বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|Sunday, December 22, 2024
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » Uncategorized » ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সম্পর্কে মহানবী (সা.) যা বলেছেন

ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সম্পর্কে মহানবী (সা.) যা বলেছেন 

1
ফরজ নামাজের আগে ও পরে সুন্নত নামাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব ও ফজিলতপূর্ণ সুন্নত হলো ফজরের দুই রাকাত সুন্নত। হাদিস শরিফে এই সুন্নতের প্রভূত ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭২৫)

তা ছাড়া এই সুন্নতের প্রতি ইসলামের বিশেষ নির্দেশনা আছে।

এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা এই দুই রাকাত নামাজ কখনো ত্যাগ কোরো না, এমনকি শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করলেও।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৫৮)তবে কখনো যদি ফজরের জামাত দাঁড়িয়ে যায় আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সুন্নত মসজিদের বাইরে পড়ে নেওয়া উত্তম। তবে কেউ যদি মসজিদের ভেতরে নামাজের কাতার থেকে দূরে এক কোণে বা খুঁটির আড়ালে পড়ে সেটাও জায়েজ। কিন্তু জামাতের কাতারে বা তার কাছে পড়া মাকরুহে তাহরিমি।

এ পর্যায়ে ফজরের জামাত শুরু হওয়ার পর সুন্নত আদায় করে ইমামের সঙ্গে শরিক হওয়া প্রসঙ্গে বিশিষ্ট কয়েকজন সাহাবি, তাবেঈর আমল ও ফতোয়া উল্লেখ করা হলো।সাহাবায়ে কিরামের আমল

সাহাবি আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, কুফার গভর্নর সায়িদ ইবনে আস তাঁকে এবং হুজায়ফা ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এই তিনজনকে বিশেষ একটি কাজে ফজরের নামাজের আগে ডাকলেন। তাঁরা  কাজ শেষে তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিলেন। এরই মধ্যে মসজিদে ফজরের নামাজের ইকামত শুরু হয়ে গেছে।

ইবনে মাসউদ (রা.) মসজিদের একটি খুঁটির আড়ালে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত পড়লেন। তারপর জামাতে শরিক হলেন। (শরহু মাআনিল আসার : ১/৬১৯)একই ধরনের আমল ছিল বিখ্যাত সাহাবি ইবনে উমর (রা.)-এর। একবার তিনি মসজিদে এসে দেখেন, ফজরের জামাত চলছে। কিন্তু তাঁর ফজরের দুই রাকাত সুন্নত পড়া হয়নি।

তিনি হাফসা (রা.)-এর কামরায় তা পড়লেন। তারপর জামাতে শরিক হলেন। (প্রাগুক্ত  ১/৬২০-৬২১)তাবেঈনদের আমল ও ফতোয়া

বিখ্যাত তাবেঈ ইমাম শাবি থেকে বর্ণিত, একদা মাসরুক (রহ.) ফজরের জামাত চলাকালে মসজিদে প্রবেশ করলেন। কিন্তু তাঁর ফজরের দুই রাকাত সুন্নত পড়া হয়নি। তিনি মসজিদের এক কোনায় তা পড়ে নিলেন। তারপর জামাতে শরিক হলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৬৪৭২)

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, যদি কখনো মসজিদে গিয়ে দেখো যে ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেছে, কিন্তু তোমার সুন্নত পড়া হয়নি, তাহলে তা পড়ে নেবে জামাতের এক রাকাত ছুটে যাবে বলে মনে হলেও। (প্রাগুক্ত, বর্ণনা : ৬৪৭৯)

ফিকহবিদদের ফতোয়া

ফিকহের কিতাবগুলোতেও মাসআলাটি এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। বিখ্যাত ফকিহ আবুল ওফা আলী বিন আকিল (রহ.) বলেন, ‘যদি জামাতের জায়গা থেকে পৃথক কোনো জায়গা থাকে এবং সুন্নত পড়ে ফরজের (অন্তত) এক রাকাত পাওয়া যাবে বলে মনে হয়, তাহলে সুন্নত পড়ে জামাতে শরিক হবে। কিন্তু যদি পৃথক কোনো জায়গা না থাকে কিংবা ফরজের এক রাকাতও পাওয়ার আশা নেই, তাহলে জামাতে শরিক হয়ে যাবে।’ (কিফায়াতুল মুফতি : ৪/৫৫১)

আল্লামা শাব্বির আহমদ উসমানি (রহ.) লিখেছেন, ‘আমাদের আলেমরা ফজরের সুন্নতের ফজিলত ও জামাতের ফজিলতের মধ্যে সমন্বয় করেছেন। ইমামের সঙ্গে এক রাকাত পাওয়া দ্বারা জামাতের ফজিলত অর্জিত হয়ে যায়। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে এক রাকাত নামাজ পেল সে পুরো নামাজই (ইমামের সঙ্গে) পেল। আর যেখানে উভয় ফজিলতের মধ্যে সমন্বয় সম্ভব নয়, সেখানে তারা এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তথা জামাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কারণ জামাত পরিত্যাগকারীর ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। আর ফজরের সুন্নত যদিও গুরুত্বপূর্ণ, ওয়াজিবের কাছাকাছি এবং সব সুন্নত-নফলের ওপরে; কিন্তু তা পরিত্যাগকারীর ব্যাপারে জামাত পরিত্যাগকারীর মতো সতর্কবাণী আসেনি। (ফাতহুল মুলহিম : ৪/৯১)

তবে দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত না পড়ে জামাতে শরিক হয়ে সূর্যোদয়ের পর সুন্নত পড়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু সূর্যোদয়ের আগে যেকোনো নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) পড়তে পারে না, সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর পড়ে নেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪২৩)

মহান আল্লাহ আমাদের ফজরের সুন্নতের প্রতি যথাযথ যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone