বায়তুল মোকাররম মসজিদে আসলে কী ঘটেছিল? যা জানালেন দুই খতিব
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের ইমামতি কে করবেন তা নিয়ে বিবাদ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নামাজের আগে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মসজিদের ভেতরে ভাঙচুরও চালানো হয়।
অতীতে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কারণে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। তবে মসজিদের ভেতরে এমন ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা নজিরবিহীন।
ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদের ভেতরে এ ধরনের ঘটনা ব্যাপক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনার জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করছেন ঘটনার কেন্দ্রে থাকা খতিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমাম।
বায়তুল মোকাররম দেশের মুসলিমদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এখানে জুমার নামাজ আদায় করতে দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে আসেন। সাধারণত নামাজের ইমামতি করেন মসজিদের খতিব। তবে বায়তুল মোকাররমের খতিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন গত জুলাই থেকে অনুপস্থিত থাকায় এতদিন অন্য দায়িত্বশীলদের দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করানো হতো।
স্থানীয় কোনো কোনো গণমাধ্যমে রহুল আমীনের এই অনুপস্থিতিকে ‘সরকার পতনের পর আত্মগোপনে’ যাওয়া হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
অবশ্য এই সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে জানান। প্রায় দুই মাস পর শুক্রবার মসজিদে আসেন রুহুল আমীন। জুমার নামাজের ইমামতির জন্য আগে থেকে দায়িত্ব দেয়া ছিল মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারীকে। তিনিসহ কয়েকজন মুসল্লি খতিবের কক্ষে গিয়ে রুহুল আমীনকে জুমার নামাজে ইমামতি থেকে বিরত থাকতে বলেন।
আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে রুহুল আমিন জানান, তাকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে। এরপর সেখান থেকে গিয়ে খুতবায় দাঁড়ান আবু ছালেহ পাটোয়ারী। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন রহুল আমীন। মিম্বারে (ইমামের দাঁড়ানোর স্থান) অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা দেখা দেয় তাদের সঙ্গে থাকা মুসল্লিদের মধ্যে।
পরস্পরের অভিযোগ থেকে জানা যাচ্ছে, দু’জনের সঙ্গেই কিছু অনুসারী ছিলেন। উপস্থিত মুসল্লিরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, আমি খুতবা শুরু করেছিলাম। তিনি (রুহুল আমিন) দলবল নিয়ে এসে জোর করে মিম্বারে দাঁড়ান। আমাকে একজন সরে যেতে বলেন। আমি সরে দাঁড়াই।
অন্যদিকে রুহুল আমীন বলেন, ওনার (পাটোয়ারী) সঙ্গের লোকেরা হট্টগোল করছিল। মুসল্লিরা আমাকে প্রটেকশন (নিরাপত্তা) দিয়ে রাখেন। আমি বয়ান শুরু করি। এর মধ্যে তিনি (পাটোয়ারী) আমাকে বলেন, আপনি নামেন।
যদিও আবু সালেহ পাটোয়ারী জানান, খতিবের নিরাপত্তা এবং উদ্ভুত পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রহুল আমীনকে চলে যাওয়ার কথা বলেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি আর ‘নিরাপদ’ মনে না হওয়ায় স্থান ত্যাগ করেন মোহাম্মদ রুহুল আমীন। তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও ততক্ষণে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষে।
আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, মসজিদের প্রবেশদ্বারগুলোতে তার (আমীন) লোক দাঁড়িয়েছিল। তারা সাধারণ মুসল্লিদের মারধোর করেছে। তবে রুহুল আমীনের পাল্টা অভিযোগ, হট্টগোল করেছে পাটোয়ারীর সঙ্গে থাকা লোকেরা।
গণমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, জুতা রাখার বাক্স, জুতা ছুড়ে মারছেন মুসল্লিরা। মসজিদের দরজা-জানালাও ভাঙচুর করা হয়। ভিডিওতে মুসল্লিদের একাংশকে আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যায়। মাইকে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার আহ্বানও জানানো হচ্ছিল। পরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অবস্থান নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। দুই খতিবই এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সুষ্ঠু সমাধান চাইবেন বলে জানিয়েছেন। ঘটনার শুরুতে খতিবের রুমে যারা গিয়েছিলেন তারা নিজেদেরকে ‘মুসল্লি কমিটি’ বলে পরিচয় দেন।
খতিব রহুল আমীনের অভিযোগ, তাদের একটি রাজনৈতিক পরিচয় আছে। পাটোয়ারী বলছেন, তারা মসজিদের সাধারণ মুসল্লি।
পাটোয়ারী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালকও বটে। তিনি বলেন, সাধারণ মুসল্লিরা মিলে একটি কমিটির মতো গঠন করেছেন। যেটি মুসল্লি কমিটি হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে রদবদল দেখা গেছে। কোথাও সরকারের নির্দেশে বদলি বা অবসরে পাঠানো হয়েছে। কোথাও ‘ফ্যাসিবাদের দোসর বা সুবিধাভোগী’ হিসেবে উল্লেখ করে বিক্ষোভকারীদের চাপের মুখে কেউ কেউ দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা