক মিলে আহত হয় শতাধিক শিক্ষার্থী। ওই দিন ছাত্রলীগের ছয় ক্যাডারকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে শিক্ষার্থীদের উপর গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। যাদের ছবি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে।

তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহম্মেদ সেতু, সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ রুনু ও শামসুজ্জামান ইমন, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাকিম বিল্লাহ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম।

ছাত্রলীগের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, অস্ত্রধারীদের মধ্যে সুদীপ্ত সালাম, ফয়সাল আহম্মেদ, মুস্তাকিম বিল্লাহ ও নাসিম আহমেদ গত কয়েকদিন থেকে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

সভাপতি মিজানুর রহমান রানার ছত্রছায়ায় অস্ত্রধারীরা এখন নিয়মিত বিশ্ববিদ্যলয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলের বিভিন্ন কক্ষে অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে সালাম ও রুনু ২৩০, সেতু ৩১৭ নম্বর কক্ষে থাকছেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে। মুস্তাকিম বিল্লাহ হলে না থাকলেও অন্য অস্ত্রধারীদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে ঘুরছেন।

ছাত্রলীগের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, সভাপতি রানা থাকছেন ২৩২ নম্বর কক্ষে। তাই অস্ত্রধারী ক্যাডারদের সঙ্গে রাখতে সালাম ও রুনুকে তিনি ২৩০ নম্বর কক্ষে রাখছেন। তাদের অনেকেই বিভিন্ন সময় ওই হলের একাধিক কক্ষেও থাকেন বলেও জানান তিনি।

সাধারণ সম্পাদক তৌাহিদ আল তুহিনের গ্রুপকে দমন করেতই সভাপতি আবারো এই অস্ত্রধারীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে এনেছেন বলেও জানান তিনি।

তবে বিশ্ববিদ্যলয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা শীর্ষ নিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের মাঝে কোনো প্রকার গ্রুপিং নেই। আমরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে এক হয়ে ছাত্রলীগে কাজ করছি।

হলে অস্ত্রধারীদের থাকার বিষয়ে জানতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল প্রাধ্যক্ষ এস এম জাহিদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা জানান, ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের উপর প্রকাশ্যে গুলি চালালেও ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীদের এখনো গ্রেফতার করেনি প্রশাসন। তারা আবারো ক্যাম্পাসে ফিরে আসায় শিক্ষার পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝেও বিরাজ করছে আতঙ্ক। তাই দ্রুত এসব অস্ত্রধারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।

এদিকে, গত ২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের উপর হামলার পর বিক্ষুব্ধ কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোয়ার্টার জুবেরী ভবন ও বিভিন্ন একাডেমিক ভবন ও হলে ভাঙচুর চালায়। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠকে ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এরপর গত ৯ মার্চ শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয় এবং ১০ মার্চ থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু করা হয়। তবে ওই ঘটনার দেড় মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি কমিটি। এদিকে, তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাও প্রত্যাহার করা হচ্ছে না বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, ঘটনার পর ৫ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী নগরের ভেরিপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে। তবে হামলার দিনে তাকে অস্ত্র হাতে দেখা যায়নি।

জানতে চাইলে রাজশাহী মহনগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান শীর্ষ নিউজকে বলেন, আমরা আমাদের কাজ যথানিয়মে চালিয়ে যাচ্ছি। অস্ত্রধারীদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর বিষয়ে আমরা অবগত নই।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক খালেকুজ্জামান শীর্ষ নিউজকে বলেন, পুরো বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ঘটনায় জড়িত সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। তবে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এ ঘটনায় অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তদন্ত শেষ হতে আরো ১৫ দিন সময় লাগতে পারে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান শীর্ষ নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তদন্ত কাজে দেরি হয়েছে। ক্যাম্পাস খোলার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কমিটিকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত এ তদন্ত শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone